Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

হুইলচেয়ারে বসেই উনি প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করিয়ে ছাড়লেন

আমপানে আম গিয়েছে, পানের বরোজ গিয়েছে, প্রাণও রাখা দায়। চুরি করেছে ‌আমপানের ত্রানের টাকা।

হুইলচেয়ারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

হুইলচেয়ারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

অচিন্ত্য বিশ্বাস
অচিন্ত্য বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মে ২০২১ ১৮:৩৭
Share: Save:

প্লেটো বলেছিলেন, কোনও জ্যামিতিক আকৃতি সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য নয়। বর্গক্ষেত্রের চার বাহু সমান হয় না, বৃত্ত এক-কেন্দ্রিক সমান ব্যাসার্ধের হওয়া অসম্ভব। আবর্তন আর প্রত্যাবর্তন একই পথে হওয়া অসম্ভব। তাতে কিছু যায় আসে না। শিবরাম চক্রবর্তী লিখেছিলেন, 'প্রেমের পথ ঘোরালো', তাই পা হড়কালেও কুছ পরোয়া নেই। নতুন রথচক্রযান কি জোগাড় করা অসম্ভব? দেহরক্ষীরা বোঝো ঠেলা! প্রত্যাবর্তনের পথ খুবই ঘোরালো।

তবে পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা অতুলনীয়। রীতিমতো তাঞ্জামে চেপে শুন্ডি দেশের যাত্রী ওস্তাদ গাইয়ের মতো। বাঘা কি সাধে বলেছিল, 'কী দাপট!' হুইল চেয়ারের তাঞ্জামে চড়েই দেশের প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দু'তিনটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ডেলি প্যাসেঞ্জার করিয়ে ছাড়লেন।

অন্য কারণও আছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটা দেশের মধ্যে ব্যতিক্রম বটে। এখানে দেশভাগের ফলভোগী প্রচুর। তারা বাংলাদেশে বসত ভিটেতে জিনস পরে কেঁদে কেটে একসা হবেন, কিন্তু দেশভাগ আর দেশ ত্যাগের কারণ তারা ভুলে মেরে দেবেন। শশ্মান থেকে ফেরার পথে পিছন পানে ছাই ভস্মের দিকে তাকাতে নেই। কে আর হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে! মানবতা মশাই, দেশপ্রেমের চেয়ে অনেক উঁচুতে থাকে। আর বিশ্ব মানব প্রেমের পথও ঘোরালো, বলতে পারেন প্যাঁচালো। ছেলে অন্য রাজ্যে চাকরি করছে, মেয়ে পড়তে গিয়েছে বেঙ্গালুরুতে। চা খাবো না আমরা, খাবো না চা? বলে তাস পেটানো আড্ডাধারী বলবেন পশ্চিমবঙ্গকে গুজরাত হতে দেব না!

পরিযায়ী শ্রমিকের কোলে কাঁধে শিশু। ফিরে আসছেন থিমের দুর্গা! কেন গিয়েছিলেন মা? রাজ্যে কাজ ছিল না? শিল্প কারখানাগুলো শেষ করে হাসি মুখে মুখোশ গলায় ঝুলিয়ে থিমের দুর্গার শিল্প কলার দিকে অপার বিস্ময়ে তাকিয়ে আছেন। দূরে গান বাজছে, 'কেন চেয়ে আছো গো মা!' কেন আমরা বিনে পয়সার চাল, ডাল, চিনি পাওয়ার আশায় যা পাচ্ছি তাই ভাল। পাবো আরও নগদ। বেশি আশা করা ঠিক নয়। ফলে প্রত্যাবর্তন অনিবার্য।

তৃণমূলের ফুল গিয়ে পাঁকে পড়লেই পদ্ম হয়? বিশ্বাস করতে হবে? একই দলের 'এ'-টিম আর 'বি'-টিম খেলতে নেমেছে। এই খেলায় 'বি'-টিম তো বাংলাতে কথাই বলেই না! বাঙ্গালিকে কি মাতৃভাষা ছেড়ে রামধুন গাইতে হবে নাকি? সব ছাড়া যায়, কিন্তু ভাষা, সংস্কৃতি, রবীন্দ্রনাথ, জলসা ছাড়ব কী করে? ফলে যা হবার তাই হল। প্রত্যাবর্তন। একটু ঘোরালো পথে, এই যা!

আমপানে আম গিয়েছে, পানের বরোজ গিয়েছে, প্রাণও রাখা দায়। চুরি করেছে ‌আমপানের ত্রানের টাকা। কে করেছে জানি, তবে ওই তো সময়ে অসময়ে দেবে। কাটমানি, ছাঁট মানি দিতে হয়, তবু কাজ তো হয়! গলায় গামছা দিয়ে এসে কী সব ভাষায় কথা ('কার্যকর্তা', 'পরিবর্তন', 'জনসম্পর্ক' - এ সব কোন দেশি বাংলা?) ওদের বিশ্বাস করতে হবে? সেই কংগ্রেস সিপিএম যখন ছিল তখনও এই লোকটা ছিল, এখনও আছে। দেশপ্রেম-মানব প্রেম। পতাকা বদলায় কিন্তু পাড়ায় কর্তা তো ওই। এই খানেই একশ দিনের কাজ, পায়খানার টাকা, এমন কী বাড়ি তৈরির টাকা পাওয়া যায়। কী বললেন, প্রধানমন্ত্রীর টাকা? ভুল বোঝাবেন না দাদা! আমরা আমাদের মেয়েকেই চাই। প্রত্যাবর্তন হবে না তো কী হবে? পশ্চিমবঙ্গ এক অনন্ত কুম্ভীপাকে ঘুরছে। এখানে রাজা বদলায়, রানি পাল্টায় কিন্তু পাড়ার শক্তি কেন্দ্র বদলায় না। অতএব!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE