নন্দীগ্রাম থেকেই ভোটে দাঁড়াচ্ছেন মমতা।
আলটপকা মন্তব্য করে হাওয়া গরম করা ধাতে নেই তাঁর। বরং একবার কথা দিলে তা রাখেন। শুক্রবার নন্দীগ্রাম থেকে নিজের প্রার্থী হওয়ার জল্পনায় সিলমোহর দিয়ে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জমি আন্দোলনের মাটি নন্দীগ্রাম তাঁর কাছে পয়মন্ত বলে আগে একাধিক বার জানিয়েছেন মমতা। শুক্রবার তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সংখ্যাতত্ত্ব অনুযায়ী ‘২১’ সংখ্যাটিও তাঁর জন্য পয়া। অর্থাৎ ’২১-এ নীলবাড়ির লড়াইয়ে নন্দীগ্রাম তাঁকে নিরাশ করবে না বলে নিশ্চিত তৃণমূল দলনেত্রী। নন্দীগ্রামে ভওট দ্বিতীয় দফায় ১ এপ্রিল।
গত ১৮ জানুয়ারি তেখালির মাঠে সভা করতে গিয়ে নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা প্রথম মমতাই উস্কে দেন। নিজের এত দিনের কেন্দ্র ভবানীপুরকে ‘বড়বোন’ এবং নন্দীগ্রামকে ‘মেজোবোন’ বলে উল্লেখ করেন। তখন থেকেই নন্দীগ্রাম থেকে মমতার ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে জল্পনা চলছিল। শুক্রবার মমতা নিজেই জানিয়ে দিলেন, নন্দীগ্রাম থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। তবে পরে আবার ভবানীপুর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। শুক্রবার দুপুরে কালীঘাটে দলের কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। সেখানেই নন্দীগ্রাম এবং মমতার এত দিনের নির্বাচনী কেন্দ্র ভবানীপুর নিয়েই যাবতীয় উৎসাহ এবং কৌতূহলের অবসান ঘটান তিনি। বলেন, ‘‘আমি নন্দীগ্রামেই লড়ছি। আমি যখন কথা দিই, কথা রাখি। যাদবপুর থেকে জীবন শুরু করেছিলাম। যখন কেউ সেখানে দাঁড়াতে চায়নি আমি দাঁড়িয়েছিলাম। সেই সময় হাজরায় আমায় মারা হয়। তা-ও সারা শরীরে ছোপ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। তখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো পরিস্থিতিও ছিল না।’’
২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুরে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। তখন মমতা দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ। বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল জয়ী হওয়ার পর সুব্রতর ভবানীপুর থেকে বিধানসভায় জিতে আসেন মমতা। আর দক্ষিণ কলকাতা লোকসভায় জিতে সংসদে যান সুব্রত। তার পর থেকে এত দিন ভবানীপুরই মমতার নির্বাচনী কেন্দ্র ছিল। নন্দীগ্রামের জন্য এবার সেই ভবানীপুর থেকে সরে এলেন মমতা। ওই কেন্দ্রের ভার দিতে দিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের হাতে। মমতার কথায়, ‘‘ভবানীপুর থেকে এখনও পর্যন্ত ৭ বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। সংসদীয় নির্বাচনে সেখান থেকে ৫ বার জিতেছি। ২ বার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছি। প্রয়োজন হলে পরে আবার দাঁড়াব। কিন্তু এ বারে ভবানীপুর সহকর্মী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে দিচ্ছি। ওঁর বাড়ি ওখানে। ওই পাড়ায় মানুষ হয়েছেন। তা ছাড়া আমি ভবানীপুরে দাঁড়ালাম কী না দাঁড়ালাম, সেটা বড় কথা নয়। ভবানীপুর আমার হাতের মুঠোয় থাকে। ক্লাব, পুজো কমিটি সবটাই করি।’’
মমতা নন্দীগ্রামে দাঁড়াতে ইচ্ছুক বলে জানানোর পর থেকেই তা নিয়ে লাগাতার তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। নির্বাচন কমিশন ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশের পর দেখা যায়, দ্বিতীয় দফায় অর্থাৎ ১ এপ্রিল নন্দীগ্রামে ভোটগ্রহণ। সপ্তম দফায় ২৬ এপ্রিল ভোটগ্রহণ ভবানীপুরে। যে সূত্রে বিজেপি শিবির কটাক্ষ করতে শুরু করেছিল, একটায় হারলে যাতে অন্যটা হাতে থাকে, তার জন্য দুই কেন্দ্র থেকেই মমতা ভোটে দাঁড়াতে চলেছেন। তবে মমতা তা করেননি। জমি আন্দোলনে মমতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেতৃত্ব দেওয়া শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রামে দাঁড়ানো নিয়ে প্রকাশ্যে মমতাকে চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেন তিনি। বলেন, ‘‘সাহস থাকলে মমতা শুধুমাত্র নন্দীগ্রাম থেকে লড়ে দেখান!’’
কিন্তু গণ আন্দোলনের নেত্রী থেকে রাজ্যের প্রশাসনিক অধিনায়ক পদে অধিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘযাত্রা পেরিয়ে এসে তিনি যে ঝুঁকি নিতে ভয় পান না, সে কথা আরও এক বার প্রমাণ করলেন মমতা। নন্দীগ্রামে মমতাকে ৫০ হাজার ভোটে হারিয়ে ছাড়বেন বলে হুঙ্কার ছেড়েছেন শুভেন্দু। কিন্তু মমতা বুঝিয়েছেন, তিনি পিছু হটার মানুষ নন! ১০ মার্চ মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরই নন্দীগ্রামে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন মমতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy