Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

স্বপ্ন নিয়েই এগোচ্ছেন এঁরা, বাংলা ইন্ডাস্ট্রির কি পালাবদল!

একঝাঁক নতুন পরিচালক। বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে কতটা পরিবর্তন দেখতে ও দেখাতে চান তাঁরা?একঝাঁক নতুন পরিচালক। বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে কতটা পরিবর্তন দেখতে ও দেখাতে চান তাঁরা?

অন্তরা মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

সিনেমাকে ভালবেসে এঁরা এসেছিলেন সিনেমা বানাতে। একটা রুদ্ধ দরজায় নতুন ভাবনা দিয়ে ধাক্কা মারাটাই যাঁদের উদ্দেশ্য। এঁদের কারও ঝুলিতে রয়েছে অ্যাডভেঞ্চারার, ইতিহাস-বিশারদ সোনাদা, কারও হেঁশেলে রেনবো জেলির মতো ম্যাজিক রাঁধতে পারা ঘোঁতন, আবার কারও বক্স অফিসে জিতে ঘরে ফেরা ‘মুখার্জিদার বউ’। বদলের স্বপ্ন নিয়েই যে তাঁরা এগোচ্ছেন, সেটা তাঁদের কাজই বলে দিচ্ছে। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির কোন দিকটা বদলাতে চান তাঁরা?

হলে ফিরুক বাঙালি

ধ্রুব

গত বছর ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ আর এ বছর ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’ দিয়ে পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় ইয়ং অ্যাডাল্টদের মনে তো বটেই, বড়দের ভালবাসাও আদায় করে নিয়েছেন। সিনেমা বানানোর আগে ধ্রুব বহু বছর পুণেতে এক বিজ্ঞাপন সংস্থার মাথা হিসেবে প্রচুর কাজ করেছেন। তাঁর ছবি দু’টির হাত ধরে বাংলায় অন্তত একটা অরিজিনাল ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি সফল ভাবে এগোচ্ছে। এটা কি একটা পরিবর্তন? ধ্রুবর কথায়, ‘‘বাঙালি আগে হলে সিনেমা দেখতে যেত একটা হোলসাম কোয়ালিটির জন্য। সেখানে হলে গিয়ে ছবি দেখার চলটাই বন্ধ হতে বসেছে। সিনেমা হল বন্ধ, ছবির বাজেটে কাটছাঁট, ছবির সংখ্যা কমে যাচ্ছে... সোনাদা ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি কিন্তু ৮-৮০ সকলেই দেখছেন, ভালবাসছেন।’’ ধ্রুব জানালেন, সে ভাবে কিছু বদলানোর কথা তিনি ভাবেন না। বরং বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে আরও বেশি করে ‘কন্ট্রিবিউট’ করতে চান। নিজের শিকড়কে, বাঙালিয়ানাকে বরাবর উঁচু পেডেস্টালে রাখেন তিনি। সোনাদার গল্পগুলোকেও সে ভাবেই লিখেছেন। যেখানে গুরুত্ব পেয়েছে বাঙালির হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস বা পুরনো ঐতিহ্য।

লেখকদের জায়গা হোক

পাভেল

পরিচালকের নিজের ভিশন থেকে গল্প লেখাটা যে এই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি, সেটা জোর দিয়ে বলছেন ‘রসগোল্লা’র পরিচালক পাভেল। ‘‘ইন্ডাস্ট্রিতে লেখকদের একটা জায়গা হওয়া উচিত। কারণ পুরো বিষয়টা রিসার্চ করে লেখা, চরিত্রদের গঠন, রেলিভেন্স এগুলো লেখকের ভাবনা থেকেই আসে।’’ পাভেল নিজের ছবির জন্য তো বটেই, অন্যদের জন্যও গল্প-চিত্রনাট্য লেখেন। ‘সোনার পাহাড়’, ‘বাচ্চা শ্বশুর’, হিন্দি ছবি ‘বালা’র গল্প তাঁর লেখা। প্রথম ছবি ‘বাবার নাম গান্ধীজি’র গল্পও বহু দর্শকের ভাল লেগেছে। নবীনচন্দ্র দাসের রসগোল্লা আবিষ্কার নিয়ে তাঁর ‘রসগোল্লা’ রিসার্চের জন্য প্রশংসিত। এই রিসার্চ প্রসঙ্গেই পাভেল বললেন, ‘‘আলাদা করে প্রি-প্রোডাকশনের জন্য প্রযোজকেরা খরচ করতে চান না। ফলে সব ডিপার্টমেন্টের শিল্পীরাও উৎসাহী হন না। আমি কিন্তু ‘রসগোল্লা’ তিন বছর ধরে বানিয়েছি শুধু একটা কারণেই। যাতে এই প্র্যাকটিসটা আসে। এই বদলটা আসা দরকার।’’

গল্প শোনার ধৈর্য বাড়ুক

সৌকর্য

জটিল এবং নিটোল গল্প— দু’রকম ছবি দিয়েই ইন্ডাস্ট্রিতে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন সৌকর্য ঘোষাল। প্রথম ছবি ‘পেন্ডুলাম’ বৃহত্তর দর্শকের কাছে না পৌঁছলেও, তাঁর ‘রেনবো জেলি’ পছন্দ করেছেন সব বয়সের দর্শক। কোয়েল মল্লিকের সঙ্গে ‘রক্ত রহস্য’ করছেন। সৌকর্য অবশ্য কেরিয়ার শুরু করেছিলেন গ্রাফিক ডিজ়াইন এবং ইলাস্ট্রেশন দিয়ে। তখনই তাঁর মনে হয়, সিনেমার মাধ্যমে একটা স্থির ছবিতে সাউন্ড এবং মোশনের মতো বিভিন্ন মাত্রা যোগ করা যায়। তিনি চান, একটা বড় গল্প পর্দায় দেখার ধৈর্য বাড়ুক দর্শকের। ‘‘মুম্বইয়ে জ়োয়া আখতার ‘গাল্লি বয়’ বানিয়ে দর্শককে বসিয়ে রাখতে পারেন। এখানে সেটা চলবে না। এখানে ট্রেলার এবং ওয়ান লাইনার কনসেপ্ট বেশি চলে। ফলে আর একটা সমস্যা হয়, হলে গিয়ে দর্শক ঠকে যান!’’ নতুন হিসেবে আর একটি মেন্টাল ব্লকের সামনেও পড়েছেন তিনি, ‘‘বয়স কম বলে অনেকে ভাবেন, ফ্লুকে সফল হয়েছি। কিন্তু আমি এ রকম ভাবেই ভাবি!’’

মানসিকতা পাল্টাক

সায়ন্তন

ক্লাস টেনে পড়ার সময় থেকে শর্ট ফিল্ম বানাচ্ছেন সায়ন্তন ঘোষাল। ওয়েব বা বড় পর্দায় ব্যোমকেশ তো বটেই, টেনিদাকেও সিনেমায় নিয়ে আসতে চলেছেন তিনি। সায়ন্তন বলছিলেন, ‘‘এখানে প্রযোজকদের একটা বড় অংশের মধ্যে ধারণা রয়েছে, এই ফর্মুলা চলবে, ওটা চলবে না! কিসের উপরে নির্ভর করে এই ধারণা তার সদুত্তর নেই! মুম্বইয়ে ‘রাজ়ি’র মতো ছবি সফল হলে তখন তাঁরা মনে করেন, তা হলে এটা চলতে পারে। অর্থাৎ যেটা যখন ট্রেন্ড, সেটা ফলো করাই উদ্দেশ্য। এই মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন।’’ তরুণ পরিচালকের মতে, ‘যকের ধন’ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবি হিসেবে একটা ট্রেন্ডের জন্ম দিয়েছে, যেখান থেকে ‘সাগরদ্বীপে যকের ধন’-এর মতো মৌলিক গল্প নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি শুরু করতে পেরেছেন।

লিঙ্গ বৈষম্য চাই না

পৃথা

ছবি সম্পাদনা দিয়ে শুরু করলেও সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের ছাত্রী পৃথা চক্রবর্তী প্রথম ছবিতেই ছক্কা হাঁকিয়েছেন। তিনি কিন্তু একটা অন্য দিক তুলে ধরলেন। ইন্ডাস্ট্রিতে মহিলা পরিচালক মাত্র কয়েক জনই। লিঙ্গ বৈষম্য যে এই কম সংখ্যক পরিচালকদের জায়গায় কতটা আঘাত করে, সেটাই বলছিলেন পৃথা, ‘‘এক জন মহিলা কিছু বলছেন, এই জিনিসটা মেনে নিতে খুব অসুবিধে হয় কিছু মানুষের। ‘মুখার্জিদার বউ’-এর সেটে যেহেতু আর এক জন মহিলা ছিলেন (নন্দিতা রায়), তাই অসুবিধে হয়নি। কিন্তু আমি বিজ্ঞাপন, শর্ট ফিল্মের কাজে এই জেন্ডার অরবিটের সমস্যাটা দেখেছি। একে তো নতুন হিসেবে এক্সট্রা এফর্ট দিতে হয়। তার উপরে যদি এ রকম অসুবিধে হয়, সেটা কাজেরই ক্ষতি!’’ আর একটি প্রসঙ্গ জুড়ে দিলেন পরিচালক। বললেন, ‘‘ক্রিটিক্যাল ছবি যতটা মর্যাদা পায়, একটা সহজ-সরল ছবি সেটা পায় না। ভিন্নধারার ছবির মতো নিটোল গল্প দেখতেও ভালবাসেন দর্শক।’’

নতুন ব্রিগেড বাংলা ছবির মানচিত্রে কতটা বদল আনতে পারে, সময়ই তা বলবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE