ঘুষ নিতে গিয়ে নারদের গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়ে তৃণমূল নেতারা দাবি করেছিলেন, ওটা জাল ভিডিও। তার পর হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, ওঠা ঘুষ নয়, অনুদান!
শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে ওই ঘুষ কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত চেয়ে জনস্বার্থ মামলার শুনানি। তার আগে আইনজীবী মহল মনে করছে, কোনও তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার আগে নারদ নিউজের গোপন ভিডিও আসল না জাল, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত চাইতে পারে আদালত। আইনে সেই ধরনের বিধানই রয়েছে। ভিডিওটি আসল প্রমাণ হলে
তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে বলেই মনে করছেন আইনজীবীদের একটা বড় অংশ।
আইন বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ দেবের মতে, ‘‘তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে না কি না, দিলেও কাকে তদন্তের ভার দেওয়া হবে, তা আদালতই ঠিক করবে। তবে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৭৯এ ধারা ও সাক্ষ্যপ্রমাণ আইনের ৪৫এ ধারা অনুযায়ী, মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরুর আগে ওই ফুটেজ আসল না জাল, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রয়োজন হয়।’’
ইতিমধ্যেই নারদ নিউজের কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েল আদালতে হলফনামা পেশ করে বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে আদালতে উপস্থিত হওয়ার ব্যাপারে নিরাপদ বোধ করছেন না। তা ছাড়া ভিডিও টেপ কলকাতায় নিয়ে গেলে সেটিরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। আদালত নির্দেশ দিলে তিনি দিল্লিতে অবস্থিত কোনও তদন্ত সংস্থার হাতে ওই টেপ তুলে দিতে পারেন। বিশ্বজিৎবাবুর মতে, ‘‘যে সংস্থা এই গোপন ভিডিওটি রেকর্ড করেছে, তাদের উচিত ছিল তথ্যপ্রযুক্তি আইন ও সাক্ষ্যপ্রমাণ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় বলা প্রক্রিয়া মেনে নেওয়ার জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া।’’
অর্থাৎ, তাদের ভিডিও যে আসল, তা বিশেষজ্ঞকে দিয়ে পরীক্ষা করানোর জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া।
কলকাতা হাইকোর্ট তদন্তের নির্দেশ দিলে তৃণমূলের তরফে তাতে স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলার পরিকল্পনা হচ্ছে জেনে শীর্ষ আদালতের আইনজীবীদের মধ্যে এ বিষয়ে জল্পনা তুঙ্গে। সুপ্রিম কোর্টের এক প্রবীণ বাঙালি আইনজীবীর বক্তব্য, ‘‘ঘুষ নিতে গিয়ে গোপন ভিডিওয় ধরা পড়ে এর আগেও সিবিআই তদন্তের মুখে পড়তে হয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের। তাঁদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন মামলাও চলেছে। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দিলীপ সিংহ জুদেওর নামই উদাহরণ হিসেবে বলা যায়।’’ অটলবিহারী বাজপেয়ী জমানায় কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী দিলীপ সিংহ জুদেও-এর ৯ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়ার গোপন ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। দিলীপের পাল্টা অভিযোগ ছিল, ছত্তীসগঢ়ের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অজিত জোগীর ছেলে অমিত জোগী ষড়যন্ত্র করে তাঁকে ফাঁসিয়েছেন। অমিত ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গোদের বিরুদ্ধেও সিবিআই তদন্ত হয়েছিল। আর দিলীপও তদন্তের হাত থেকে রেহাই পাননি। তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিটও পেশ করেছিল সিবিআই। এই তদন্তের জেরেই মুখ্যমন্ত্রীর গদিতেও বসা হয়নি দিলীপের। সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে মাত্র তিন দিন আগে সিবিআই বিশেষ আদালত দিলীপ ও অন্যদের রেহাই দিয়েছে। দিলীপ অবশ্য বছর তিনেক আগেই প্রয়াত হয়েছেন।
এই দিলীপ সিংহ জুদেও-এর ঘুষ মামলাতেই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, যে বা যাঁরা গোপন ভিডিও-য় ‘স্টিং অপারেশন’ করছেন, তাঁদেরও সতর্ক হওয়া দরকার। না হলে তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। দু’বছর আগে, তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি পি সদাশিবমের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেয়, যাঁরা ‘স্টিং অপারেশন’
করছেন, তাঁরাও জনস্বার্থে গোপন ভিডিও তোলা হয়েছে বললেই ছাড় পেয়ে যাবেন, এমন নয়। যদি দেখা যায়, তাঁরাও অপরাধ করেছেন, তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধেও মামলা হতে পারে। দিলীপ সিংহ জুদেও-কে যে ব্যবসায়ী ঘুষ দিয়েছিলেন, সেই রজত প্রসাদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করেছিল সিবিআই।
দুর্নীতি প্রকাশ্যে আনতে তিনি ও তাঁর সঙ্গী সাংবাদিক ঘুষ দিয়েছিলেন বলে রেহাই চাইলেও সুপ্রিম কোর্ট তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ খারিজ করেনি। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘আসলে স্টিং অপারেশন নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কোনও আইনই এ দেশে নেই।
সুপ্রিম কোর্ট ২০০৭-এ কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রককে এ বিষয়ে খসড়া নির্দেশিকা তৈরি করতে বলেছিল। একই সুপারিশ করেছে আইন কমিশনও। কিন্তু আজ অবধি কিছুই হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy