স্টেশনের পাশে এক গাছ। মহুয়া। তাকে দেখে মনে হয়েছিল, এখানে নয়, এই রূপ-যৌবন লাল পাহাড়ের দেশেই মানায়। সেই ভাবনা থেকেই কবি লিখেছিলেন এই গান।
‘হাই দ্যাখ গো/ তুই ইখানে কেনে,
ও তুই লাল পাহাড়ির দেশে যা/ রাঙামাটির দেশে যা
হেথাকে তুকে মানাইছে নাই রে/ ইক্কেবারেই মানাইছে নাই রে…’
লোকাল ট্রেন থেকে বাংলা ব্যান্ড এই সুরেই মাতোয়ারা। এই গানের পঞ্চাশ বছর পার। ‘সহজিয়া ফাউন্ডেশন’ আগামী ৮ জুলাই রবীন্দ্র সদনে সম্মান জানাবে ‘লালপাহাড়ি'র স্রষ্টাকে। ঝুমুর গায়ক সুভাষ চক্রবর্তীকেও সম্মান জানানো হবে ওই দিন। উপস্থিত থাকবেন সঙ্গীত জগতের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।
আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে ঠিক কোন ভাবনায় জারিত হয়ে কবি লিখেছিলেন এমন প্রকৃতিপ্রেমের গান— সেই প্রশ্ন নিয়েই আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল কবি অরুণ চক্রবর্তীর সঙ্গে। কবিতার জন্ম ইতিহাস বলতে গিয়ে স্মৃতির পাতায় ডুব দিলেন কবি।
‘‘সময়টা এপ্রিল মাস। শ্রীরামপুর স্টেশনের পাশ দিয়ে যাচ্ছি, নাকে এল পরিচিত গন্ধ। এই সেই গন্ধ যার আবেশ আমাকে মাতাল করে দেয়। এখানে মহুয়া? পাতাহীন গাছের অজস্র ঝুমকো মহুয়া ফুল যেন আমাকে ডাকছে। রুমালে কিছু ফুল নিয়ে রাখলাম। মনের ভিতর একটা কষ্ট হচ্ছিল। ওকে এখানে দেখে মনে হয়েছিল, বড্ড বেমানান। এই ধান, আলুর দেশে ও কেন? মহুয়া তো জঙ্গলমহলের রানি! ওকে তো সেখানেই মানায়। ওর গায়ে জড়িয়ে আছে আদিবাসী গন্ধ। ও তো লাল মাটির গাছ। তার পর আমার মনের রঙে কখন যে লিখে ফেললাম গানটা!’’
গানটি লেখা হয় ১৯৭২-এ। এরপর ১৯৭৯-তে এই কবিতা প্রচলিত সুরে ভি বালসারার ব্যবস্থাপনায় সুভাষ চক্রবর্তী রেকর্ড করেন। বাউলদের অনুরোধে অরুণ আরো দু’টো পংক্তি যোগ করেন। নতুন পংক্তি দু'টিতে সুর করেন কবি নিজেই।
অনেক পরে বাংলা ব্যান্ড ‘ভূমি’ এই গানটি রেকর্ড করে। ব্যাপক জনপ্রিয়তাও পায়। গীতিকারের নাম উল্লেখ না করায় শুরু হয় বিতর্ক। সেই পুরনো দিনের কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ সৌমিত্র রায়।
‘‘এক অনুষ্ঠানে বাসুদেব বাউল গাইছিলেন ‘লাল পাহাড়ির দেশে যা’। আমরা ‘ভূমি’-র সবাই ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। গানটা এত ভাল লেগেছিল, রেকর্ড করে নিই। এর পর কোচবিহার যাচ্ছিলাম অনুষ্ঠান করতে, ট্রেনে একজন বাউল উঠলেন। উনিও সে দিন 'লাল পাহাড়ি' গাইছিলেন, সঙ্গে ছিল ‘ও নাগর’। সে দিনই আমরা ঠিক করি, গানটা রেকর্ড করব।’’
গান নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে সৌমিত্রর সাফ জবাব, ‘‘গীতিকারের নাম জানতাম না। তাই উল্লেখ করিনি। ভুল করেছিলাম। পরে অরুণদার কাছে ক্ষমাও চেয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy