এ বারের উৎসব সর্বাথেই সত্যজিৎময়! শুরুতেই গুপি বাঘার সাজে মঞ্চে হাজির হয়ে অনুষ্ঠানের সুর বেঁধে দিলেন সাহেব চট্টোপাধ্যায় ও বিশ্বনাথ বসু। থালি গার্ল সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় মোমবাতির আলো তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। শুভ সূচনা হল ২৭তম চলচ্চিত্র উৎসবের।
২৭তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন হল সোমবার।
বিকেল ৩.৩০। ২৭তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনের দিনেও নজরুল মঞ্চ কি কিছুটা নিষ্প্রভ? এত আয়োজন, আলোর রোশনাই। কিন্তু চেয়ার এত ফাঁকা পড়ে কেন! তবে মহামারির ভয় কি এখনও কাটেনি! দুধসাদা ব্লেজারে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার মতো গোটা মঞ্চ জুড়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান রাজ চক্রবর্তী।
খানিক বাদেই হাজির দুই সঞ্চালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও জুন মালিয়া। ঘড়ির কাঁটা গড়াতে জৌলুস কিছুটা বাড়ল বটে ! কিন্তু তবু যেন জমছিল না! তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চে প্রবেশ। মুহূর্তে বদলে গেল আবহ! ভরে উঠল নজরুল মঞ্চ। আলোর ঝলকানিতে চিকচিক করে উঠল চারপাশ! পুনরায় নিশ্চিত হওয়া গেল কলকাতা আছে কলকাতাতেই! তার সিনেমা প্রেমে এতটুকু ভাটা পড়েনি!
এ বারের উৎসব সর্বাথেই সত্যজিৎময়! শুরুতেই গুপি বাঘার সাজে মঞ্চে হাজির হয়ে অনুষ্ঠানের সুর বেঁধে দিলেন সাহেব চট্টোপাধ্যায় ও বিশ্বনাথ বসু। একে একে নৃত্য শৈলী নিয়ে হাজির হলেন শুভশ্রী, দিতিপ্রিয়া, কৌশানীরা। মহামারি কাটিয়ে চলচ্চিত্র উৎসব বলে কথা! নায়িকাদের সাজে এতটুকু খামতি নেই! মঞ্চ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল রূপ-লাস্যের বন্যা!
একে একে মঞ্চ আলো করে উপস্থিত তারকারা। এ বারের থালি গার্ল সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় মোমবাতির আলো তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। মমতার ছোঁয়ানো আগুনে শুভ সূচনা হল ২৭তম চলচ্চিত্র উৎসবের। গৌতম ঘোষ স্বল্প কথায় মনে করিয়ে দিলেন চলচ্চিত্র উৎসবের শুরুর দিনগুলির কথা। এ বছরের মতো সে দিনও উৎসব ছিল সত্যজিৎময়। প্রিয় ‘মানিকদা’ বলেছিলেন, ‘‘শহরের হাজারও সমস্যা আছে, খামতি আছে। কিন্তু উৎসাহে এতটুকু খামতি নেই!’’ এ দিনের আয়োজন দেখে পরিচালকের মনে ভিড় করেছে ফেলে আসা সময়ের স্মৃতি। সত্যজিৎ-পুত্র সন্দীপ রায়ের গলায় কৃতজ্ঞতার সুর— ‘‘আপনারা যে ভাবে আমার বাবাকে মাথায় করে রেখেছেন, তাতে আমি ও রায় পরিবার আপ্লুত।’’
এ বারের চলচ্চিত্র উৎসব স্মরণ করছে সদ্য প্রয়াত শিল্পীদেরও। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় বারবার উঠে এল তাঁদের স্মৃতিচারণ— ‘‘গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় দেখা হলেই বলতেন, মমতা একটা গান শোনাও। আমি লজ্জায় মুখ লুকোতাম! স্বয়ং গীতশ্রী কিনা আমায় বলছেন গান গাইতে! বাপ্পিদাও আমার খুব স্নেহের ছিলেন। ওঁকে আমি বেশ কিছু গান লিখে দিয়েছিলাম।’’ মমতার গলায় তার পরেই আত্মবিশ্বাসের সুর— সবাই মিলে চেষ্টা করলে আমরা এক দিন বলিউডকেও ছাপিয়ে যাব। এ বছরের ‘ফোকাল কান্ট্রি’ ফিনল্যান্ডের অতিথিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করলেন মুখমন্ত্রী। সঙ্গে সঙ্গেই শুরু এ বারের উদ্বোধনী ছবি ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’র প্রদর্শন!
তবে নিঃসন্দেহে এ বারের অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ প্রধান অতিথি শত্রুঘ্ন সিনহা! তিনি মঞ্চের সামনে পৌঁছতেই যেন গমগম করে উঠল চার পাশ। ‘খামোশ!’ সাংসদ শত্রুঘ্ন অকপটে স্বীকার করলেন, বাংলা তাঁর সিনেমার পাঠশালা। আর গৌতম ঘোষের ‘অন্তর্জলি যাত্রা’ ছিল তাঁর সিনেমার ক্লাসরুম।
দর্শকের উৎসাহই বলছিল, বাইরে যতই তাপপ্রবাহ থাকুক, উৎসব সফল করতে কলকতাবাসী বদ্ধপরিকর। একটুআধটু আফশোসও অবশ্য কানে এসেছে— ‘‘ইশ! এ বারও যদি এসআরকে থাকত!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy