ভোটের টিকিট না পেয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন ইয়াসির।
কেউ সংবাদমাধ্যমের সামনেই ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। কেউ আবার ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন নেটমাধ্যমে। অভিমানে রাতারাতি রাজনীতি থেকে সরেও যাচ্ছেন অনেকে। শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা ঘোষণার পর থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় এমন একাধিক ঘটনা ঘটছে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়। এ বার তাঁর একান্ত অনুগত এবং প্রিয় ‘ববি’র ঘরেও বিরুদ্ধস্বর শোনা গেল। সরাসরি নাম না করলেও তৃণমূলনেত্রীর প্রার্থী চয়ন নিয়ে নেটমাধ্যমে কটাক্ষ করলেন কলকাতার পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের জামাতা ইয়াসির হায়দর।
শুক্রবার কালীঘাটে দলের কার্যালয়ে ফিরহাদ হাকিমকে পাশে নিয়েই ২৯১টি আসনের প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করেন মমতা। তালিকায় দেখা যায়, কয়েকটি ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে দলের জমি আগলে পড়ে থাকা সৈনিকদের সরিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে রাজনীতিতে আনকোরা টলি তারকাদের হাতে। তা নিয়ে দলের অন্দরেই চাপানউতর শুরু হয়। গভীর রাতে তা নিয়ে নেটমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফিরহাদ-জামাতা ইয়াসিরও। তিনি লেখেন, ‘কয়েক বছর আগে এক জন বুদ্ধিমান মানুষ আমাকে বলেছিলেন যে, তারকা বা বিখ্যাত হলে সহজেই টিকিট পাওয়া যায়। তখন ওঁর কথা গুরুত্ব দিয়ে শোনা উচিত ছিল আমার। যাঁরা বছরের ৩৬৫ দিন ২৪ ঘণ্টা তথাকথিত দলের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যান, দিনের শেষে উপেক্ষিতই থেকে যান তাঁরা। এটাই কঠিন বাস্তব’।
প্রসঙ্গত, ফিরহাদের জামাতা ইয়াসিরকেই তাঁরা ‘রাজনৈতিক উত্তরসূরি’ হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা। জামাতাকে ফিরহাদ অত্যন্ত স্নেহ করেন। পারিবারিক পরিমণ্ডলে আদর করে ডাকেন ‘টাইগার’ বলে। সেই ‘টাইগার’ যে নেটমাধ্যমে এমন ‘গর্জন’ করবেন, তা ভাবা যায়নি। ফিরহাদ নিজে ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তাঁর ঘনিষ্ঠরাও মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কিন্তু ইয়াসিরের কিছু অনুগামী মনে করছেন, এই যুবনেতার ভোটের টিকিট পাওয়া ‘উচিত’ ছিল। তাঁরা আশা করেছিলেন, ফিরহাদ নিজে সেই বিষয়ে খানিকটা ‘প্রভাব’ খাটাবেন। কিন্তু ফিরহাদের ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, মন্ত্রী তেমন কিছু করেননি। তাঁর এক ঘনিষ্ঠের কথায়, ‘‘ববি’দা কোনও প্রভাব খাটানোর মানুষ নন। কোনও বিষয়ে কোনও প্রভাব খাটানওনি। তিনি দলের একনিষ্ঠ এবং অনুগত সৈনিক। দলের সিদ্ধান্তই তাঁর সিদ্ধান্ত। নেত্রী যে তালিকা করেছেন, ববি’দা সেখানে হস্তক্ষেপ করবেন, এমন আশা করাটাই ঠিক নয়।’’
প্রার্থী হতে না-পেরে হতাশা তো বটেই, নির্বাচনের নামে ‘তামাশা’ চলছে বলেও কটাক্ষ করেছেন ইয়াসির। নীলবাড়ি লড়াইয়ে তাঁকে কোন ভূমিকায় রাখা হবে, সে নিয়ে দলের তরফে কোনও আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল কি না তা অবশ্য খোলসা করেননি ফিরহাদ-জামাতা। তবে নেটমাধ্যমে যে ভাবে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি, তা মমতার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা হিসেবে দেখছে দলের একাংশ। ইয়াসিরের মন্তব্য নিয়ে ফিরহাদ বা তাঁর পরিবারের তরফে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু বলা হয়নি। তবে তাঁর এমন প্রকাশ্য মন্তব্য শ্বশুরমশাইয়কে যে খানিকটা ‘অস্বস্তি’-তে ফেলবে, তা মেনে নিচ্ছেন তৃণমূলের নেতাদের একাংশ। প্রসঙ্গত, শোভন চট্টোপাধ্যায় পদ্মশিবিরে নাম লেখানোর পর থেকেই মমতার ‘বিশেষ আস্থাভাজন’ হয়ে উঠেছেন ফিরহাদ। তাঁর হাতে কলকাতা পুরসভার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া হোক বা পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ই-স্কুটারে চেপে নবান্ন অভিযান— সবকিছুতেই ফিরহাদের উপর ভরসা রেখেছেন মমতা।
কিন্তু তৃণমূলের অন্দরের খবর, সময়ের সঙ্গে ফিরহাদ মমতার যতটা ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন, ততই তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে ইয়াসিরের। একসময় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ ছিলেন ইয়াসির। রাজ্য তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন তিনি। এমনকি, গতবছর আমপানের সময়ও সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় দলের সদস্যদের সঙ্গে ত্রাণ নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। কিন্তু গতবছর জুলাই নাগাদ ছন্দপতন ঘটে। আচমকাই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। তার পরেই তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে দলের। ইয়াসিরের টিকিট না-পাওয়া সেই দূরত্ব বৃদ্ধিরই ‘যৌক্তিক পরিণতি’ বলে অভিমত শাসক শিবিরের একাংশের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy