Advertisement
০২ অক্টোবর ২০২৪
SSC Upper Primary Job

উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের মেধাতালিকায় পঞ্চম, তবু চাকরি চান না রাহুল!

যে মানুষটা নিজের পায়ে হাঁটাচলা করতে পারতেন, তাঁর এখন সবথেকে বড় সঙ্গী হুইলচেয়ার। তালিকায় সাধারণ বিভাগে পঞ্চম স্থানে নাম রয়েছে রাহুলের। কিন্তু তাতে কী! এই চাকরি তিনি করতে চান না।

খুদেদের সঙ্গে রাহুলদেব ঘোষ।

খুদেদের সঙ্গে রাহুলদেব ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।

অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:১৮
Share: Save:

প্রচারের আলো থেকে সদাই দূরে রাখেন নিজেকে। জীবনের চড়াই-উতরাইতে সব সময়ে পাশে পেয়েছেন স্ত্রীকে। শিক্ষকতা পেশা হলেও বর্তমানে বেশি ভালবাসেন বাচ্চাদের পড়াতেই। জীবনের অন্ধকার পরিস্থিতিতেও নিত্যদিন লড়াই করে যাচ্ছেন মুর্শিদাবাদের কান্দির রাহুলদেব ঘোষ।

সদ্য স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর তরফে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের মেধাতালিকা প্রকাশিত হয়েছে। ১৩ হাজারের বেশি প্রার্থীর নামের ওই তালিকায় সাধারণ বিভাগে পঞ্চম স্থানে নাম রয়েছে রাহুলের। কিন্তু তাতে কী! এই চাকরি তিনি করতে চান না। রাহুল বলেন, ‘‘বর্তমানে প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করছি। বড়দের থেকে বাচ্চাদের পড়াতেই বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করি।’’

নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব চিত্র।

২০১২-তে প্রথমে টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট (টেট) দেন রাহুল। ২০১৪-য় প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু। নিজে যে স্কুলে পড়াশোনা করেছেন ছোট থেকে, কান্দির সেই বিমলচন্দ্র স্কুলেই শিক্ষক হয়ে যোগ দেন। ইচ্ছে ছিল উচ্চ প্রাথমিকে পড়াবেন। সেই মতো ২০১৫-য় এসএসসি-র উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের পরীক্ষাও দেন সাধারণ বিভাগে। কিন্তু সেই পরীক্ষার মেধাতালিকায় পঞ্চমে নাম থাকলেও ২০২৪-এ সেই চাকরি করতে যে নিজেই নারাজ হবেন, তা নিশ্চয়ই ভাবেননি।

২০১৭-র ৩১ ডিসেম্বর। এক নিমেষে পাল্টে গেল রাহুলের জীবন। ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন। প্রাণে বাঁচলেন বটে, কিন্তু বিশেষ ভাবে সক্ষম হয়ে। যদিও তার কোনও নথিপত্র বার করেননি রাহুল। কাগজে কলমে এই তকমা চান না তিনি। যে মানুষটা এক দিন আগেও নিজের পায়ে হাঁটাচলা করতে পারতেন, তাঁর সবথেকে বড় সঙ্গী হয়ে গেল হুইলচেয়ার।

নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব চিত্র।

ওই বছরই ১০ ডিসেম্বর বিবাহিত জীবন শুরু করেছিলেন রাহুল। মাত্র কিছু দিনের মধ্যেই জীবনে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি। তবু সর্বদা পাশে পেয়েছেন স্ত্রীকে। পাশে ছিল নিজের স্কুল ও বন্ধুরাও। এই পরিস্থিতিতেও মানসিক ভাবে কখনও ভেঙে পড়েননি রাহুল। তাঁর কথায়, ‘‘স্বামী বিবেকানন্দই আমায় নিত্য শক্তি জোগাচ্ছেন। তাঁর দেখানো পথেই যেন এগিয়ে যেতে পারি।’’

শারীরিক অসুস্থতা গ্রাস করেছে। তবুও পেশার প্রতি দায়বদ্ধ রাহুল। যে স্কুলে নিজে পড়াশোনা করেছেন, সেই স্কুলেই রোজ হুইলচেয়ারে করে নিজেই যান। সহকর্মীরাও যথাসাধ্য সাহায্য করেন তাঁকে। এই সব কিছু নিয়েই তাই থাকতে চান রাহুল। সে কারণেই মেধাতালিকায় পঞ্চমে নাম থাকলেও নতুন করে চাকরির কোনও জটিলতা বা নতুন পরিবেশে যেতে নারাজ তিনি। তবে খুব শিগগিরই যাতে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়, তা তিনি মনে প্রাণে চান। রাহুল বলেন, ‘‘তাড়াতাড়ি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হোক, সেটাই চাই। কারণ, আমার বহু পরিচিত রয়েছেন, যাঁদের নাম তালিকায় রয়েছে। বেকারত্বের জ্বালা দূর করতে দ্রুত নিয়োগ করা গেলেই ভাল।’’

নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব চিত্র।

প্রসঙ্গত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে উচ্চপ্রাথমিকের মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। এর পরে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গত ২৮ অগস্ট স্কুল সার্ভিস কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিল, এক মাসের মধ্যে কাউন্সেলিংয়ে উচ্চ প্রাথমিকের ১৪ হাজার ৫২ জন প্রার্থীর মেধাতালিকা প্রকাশ করতে হবে। আদালতের নির্দেশকে মান্যতা দিতে হলে এসএসসিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের চার সপ্তাহের মধ্যে ১৪ হাজার ৫২ জনের কাউন্সেলিং করতে হত। কিন্তু পুজোর আগে দু’টি দিন মাত্র ৫০০ চাকরিপ্রার্থীর কাউন্সেলিং করছে এসএসসি। আর দুর্গা পুজোর পর বাকি তিন দিনে ৭০০ থেকে ৮০০ চাকরিপ্রার্থীর কাউন্সেলিং হবে। সেই কাউন্সেলিং-এ যাবেন না রাহুলদেব ঘোষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE