এ বার কি দিল্লিতে মনোনিবেশ করবেন মমতা, জল্পনা তুঙ্গে। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই গেরুয়া দাপট শুরু হয়েছিল রাজ্যে। কিন্তু নীলবাড়ির লড়াইয়ে শেষমেশ বিরোধী দল হিসেবেই যাত্রা শেষ হল বিজেপি-র। খুঁটি মজবুত করতে ভোটের আগে বার বার রাজ্যে ছুটে এসেছেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ থেকে গেরুয়া শিবিরের বড়-ছোট সব নেতাই। কিন্তু একা হাতে তাঁদের আটকে দিতে সফল হলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুঝিয়ে দিলেন, এই মুহূর্তে বাংলার রাজনৈতিক নাড়ি-নক্ষত্র বুঝতে তাঁর জুড়ি নেই।
দেশের অন্য রাজ্যে গেরুয়া ঢেউ তুললেও, বাংলা বরাবরই বিজেপি-র নাগালের বাইরে থেকেছে। তবে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস ভোট কার্যত মুঠোবন্দি করার পরেই বাংলা দখলের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দেন মোদী-শাহ। বাংলায় ‘ডাবল ইঞ্জিন সরকার’-এর স্বপ্ন ফেরি করতে শুরু করেন তাঁরা। বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের সঙ্গে নিজেদের একাত্ম করে ফেলতে চেষ্টায় কোনও কসুর করেননি তাঁরা। কিন্তু তার পরেও ২০০-র বেশি আসনের ‘স্বপ্ন’ অধরাই রইল তাদের। যদিও ২০১৬-র ৩ থেকে এক ধাপে ৭০-এর বেশি আসন বাড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে তারা, তবে বাংলা দখলের লক্ষ্য এ বারেও অপূর্ণই থাকল।
রবিবার ভোটের ফলাফল সামনে আসার পর বাবুল সুপ্রিয়র মতো নেতারা তাই প্রকাশ্যেই বাংলার মানুষকে ‘কটাক্ষ’ করেছেন। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, পরাজয়ের জন্য বিজেপি নিজেই দায়ী। নির্বাচনে জিতে, ক্ষমতাসীন সরকার ‘ফেলে দিয়ে’ এত দিন একের পর এক রাজ্যে ক্ষমতা দখল করে এসেছে বিজেপি। সেই ভরপুর ‘আত্মবিশ্বাস’ এবং ‘ঔদ্ধত্য’ই তাঁদের ভরাডুবির সবচেয়ে বড় কারণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মতে, দিল্লিতে কৃষক আন্দোলন যখন তুঙ্গে, পর পর কৃষকদের আত্মঘাতী হওয়ার খবর সামনে আসছে, সেই সময় বাংলায় এসে কৃষকদের ‘নগদ টাকা’র ভরসা দিতে দেখা গিয়েছে মোদী-শাহকে। কিন্তু বাংলার কৃষকদের মন ভেজাতে পারেননি তাঁরা।
রাজনৈতিক মহলের একটি অংশ আবার মনে করছে, করোনা সঙ্কটে যখন ধুঁকছে গোটা দেশ, তখন বিপদের তোয়াক্কা না করে হাজার হাজার মানুষকে নিয়ে সভা করে গিয়েছেন। রান্নার গ্যাসের দামে যখন ‘হাত পুড়ছে’ মধ্যবিত্তের, সেই সময় ‘উজ্জ্বলা যোজনা’র সাফল্য ব্যাখ্যা করতে দেখা গিয়েছে মোদী-শাহকে। কিন্তু তাতে মধ্যবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষকে ভোলাতে পারেননি তাঁরা। বরং ‘স্বাস্থ্যসাথী’ ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের কাছে আরও বেশি করে পৌঁছে যেতে পেরেছেন মমতা। ‘বহিরাগত’ বনাম ‘ঘরের মেয়ে’র দৌড়েও মমতা লড়াইয়ে অনেক এগিয়ে গিয়েছেন।
মমতার এই জয়ে মোদী-শাহের বিচলিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকে। তাঁদের মতে, বিভিন্ন সভায় মমতাকে যে ভাবে ‘দিদি-ও-দিদি-ই’ বলে সম্মোধন করেছেন মোদী, তাতে মহিলাদের একটা বড় অংশ মোদীর প্রতি অসন্তুষ্ট। ভোটের ফলাফল বেরনোর পর সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদবের মুখেও সেই প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। বিজেপি-কে হারানো মমতাকে ‘দিদি-জিয়ো-দিদি’ বলে প্রশংসায় ভরে দিয়েছেন তিনি। শরদ পওয়ার, শশী তারুরের মতো বিজেপি-বিরোধী শিবিরের জাতীয় নেতারাও মমতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এতে জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি বিরোধী জোটের মুখ হিসেবে মমতা উঠে এসেছেন, যা ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে মোদী-শাহকে ভোগাতে পারে।
নির্বাচনী প্রচারে ইতিমধ্যেই ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের কথা উঠে এসেছে মমতার মুখেও। তৃতীয় বারের জন্য রাজ্যের শাসনভার হাতে পাওয়ার পর দিল্লিতে মনোনিবেশ করবেন বলে জানিয়েছেন। মমতা আদৌ লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করবেন কি না, তা সময়ই বলবে। তবে নীলবাড়ির লড়াইয়ে মমতার ধাক্কা সামলে উঠতে যে মোদী-শাহের সময় লাগবে, তা মানছেন অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy