গুড় জল নয়!
গ্লুকোজ জল খেয়ে বেরিয়ে পড়ি। গন্তব্য ভোটের আগের দিন নলহাটি হরিপ্রসাদ হাইস্কুল!
ওই স্কুলেই ছিল এ বার ভোটগ্রহণ সরঞ্জাম বিতরণ কেন্দ্র। সকলে একসঙ্গে চেকলিস্ট মোতাবেক সরঞ্জাম দেখে নেওয়ার সময় ঘটল বিপত্তি। ইভিএম মেসিনে সমস্যা দেখা দিল!
কেই বা জানত, কপালে দুর্ভোগের সেই শুরু!
এই গরমের মধ্যে মেশিন হাতে পেতে প্রায় ঘণ্টা দু’য়েক দেরি হয়ে গেল। যে বুথে ভোটে যেতে হল, সেগুলি হল নলহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের ১৭২, ১৭৩, ১৭৪ নম্বর বুথ। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর বিছানাপত্র বা খাবার আমরা পাইনি। সেই জন্য বুথে পৌঁছেই বুঝে গেলাম এখানে নিজেদেরই খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। স্থানীয় একজনকে টাকা দিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করতে হল। বুথের ভিতর-বাইরে দেখতে গিয়ে খেয়াল হল, ১৭৩ নম্বর বুথের বাইরে যাওয়ার পথ আবার ১৭৪ নম্বর বুথের ভিতর দিয়ে। সেক্টর অফিসার বললেন, ‘‘এখানে এই ভাবেই ভোট হয়।’’ বুঝে যাই, আমাদেরও ওই ভাবেই করতে হবে।
ভোটের দিন ঘড়িতে তখন সকাল সাড়ে ছটা। ভোট শুরু হওয়ার আগেই তৈরি হতে হবে। তাই আগেই আমরা উঠে পড়লাম। বাইরে ভোটারদের লাইনও পড়ে গেল। শুরু হল ভোট। কিন্তু তাল কাটল ঠিক ভোট শুরু ঘণ্টা চারেক পর!
বয়স্ক মাকে নিয়ে বুথে ভোট দিতে ঢুকলেন ছেলে। ভোটার স্লিপ নিয়ে প্রথম পোলিং অফিসার সিরিয়াল নম্বর নির্বাচক তালিকায় মেলাতে গিয়ে লক্ষ্য করেন, ওই নম্বরে আগেই ভোট পড়ে গিয়েছ।
ছেলেটি প্রথমে টেবিল চাপড়ে উঁচু গলায় বললেন, ‘‘আমার মা ভোট দেবে। কীভাবে দেবে জানি না ব্যবস্থা করুন। আপনারা বাধ্য।’’
পরিস্থিতি বুঝে, প্রিসাইডিং অফিসার হিসাবে আমি কথা বললাম। ওই মহিলার হাতের আঙুল পরীক্ষা করে দেখলাম আঙুলে কালি লাগানো রয়েছে কিনা।
তাতে ছেলেটি আরও ক্ষেপে গিয়ে বলল, ‘‘আমার মা কি মিথ্যা কথা বলছে?’’
পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে মাথা ঠাণ্ডা করি। এ সময় তর্ক করার নয়। মাসিমার কাছে জানতে চাই, তাঁর ভোটার কার্ডটি সঙ্গে রয়ে কিনা। পরে পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে তাঁর পরিচয় নিয়ে নিশ্চিন্ত হই। এবং টেন্ডার ভোটের জন্য ব্যালট পেপার দিই।
কিন্তু মাসিমা কিছু না বললেও, তাঁর ছেলে বললেন, ‘‘মা মেশিনেই ভোট দেবে!’’
আমি বললাম, ‘‘তা আর হয় না।’’
উত্তরে ছেলেটি জানালেন, ‘‘তাহলে ব্যালট পেপারটা আমাকে দিন, মায়ের পরিবর্তে আমি ভোট দিয়ে দেব।’’
বললাম, ‘‘সেটাও পারব না।’’
এতে রেগে গিয়ে ছেলেটি নাছোড়বান্দা হয়ে উঠতেই বললাম, ‘‘তুমি বাইরে যাও, তোমার ভোট হয়ে গিয়েছে। নইলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর লোক ডাকতে বাধ্য হব।’’
কথায় কাজ হল।
মাসিমা শেষ পর্যন্ত টেন্ডার ব্যালটেই ভোট দিলেন।
আমার বুথে ৮৬৩টি ভোটারের মধ্যে ৬৪২টি ভোট পড়েছিল। টেন্ডার ভোট পড়েছিল ওই একটাই।
ভোট পক্রিয়া শান্তিতে মিটলেও সমস্যা দেখা গেল, জমা দেওয়ার সময়। চরম ভোগান্তি।
সেখানে অল্প জায়গার মধ্যে নলহাটি ও মুরারই— দুই বিধানসভা কেন্দ্রের বিতরণ ও জমা দেওয়ার ব্যবস্থা হওয়ায় ভোট কর্মীদের দুর্দশার অন্ত নেই!
(শিক্ষক, নিশ্চিন্তপুর হাই স্কুল)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy