১১ জন নতুন তারকা প্রার্থী ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
বিধানসভা ভোটে ১১ জন তথাকথিত ‘তারকা’ প্রার্থীকে ময়দানে নামালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই রুপোলি পর্দার। তাঁদের সঙ্গেই রয়েছেন একজন সদ্যপ্রাক্তন ক্রিকেটার এবং এক প্রাক্তন ফুটবলার। পক্ষান্তরে, বাদ গিয়েছেন এক তারকা এবং এক প্রাক্তন ফুটবলার। যাঁদের টিকিট দেওয়া হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতার কথায়, তাঁরা দলের ‘ইয়ং ফেস’। অর্থাৎ, তরুণ মুখ। যাঁরা ‘দিদি’র বার্তাবাহক হয়ে তৃণমূলের কথা, মমতার কথা পৌঁছে দেবেন মানুষের কাছে।
তাঁদের যে আসনগুলি দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের নিরিখে এগিয়ে-পিছিয়ে থাকার অনুপাত প্রায় সমান। ওই ১১টি আসনের মধ্যে ছ’টি আসনে পিছিয়েছিল তৃণমূল। এগিয়েছিল পাঁচটি আসনে। ব্যারাকপুর, আসানসোল দক্ষিণ, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম এবং কৃষ্ণনগর উত্তর আসনে পিছিয়েছিল তৃণমূল। আর এগিয়েছিল উলুবেড়িয়া পূর্ব, রাজারহাট গোপালপুর, সোনারপুর দক্ষিণ, শিবপুর এবং উত্তরপাড়া আসনে। তৃণমূলের একাংশের অভিমত, পিছিয়ে-থাকা আসনগুলিতে তারকাদের দাঁড় করিয়ে ‘নিরাপদ বাজি’ খেলতে চেয়েছেন মমতা। অর্থাৎ, পিছিয়ে-থাকা আসনগুলিতে তারকারা যদি জিতিয়ে দিতে পারেন, সেগুলিই হবে শাসক শিবিরের বাড়তি পাওনা। না জিততে পারলেও আফশোসের কিছু থাকবে না।
শুক্রবার ঘোষিত তৃণমূলের প্রার্থিতালিকায় যে টলিউডের তারকাদের একটা অংশ থাকবে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। গত কয়েক দিন ধরে দফায় দফায় তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন তারকারা। শুক্রবারের ঘোষণায় সেই তারকা তালিকা থেকে ১১ জনকে বেছে নেওয়া হয়েছে ১১টি কেন্দ্রে লড়ার জন্য। তাঁরা হলেন রাজ চক্রবর্তী (ব্যারাকপুর), সায়নী ঘোষ (আসানসোল দক্ষিণ), জুন মাল্য (মেদিনীপুর), সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁকুড়া), কাঞ্চন মল্লিক (উত্তরপাড়া), মনোজ তিওয়ারি (শিবপুর), বীরবাহা হাঁসদা (ঝাড়গ্রাম), অদিতি মুন্সি (রাজারহাট গোপালপুর), কৌশানী মুখোপাধ্যায় (কৃষ্ণনগর উত্তর), লাভলি মৈত্র (সোনারপুর দক্ষিণ) এবং বিদেশ বসু (উলুবেড়িয়া পূর্ব)। এঁদের মধ্যে মনোজ প্রাক্তন ক্রিকেটার। তিনি বাংলার অধিনায়কত্বও করেছেন। আর রয়েছেন প্রাক্তন ফুটবলার বিদেশ বসু। যিনি ভারতের হয়ে খেলেছেন।
বস্তুত, শুক্রবার মোট ১৫ জন তারকা প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে তৃণমূল। ১১ জন নতুন প্রার্থী ছাড়া সেই তালিকায় রয়েছেন অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী (চণ্ডীপুর), ইন্দ্রনীল সেন (চন্দননগর), চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী (বারাসত) এবং নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় (চৌরঙ্গি)। কিন্তু রায়দিঘির বিধায়ক দেবশ্রী রায় এবং বসিরহাটের বিধায়ক প্রাক্তন ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাসকে টিকিট দেওয়া হয়নি।। টোটো তহবিল সংক্রান্ত মামলায় জড়িয়ে দেবশ্রী আগেই রায়দিঘি কেন্দ্র ছাড়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। তবে তাঁকে যে অন্য কোনও কেন্দ্র না দিয়ে পুরোপুরি বাদ দেওয়া হবে, তা বোঝা যায়নি। তাঁর বদলে রায়দিঘিতে প্রার্থী হয়েছেন অলোক জলদাতা। দীপেন্দুর কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন সপ্তর্ষি চক্রবর্তী।
মমতা যখন সাংবাদিক বৈঠকে প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করছিলেন, তখন বহু ভোটপ্রত্যাশী তারকারা এক সঙ্গে একটি ঘরে বসে টিভি দেখছিলেন। নাম ঘোষণার অব্যবহিত পরে রাজ বলেন, ‘‘সিনেমা যা করে, রাজনীতিও তাই করে। সিনেমা সমাজের কথা বলে, মানুষের কথা বলে। রাজনীতিও সমাজের জন্যই। তাই আমাদের কাজের ক্ষেত্রের তেমন পরিবর্তন হচ্ছে বলে আমি মনে করছি না। রাজনীতি মানে অশালীন কথা, অশালীন আক্রমণ নয়। মূল বিষয় হল মানুষের জন্য কাজ করা। সেটাই করতে চেয়েছি। সেটাই করার চেষ্টা করব। আমাদের তারকা বলে যেন ভাবা না হয়। সিনেমা আমাদের পেশা। ঠিক যেমন একজন চিকিৎসক এবং আইনজীবীও পেশাদার, তেমনই। ওঁরা যদি রাজনীতিতে আসতে পারেন আমরা কেন পারব না।’’ অভিনেত্রী জুন বহুদিন ধরেই মমতার ঘনিষ্ঠ। প্রার্থী হয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমিও উত্তেজিত। মেদিনীপুরে আমার শিকড়। দিদি আমাকে সেখানে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। তাতে আমি কৃতজ্ঞ। ২০১১ সাল থেকেই আমার রাজনীতিতে যোগ দেওয়া নিয়ে নানা সম্ভাবনার কথা সামনে আসছে। শেষ পর্যন্ত রাজনীতিতে আসতে পেরে এবং মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি কতটা খুশি বোঝাতে পারব না। আরও ভাল লাগেছে আমার পাশের কেন্দ্রেই প্রার্থী হিসেবে দিদিকে পেয়েছি। দিদি অনেক কিছু করেছেন আমাদের জন্য। এবার দিদির হাত শক্ত করার পালা। যাঁরা এই যুদ্ধে আমার সহযোদ্ধা, তাঁদের প্রত্যেককে আমাদের শুভেচ্ছা। আমরা একটা টিম হিসেবে কাজ করব। আর একসঙ্গে এই নির্বাচন জিতে দেখাব।’’
অদিতি ২৪ ঘন্টা আগেই যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। তার পরেই প্রার্থী! কিন্তু তিনি অবিচলিত। বললেন, ‘‘রাজনীতির মানসিকতা তো আলাদা কিছু নয়। বিয়ের পর থেকেই দেখে এসেছি, আমার স্বামী-শ্বশুরমশাই সমাজের জন্য কাজ করছেন। সেই কাজে তাঁদের মানসিক তৃপ্তিলাভ করতেও দেখেছি। আমি নিজেও সেই আনন্দ, সেই তৃপ্তি পেতে চেয়েছি বলেই রাজনীতিতে আসা। যখন যেখানে গান গাইতে যাই, প্রচুর মানুষের সঙ্গে কথা হয়। যোগাযোগ হয়। তাঁরা আমাকে পছন্দও করেন। তাঁদের জন্য কিছু করতে পারার সুযোগ পেয়ে ভাল লাগছে। আমাকে যে এই কাজের যোগ্য ভাবা হয়েছে, সে জন্যও ভাল লাগছে।’’
কিন্তু তারকারা কি বিজেপি-র মতো প্রতিপক্ষকে হারাতে পারবেন? জবাব এসেছে একযোগে— ‘‘জয় নিশ্চিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিতছেন। কারণ বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy