‘মানুষ’ ছবির একটি দৃশ্যে জিৎ। ছবি: সংগৃহীত।
‘চেঙ্গিজ়’-এর পর ‘মানুষ’। নিজের আদর্শে অটুট জিৎ। আঞ্চলিক গণ্ডি পেরিয়ে তাঁর ছবিকে নিয়ে গিয়েছেন সর্বভারতীয় স্তরে। বিশ্বাস করেন, বাণিজ্যিক ছবি ছাড়া ইন্ডাস্ট্রির উন্নতি সম্ভব নয়। কিন্তু কোথাও যেন টলিউড নিয়ে একটু অনুযোগও প্রকাশ পেল।
প্রশ্ন: দ্বিতীয় বার বাবা হওয়ার জন্য প্রথমেই আপনাকে শুভেচ্ছা।
জিৎ: (হেসে) ধন্যবাদ।
প্রশ্ন: বাড়িতে নিশ্চয়ই এখন পরিবেশটা অন্য রকম?
জিৎ: অবশ্যই। প্রত্যেকেই খুশি। ছেলে আমাদের সবাইকে ব্যস্ত রাখছে।
প্রশ্ন: ছেলেকে ছেড়ে সারা দিন ছবির প্রচার। মনখারাপ করছে না?
জিৎ: সকালে বাচ্চাদের সঙ্গে অনেকটাই সময় কাটিয়েছি। আর কাজ তো করতেই হবে। সেটাও জীবনের অংশ। দু’দিক ব্যালান্স করে চলতে হয়।
প্রশ্ন: কাজের চাপে সন্তানদের সময় দিতে পারেন?
জিৎ: চেষ্টা তো করি। কলকাতায় ওদের নিয়ে খুব বেশি বাইরে বেরোনোর সুযোগ পাই না। আর ছেলের সদ্য এক মাস পূর্ণ হল। খুবই ছোট। এখনই খুব বেশি বাইরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
প্রশ্ন: নতুন ছবির ট্রেলার দেখে মনে হচ্ছে আপনি আবার স্বমহিমায়। তবে আপনি আগেও একাধিক বার পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। অর্জুন চরিত্রটা তাদের থেকে কতটা আলাদা?
জিৎ: প্রত্যেক অভিনেতাই চান যাতে তাঁর প্রতিটা ছবি একে অন্যের থেকে আলাদা হয়। তাই তুলনা করাটা কঠিন। গল্পে অনেকগুলো চমক রয়েছে। অ্যাকশন রয়েছে। বাবা এবং সন্তানের একটা সম্পর্ক রয়েছে। সব মিলিয়ে ছবিটা দর্শকদের শেষ পর্যন্ত প্রেক্ষাগৃহে বসে থাকতে বাধ্য করবে বলেই আমার বিশ্বাস।
প্রশ্ন: ‘টাইগার ৩’ দেখলেন?
জিৎ: এখনও সময় পাইনি। ‘মানুষ’ মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত মনে হচ্ছে না সময় বার করতে পারব।
প্রশ্ন: আপনি মুক্তির প্রথম দিনে ‘পাঠান’ দেখেছিলেন। শাহরুখের তুলনায় সলমন একটু ব্রাত্য হয়ে গেলেন যে!
জিৎ: (হাসতে হাসতে) আরে, তখন তো আমার নিজের ছবির মুক্তি ছিল না। এমনিতে আমি সব সময়েই চেষ্টা করি, বলিউডের বড় ছবিগুলো যত দ্রুত সম্ভব দেখে নিতে। তার উপর মোহনা (জিতের স্ত্রী) এখন ছেলেকে নিয়ে ব্যস্ত। তাই একটু অপেক্ষা করতে হবে।
প্রশ্ন: ‘জওয়ান’ বা ‘টাইগার’-এর মতো মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবি টলিউডে তৈরি হচ্ছে না কেন?
জিৎ: এটা খুবই দুঃখের বিষয়। একটা সময়ে সকলেই এই ধরনের ছবি করেছেন। গ্রামবাংলায় টিভিতে রেটিং ভাল আসত। আর এখন কেউ এই ধরনের ছবি নিয়ে উদ্যোগ নিলেও নির্মাতা বা অভিনেতারা তাঁর পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। সারা বিশ্বে যে কোনও ইন্ডাস্ট্রিতে বাণিজ্যিক ছবির দর্শক সব থেকে বেশি। এখানে সেটা কেউ বুঝতেই পারছেন না।
প্রশ্ন: চিত্রনাট্য কি বড় সমস্যা?
জিৎ: অবশ্যই। চিত্রনাট্যকারদের তো এগিয়ে আসতেই হবে। সেটাই তো একটা ছবির প্রাণভোমরা। বাংলায় ভাল ভাল চিত্রনাট্যকার রয়েছেন।
প্রশ্ন: আপনার কাছে কেউ প্রস্তাব নিয়ে এলে আপনি কি তাঁকে সুযোগ দেবেন?
জিৎ: কেন নয়! সঞ্জয়ের (‘মানুষ’-এর পরিচালক সঞ্জয় সমাদ্দার) গল্পটা ভাল লেগেছিল বলেই তো ওকে বাংলাদেশ থেকে এখানে উড়িয়ে এনেছিলাম।
প্রশ্ন: বিগত কয়েক বছরে দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি এবং বলিউড প্রমাণ করে দিয়েছে বাণিজ্যিক ছবি ছাড়া ইন্ডাস্ট্রি এগোতে পারবে না। আপনি সব সময়েই বাংলায় এই মতে বিশ্বাসী ছিলেন...।
জিৎ: আমি যা করি সেটা নিয়ে খুবই কমফর্টেব্ল। লার্জার দ্যান লাইফ বিষয় বা ‘মশালা’ গোত্রের কনটেন্ট নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি।
প্রশ্ন: বাকিরা অন্য ধারার ছবির মাধ্যমে বক্স অফিস জয় করতে চাইছেন। টলিউডে আপনার এই ‘বিশ্বাস’ নিয়ে চলতে গিয়ে নিজেকে কখনও একা মনে হয়েছে?
জিৎ: (কিছু ক্ষণ চুপ থেকে) পৃথিবীর সবথেকে বড় সত্যি হল, মানুষ একা আসে এবং একাই তাকে চলে যেতে হয়। ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ...’ গানটাও আমরা শুনেছি। তাই কিছু আসে-যায় না। মানুষের মনের মধ্যে যদি শূন্যতা বিরাজ করে, তা হলে সে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়েও একাকিত্ব অনুভব করতে পারে।
প্রশ্ন: আপনার শেষ ছবি ‘চেঙ্গিজ়’-এর ফলাফল নিয়ে আপনি কি খুশি?
জিৎ: খুব ভাল। শুরুতে আমরা খুব বেশি আশা করিনি। কিন্তু জাতীয় স্তরে ছবিটা আমাদের প্রত্যাশা ছাপিয়ে গিয়েছে। বাংলায় আমার শেষ তিন-চারটে ছবি যে ব্যবসা করেছিল, ‘চেঙ্গিজ়’ তার থেকে দু’গুণ-তিন গুণ বেশি ব্যবসা করেছে। তাই ‘মানুষ’ ছবিটাও আমরা হিন্দিতে রিলিজ় করছি। পাশাপাশি ছবিটা বাংলাদেশেও মুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করছি, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারব।
প্রশ্ন: এক জন ভাল এবং সফল ‘মানুষ’ হওয়ার জন্য আপনার মতে কোন তিনটি আবশ্যিক শর্ত?
জিৎ: সহানুভূতিশীল হওয়া, অন্যের যত্ন নেওয়া, নিজের বোধশক্তিকে ঠিক রাখা। তবে ভাল মানুষ হওয়া খুব সহজ নয়। আরও অনেকগুলো বিষয়ের উপর সেটা নির্ভর করে।
প্রশ্ন: ‘চেঙ্গিজ়’-এর পর বলিউড থেকে নিশ্চয়ই আপনার কাছে প্রস্তাব আসা বেড়েছে?
জিৎ: তার আগেও কিন্তু একাধিক প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু আমার পছন্দ হয়নি বলে আমি রাজি হইনি। দেখুন, বলিউডে কাজের অপেক্ষায় না থেকে বাংলায় ছবি তৈরি করে তাকে জাতীয় স্তরে পৌঁছে দিতে পারাটা আমার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জিং।
প্রশ্ন: আপনি একের পর এক নতুন নায়িকার সঙ্গে ছবি করছেন। কোয়েল বা শুভশ্রীদের সঙ্গে আবার ছবি করার ইচ্ছে নেই?
জিৎ: (হেসে) সে রকম গল্প এলে নিশ্চয়ই করব। ইন্ডাস্ট্রিতে আমার সতীর্থদের প্রত্যেকের সঙ্গে আমার খুবই ভাল সম্পর্ক। আজ পর্যন্ত কখনও অশান্তি বা কোনও ঝামেলার কারণে কারও সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করেছি বলে মনে পড়ছে না। শুধু কোয়েল, শুভশ্রী কেন, ‘সাথী’-র প্রিয়ঙ্কা থেকে শুরু করে মিমি, নুসরত, সায়ন্তিকা, শ্রাবন্তী, রুক্মিণী প্রত্যেকের সঙ্গেই আমি আবার কাজ করতে চাই।
প্রশ্ন: প্রিয়ঙ্কা ত্রিবেদীর সঙ্গে এখনও আপনার যোগাযোগ আছে! প্রথম ছবির নায়িকাদের সঙ্গে অনেকেরই তো যোগাযোগ থাকে না।
জিৎ: ওই যে বললাম, আমি সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলি। প্রিয়ঙ্কা আমার পারিবারিক বন্ধু।
প্রশ্ন: সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কথা বললেন। এ দিকে আপনাকে ইন্ডাস্ট্রির কোনও পার্টিতে বা ছবির প্রিমিয়ারে দেখা যায় না। আপনি কি একটু একা থাকতেই পছন্দ করেন?
জিৎ: একদমই নয়। প্লিজ়, এটা লিখবেন। যাঁরা এ রকম ভাবেন, তাঁরা ভুল করেন। আমার একটা বিশাল বড় পরিবার রয়েছে। পরিবারের সকলে আমরা একসঙ্গেই থাকি, একসঙ্গেই সময় কাটাই। আমাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এই অসাধারণ সম্পর্কটা ঈশ্বরের আশীর্বাদ। আর কখনও কখনও একাকিত্ব ভালও লাগে। কারণ, জীবনে নিজের সঙ্গে সময় কাটানোটাও কখনও কখনও দরকার হয়।
প্রশ্ন: ‘বুমেরাং’-এর পর হরর কমেডি ছবি করবেন। কিন্তু ‘বস্’ সিরিজ়ের তৃতীয় ছবিটা নিয়ে কি কিছু ভাবছেন?
জিৎ: অনেক দিন ধরেই কথাবার্তা চলছে। কিন্তু এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি। যে দিন হবে, ছবির ঘোষণা করব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy