আশ্রম ওয়েব সিরিজ়ে (বাঁ দিকে) ববি দেওল ও ত্রিধা চৌধুরী (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: কলকাতায় এসে কেমন লাগছে?
ত্রিধা: ভালই লাগছে। কারণ, অনেকেই হয়তো ভাবেন আমি আর কলকাতায় কাজ করব না। কিন্তু বাংলা ওয়েব সিরিজ়ের জন্য শহরে ফিরে সত্যিই ভাল লাগছে।
প্রশ্ন: সম্প্রতি মুম্বইয়ে মেটার অনুষ্ঠানে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ফুটবল তারকা ডেভিড বেকহ্যামের সঙ্গে আপনার দেখা হয়। অভিজ্ঞতা কেমন?
ত্রিধা: অসাধারণ। ডেভিডের টিম থেকে আমাকে নির্বাচন করা হয়। আমি ফ্যাশন নিয়ে যে এতটা সচেতন, সেটা হয়তো ওদের পছন্দ হয়েছিল। আমরা ফ্যাশন নিয়েই কথা বলেছিলাম। সময়ের অভাবে আমাদের খুব বেশি কথা হয়নি।
প্রশ্ন: ওঁর থেকে কী শিখলেন?
ত্রিধা: এত বড় মাপের তারকা, অথচ মাটিতে পা রেখে চলেন। কোনও রকম তারকাসুলভ আচরণ নেই। যতটা সময় ছিলেন, তার পুরোটাই হাসিমুখে উপভোগ করলেন।
প্রশ্ন: মুম্বইয়ে ‘আশ্রম’ ওয়েব সিরিজ়ের পর আপনার কাজের ব্যস্ততা নাকি খুব বেড়েছে?
ত্রিধা: হ্যাঁ। অনেকগুলো হিন্দি কাজ শেষ করলাম। আগামী বছর সেগুলো একে একে মুক্তি পাবে। ব্যস্ত থাকার মানে কিন্তু এটাও নয় যে, যা আসছে তাতেই অভিনয় করতে রাজি হয়ে যাচ্ছি। কাজে ব্যস্ত রয়েছি বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। তা ছাড়া জীবনে ব্যস্ত থাকাটা খুব জরুরি। না হলে মাথার মধ্যে উল্টোপাল্টা জিনিস ঘুরতে থাকে (হাসি)।
প্রশ্ন: পাঁচ বছর আগে মুক্তি পেয়েছিল আপনার প্রথম বাংলা ওয়েব সিরিজ় ‘সেই যে হলুদ পাখি’। তার পর ‘সিন’ করতে রাজি হলেন কেন?
ত্রিধা: বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে অভিনেত্রী হিসাবে কাজ নির্বাচনের স্বাধীনতা পাই বলে আমি ভাগ্যবান। অরুণাভ (সিরিজ়ের পরিচালক অরুণাভ খাসনবিশ) গল্পটা শোনাতেই পছন্দ হয়ে যায়। তার পর চিত্রনাট্য পড়ে আরও ভাল লাগল। রাজি না হয়ে পারলাম না।
প্রশ্ন: এই সিরিজ়ে তো আপনি সাংবাদিকের চরিত্রে। সুযোগ পেলে বিনোদন জগতের কোন কোন ক্ষেত্র নিয়ে সত্য প্রকাশ্যে আনতে চাইবেন?
ত্রিধা: (একটু ভেবে) বিনোদন জগৎটা শুধুই মুখরোচক খবরের জন্য নয়। আমার মনে হয় তার মধ্যে মানুষের শিক্ষা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির অনেক জায়গাও রয়েছে। সেগুলোকে আরও প্রকাশ্যে আনতে পারলে খুশি হব।
প্রশ্ন: আপনাকে নিয়ে মাঝে মধ্যেই যে গুজব ছড়ায় সেগুলো সামলান কী ভাবে?
ত্রিধা: (হেসে) যে দু’জন সম্পর্কে রয়েছেন, তাঁদের কাছে বিষয়টা কিন্তু খুব সহজ। মুশকিল হয় কাছের মানুষদের সামলানো। যেমন আমার বিয়ের খবর ছড়িয়ে পড়তেই আমার দিদা অবাক হয়ে আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি তখন বললাম, ‘‘দিদুন, আমি যদি এখন বিয়ে করি, তা হলে সেই খবরটা তুমি জানবে না সেটা তো হতেই পারে না।’’ তার পর উনি আশ্বস্ত হলেন।
প্রশ্ন: ‘অ্যানিম্যাল’ দেখলেন?
ত্রিধা: এখনও সময় পাইনি। প্রিমিয়ারে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়নি।
প্রশ্ন: ববি দেওলের সঙ্গে ‘আশ্রম’ ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করেছিলেন। ছবি মুক্তির আগে ওঁর সঙ্গে কোনও কথা হয়নি?
ত্রিধা: অবশ্যই। আমি ওঁকে শুভেচ্ছাও জানিয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি আমাদের দেখা হওয়ার কথা।
প্রশ্ন: মুম্বইয়ে নতুনদের জন্য নিজের জায়গা ধরে রাখতে কী পরামর্শ দেবেন?
ত্রিধা: (একটু ভেবে) পরামর্শ নয়, নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলতে চাই। আমার পরিবারের সমর্থন ছিল। অনেকের থাকে না। তাই পকেট বুঝে খরচ করতে হবে। প্রয়োজনে কারও সঙ্গে একই বাড়িতে ঘর ভাগ করে থাকা যায়। লোক দেখানোর জন্য চোখধাঁধানো জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হলেই বিপদ! বরং সাহায্যের প্রয়োজন হলে সেটা চাওয়া উচিত। ওখানে অনেকেই মন খুলে কথা বলে না। নিজের সমস্যা নিয়ে খোলা মনে কথা বলার মধ্যে কোনও লজ্জা নেই। শুরুতে কেউ ব্যর্থ হতেই পারেন। কিন্তু গভীর জলে তলিয়ে যাচ্ছি, এ দিকে বলছি আমি ভাল আছি— এটা ঠিক নয়।
প্রশ্ন: বাংলায় আপনাকে এত কম দেখা যাচ্ছে কেন?
ত্রিধা: দুঃখের বিষয়, সবাই কাজের সংখ্যাটাই দেখেন। আমাকে কিন্তু অনেক চিত্রনাট্যকে না বলতেও হয়। তা না হলে তো আমি সব প্রজেক্টেই অভিনয় করব! সেটা অভিনেতার ক্ষতি করে। দর্শককেও তো একটা সময় দিতে হবে। তাই খুব বুঝেশুনে একটা কাজ নির্বাচন করি।
প্রশ্ন: তার মানে প্রস্তাব আসে। কিন্তু সময়ের অভাবে রাজি হতে পারেন না।
ত্রিধা: অনেকটা সে রকমই। কারণ এতগুলো হিন্দি কাজ শেষ করলাম। ডেট নিয়ে সমস্যা থাকে। এই যেমন কিছু দিন আগে একটা বাংলা সাহিত্য নির্ভর ছবির প্রস্তাব এসেছে। আমার খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু মনে হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত হয়তো করতে পারব না।
প্রশ্ন: মুম্বইয়ের ব্যস্ততার মধ্যে টলিপাড়ার খবরাখবর রাখেন?
ত্রিধা: একটু আধটু খবর পাই। ইচ্ছে হলে দেখি। বলিউডের অংশ হলেও আমি নিত্যনতুন জিনিস নিয়ে পড়াশোনা করতে পছন্দ করি। শুনলে বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, এই মুহূর্তে আমি শেয়ার বাজার নিয়ে পড়াশোনা করছি। কোনও ভাল উপন্যাস নিয়ে চর্চা হলে সেটা নিয়ে খোঁজখবর করি। বিজ্ঞানের ছাত্রী এখন অভিনেত্রী। তাই হয়তো এই জানার ইচ্ছেটা রয়ে গিয়েছে। বাকিদের মতো ‘বিগ বস্’, পার্টি বা ইন্ডাস্ট্রির গসিপ নিয়ে আমার খুব একটা উৎসাহ নেই।
প্রশ্ন: টলিপাড়ার কাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন?
ত্রিধা: পরমদা’র (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) সঙ্গে রয়েছে। ওর পরিচালিত ‘অভিযান’ ছবিতে অভিনয় করেছি। সম্প্রতি ওর সঙ্গে আরও একটা কাজ করেছি। সৃজিতদার (সৃজিত মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে সব সময় কথা হয় না। কারণ ও নিজে খুবই ব্যস্ত থাকে। তবে বাংলায় এমন এক জন মানুষ রয়েছেন যাঁর সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ না থাকলেও কিন্তু তিনি নিজেই আমার খোঁজখবর নেন। তিনি বুম্বাদা (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়)। প্রত্যেক জন্মদিনে আমাকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানান। এত বড় মাপের তারকা এবং এত ব্যস্ততার মধ্যেও যে আমার জন্য উনি এই সময়টুকু বার করেন, সেটা আমার কাছে খুব বড় প্রাপ্তি।
প্রশ্ন: আগামী বছর তো বিয়ে করছেন। কিন্তু নিজের সম্পর্ক এখনও আড়ালে রেখেছেন কেন?
ত্রিধা: আসলে যে কোনও ভাল জিনিস আমি একটু আড়ালে রাখতেই পছন্দ করি। দুঃখের সঙ্গেই বলছি, এখন মানুষ অন্যের সুখ দেখে খুশি হয় না। খুব কম মানুষই রয়েছেন যাঁরা সত্যিই খুশি হন। তাই সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে জানানোর প্রয়োজন নেই যে আমি আমার প্রেমিকের সঙ্গে খুব সুখী। যখন সময় আসবে, সবাই ঠিকই জানতে পারবেন।
প্রশ্ন: এই গোপনীয়তা নিয়ে প্রেমিকের কোনও আপত্তি নেই?
ত্রিধা: না। এই বিষয়টা নিয়ে আমাদের আগেই আলোচনা হয়েছে। এই বিষয়ে আমরা দু’জনেই এক মত।
প্রশ্ন: পাত্র কি বাঙালি না কি অবাঙালি?
ত্রিধা: অবাঙালি (হাসি)। এই নিয়ে আর কোনও প্রশ্ন নয়।
প্রশ্ন: ১০ বছর আগে ‘মিশর রহস্য’ ছবির মাধ্যমে টলিউডে পা রেখেছিলেন। এই সফরকে ফিরে দেখলে কী মনে হয়?
ত্রিধা: যা শিখেছি সেটা তো বাংলায়। মুম্বইয়ে কাজের নিয়মানুবর্তিতা রয়েছে। ময়দানে না থাকলে বেরিয়ে যেতে হবে। সেখানে বাংলায় অনেক বেশি ব্যক্তিগত সম্পর্কের নিরিখে কাজ হয়। আত্মীয়তা অনেক বেশি। বিপদে পড়লে টলিউডে এখনও মানুষ একটু হলেও একে অপরকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। বাংলায় কাজ করে আমি গর্বিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy