জয়ের পর সমর্থকদের সঙ্গে মনোজ তিওয়ারি ছবি - টুইটার
পাঁচ বারের বিধায়ক জটু লাহিড়ীর আসনে টিকিট পাওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে একটা গুঞ্জন চলছিল। রাজনীতির জগতে একেবারে নতুন মনোজ তিওয়ারি এই নতুন পিচে মানিয়ে নিতে পারবেন তো! দলীয় কোন্দলের জন্য অভিষেক ম্যাচ যেন কেঁচে না যায়, এই আশঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। কিন্তু সবাইকে ভুল প্রমাণ করে শিবপুর কেন্দ্র থেকে বিজেপি-র নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রথীন চক্রবর্তীকে হারিয়ে দিলেন মনোজ।
জয়ের সার্টিফিকেট পেতে রাত হয়ে যাবে। কিন্তু তার আগেই গণনা কেন্দ্র থেকে টেলিফোনে আনন্দবাজার ডিজিটালকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই নতুন সৈনিক। আলোচনার মাঝে বিজেপি-র উদ্দেশে কটাক্ষ মেশানো চুটকি ছুড়ে দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্যের মহিলাদের সম্মান জানিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও জানিয়ে দিলেন।
প্রশ্ন: জয়ের জন্য অনেক অভিনন্দন। আপনি তো অভিষেকেই শতরান মারলেন।
মনোজ: ধন্যবাদ। তবে এই জয় আমার জন্য নয়, দিদির উন্নয়নের জন্য এসেছে। তাছাড়া এলাকার সাধারণ মানুষ করোনার পরোয়া না করে দিন-রাত এক করে পরিশ্রম করেছেন। তাই এই জয় তাঁদের। আমি তো নিমিত্ত মাত্র। তৃণমূলের এক সাধারণ সৈনিক। ক্রিকেট খেলার সময় ১০০ শতাংশ উজাড় করে দিতাম। এখানেও তাই। আসলে প্রত্যেক মানুষ যদি নিজের কাজে সত্ থাকতে পারে এবং সেই সততা সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারেন, তাহলে সাফল্য আসতে বাধ্য। ক্রিকেট ও রাজনীতির ক্ষেত্রেও কিন্তু ব্যাপারটা তেমনই। এটা তো দলগত খেলা। তাই সবার সৎ থাকা খুব জরুরী। বিশেষ করে যাঁদের প্রতি মুহূর্তে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়, তাঁদের সৎ থাকা আরও জরুরী। এলাকার লোকজন আমার প্রতি বিশ্বাস দেখিয়েছেন। এ বার তাঁদের ভালবাসা, সম্মান ও বিশ্বাস ফিরিয়ে দেওয়ার সময় এসে গিয়েছে।
প্রশ্ন: পাঁচ বারের বিধায়ক জটু লাহিড়ীর আসনে টিকিট পাওয়ার পর থেকে কিন্তু অন্তর্ঘাত নিয়ে একটা গুঞ্জন চলছিল।
মনোজ: এই সব খবর আপনারাই জানেন। আমার জানা নেই। বরং আমি তো প্রথম দিন প্রচার শুরু করার আগেই জটুদা-র সঙ্গে আলাপ করেছিলাম। এলাকার সব খুঁটিনাটি ওঁর কাছ থেকে জেনেছিলাম। আসলে জটুদা তাঁর কাজ যে জায়গায় শেষ করেছেন, আমি ঠিক সেখান থেকেই শুরু করতে চাই। সেই বিষয়ে ওঁর সঙ্গে ভবিষ্যতেও আলোচনা করব।
প্রশ্ন: জীবনের এই বিশেষ দিন কীভাবে উদযাপন করবেন?
মনোজ: ঘরে ফিরে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে সময় কাটাব। মা, বউ, ছেলের সঙ্গে সময় কাটানোর ইচ্ছে আছে। তবে এর আগে একবার কালীঘাটে গিয়ে দিদিকে প্রণাম করে আসব। আর উদযাপন এখন তোলা থাক। দলের সবাইকে দিদি তেমনই নির্দেশ দিয়েছেন। কর্মীদেরও সেটা জানিয়ে দিয়েছি। আবীর নিয়ে একটু উল্লাস হতে পারে, তবে সবটাই সামাজিক দূরত্ব মেনে করতে হবে। কারণ ভুলে যাবেন না আমরা বিজেপি-র বিরুদ্ধে জিতলেও করোনাকে এখনও হারাতে পারিনি।
প্রশ্ন: প্রথম বার ভোট যুদ্ধে নেমে এত বড় ব্যবধানে জয় আশা করেছিলেন?
মনোজ: শুরু থেকে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। সেটা আপনাদের আগেও বলেছি। তবে এত ব্যবধানে জিতব সেটা আশা করিনি। তাই এই জয় যে উপভোগ করছি সেটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
প্রশ্ন: ১ মে পর্যন্ত বিজেপি-র শীর্ষ নেতারা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু ব্যালট খুলতেই সব বদলে গেল। কিছু বলবেন?
মনোজ: আমি শুধু এক, দুই নিয়ে কোনওদিন ব্যাট করিনি। ছক্কা মারতেও ভালবাসি। তাই ওদের উদ্দেশ্যে বলছি, ‘মারব ছক্কা উড়বে ফুল। আসছে আবার জোড়া ফুল।’ দিনের শেষে কিন্তু জোড়া ফুলই এল। আর এতেই বোঝা যায় বাইরে থেকে এসে, ধর্ম নিয়ে গরমাগরম কথা বলে, টাকা ও ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে, একরাশ মিথ্যে কথা বলে এখানে ভোট জেতা যাবে না। এর চেয়ে বেশি ওদের নিয়ে বেশি কথা বলে সময় নষ্ট করতে রাজি নই।
প্রশ্ন: জেতার খবর পাওয়ার পর মা ও স্ত্রী-র কী প্রতিক্রিয়া ছিল?
মনোজ: ওরা দুজন খুবই খুশি। কারণ মা ও সুস্মিতা পাশে না থাকলে খোলা মনে এই লড়াইয়ে নামতে পারতাম না। সবাই আমাকে কিংবা আমাদের দেখতে পান। কিন্তু পরিবারের মহিলারা আমাদের থেকে অনেক বেশি ত্যাগ করেন। তাই ওদের জন্যই এই সাফল্য পেলাম।
প্রশ্ন: কোন কাজ দিয়ে নতুন ইনিংস শুরু করবেন?
মনোজ: সবার আগে করোনার বিরুদ্ধে জিততে হবে। আমার কেন্দ্রেও আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়েছে। তাই ভোট মিটে যাওয়ার পর থেকেই কর্মীদের মাধ্যমে এলাকায় মাস্ক বিতরণ ও স্যানিটাইজার বিতরণ করেছি। একাধিক আক্রান্ত মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করা, তাঁদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করিয়েছি। তবে এ বার আরও দায়িত্ব নিয়ে বাকি কাজগুলো দেখতে হবে। ভোটে জেতার পর এটাই আমার প্রথম কাজ।
প্রশ্ন: আপনি কি মন্ত্রী হচ্ছেন?
মনোজ: (এক গাল হেসে) এই প্রশ্নের উত্তর আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। দিদি যদি যোগ্য মনে করেন তাহলে অবশ্যই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেব। আমি তো চার থেকে সাত সব জায়গায় ব্যাট করতে পারি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy