এই সব ভেড়ি এলাকা ঘিরেই আবর্তিত হয় হাড়োয়ার রাজনীতি। নিজস্ব চিত্র।
গুলি-বোমার শব্দ শোনা যায় হামেশাই। সংঘর্ষ, লুটপাট, হানাহানি লেগেই রয়েছে। কিন্তু শান্তি আর উন্নয়নের প্রশ্নে এখনও বহু সংশয় হাড়োয়ায়।
এক সময়ে সিপিএমের ‘লাল দুর্গ’ হাড়োয়ায় বর্তমানে ঘাসফুলের রমরমা। গত পাঁচ বছরে এলাকায় বেশ কিছু উন্নয়ন হলেও বহু মানুষের দাবি, প্রতিশ্রুতি মতো এখনও বহু কাজ বাকি। বাম শাসনের অবসানে শান্তি ফিরবেন বলে যাঁরা মনে করেছিলেন, তাঁদের স্বপ্নও অধরা। রতন দাস, পরেশ মুন্ডা, শেফালি সরেনরা জানালেন, মেছোভেড়ির দখলকে কেন্দ্র করে বাম আমলে প্রায়ই খুন-জখম হত। ঘরদোর পোড়ানোর ঘটনা ঘটত। এখনও সেই রাজনৈতিক আশ্রয়ে দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত কমেনি। মেছোভেড়ির দখলকে কেন্দ্র করে শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলছে এলাকায়। রতনের কথায়, ‘‘রাত হলে মাঝে মধ্যেই গুলি-বোমার শব্দে আঁতকে ওঠে শিশুরা। তবে বড়দের ও সব গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে।’’
হাড়োয়ার গোবেড়িয়া, গোপালপুর এলাকায় ২৫-৩০ হাজার বিঘা জমি নিয়ে মেছোভেড়ি। এর মধ্যে খাস জমি প্রায় ২০ হাজার বিঘা। তেরোটি পঞ্চায়েত নিয়ে হাড়োয়া বিধানসভা। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শাসন, কর্তিপুর ১-২, দাদাপুর, গোপালপুর ২, ফলতি বেলেঘাটা এবং চাঁপাতলার মতো এলাকায় আগে সিপিএমের দাপাদাপি ছিল। ভোট দিতে পারতেন না অনেকে, অভিযোগ উঠত হামেশাই। তৃণমূলের আমলেও বদলাল না বলে অভিযোগ। এলাকার খাস জমির মালিকদের অধিকাংশই গত কয়েক বছর ধরে তাঁদের প্রাপ্য টাকা না পাওয়ায় ক্ষোভ বেড়েছে মানুষের মনে।
আবু বক্কর গাজি, স্বপন বিশ্বাস, রতন মুন্ডাদের কথায়, গোপালপুর ১ ও ২ নম্বর সংযোগকারী ঘাগরামারি খালের উপরে কংক্রিটের সেতু করার কথা ছিল। সেখানে সরু বাঁশের সাঁকোর উপরে ভরসা করে কয়েকশো মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে হয়। বর্ষায় বিপদ বাড়ে। কংক্রিয়ের সেতু তৈরিতে বিধায়ককের আশ্বাস পাওয়া গেলেও কাজ শুরু হয়নি। গোপালপুর ২ পঞ্চায়েত এবং হাড়োয়া ও খাসবালান্ডা পঞ্চায়েত-সহ বিভিন্ন জায়গায় আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের কষ্টে আজও এলাকাবাসীকে ভূগতে হচ্ছে। দ্রুততার সঙ্গে পানীয় জল সরবরাহের আশ্বাস মিললেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শাসন, গোপালপুর ১ ও ২ পঞ্চায়েত সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় দশ হাজার বিঘা খাস জমির মালিকদের টাকা না দিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলেও মানুষের অভিযোগ। বিধায়কের তহবিলের অর্থে বেশ কিছু হাইমাস্ট আলো লাগানো হলেও দেখভালের অভাবে তার বড় অংশ বেহাল। গোপালপুর ১ ও ২ নম্বর পঞ্চায়েত এবং শাসন পঞ্চায়েত এলাকার অনেক রাস্তা এখনও ভাঙাচোরা। হাসপাতালের অবস্থাও ভাল নয়। ‘রেফার’ রোগে ভোগে হাসপাতাল। হাড়োয়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক তথা সিপিএম নেতা অধীর মল্লিক বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে এলাকায় উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনও কাজ হয়নি। শুধু আখের গুছিয়েছেন বিধায়ক। এখানে মানুষের হাতে কোনও কাজ নেই।’’ তিনি জানান, এলাকায় বেড়েছে দুষ্কৃতীদের উপদ্রব। মাঝে মধ্যেই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গন্ডগোল বাধে বলে তাঁর অভিযোগ। পানীয় জলের সমস্যাও আগের থেকে বেড়েছে জানালেন তিনি। বিজেপি নেতা রাজেন্দ্র সাহা বলেন, ‘‘আগে সাইকেল চড়ে যাওয়া নেতারা এখন বড় বড় গাড়ি চড়ে ঘোরেন। কাটমানি, আমপানের টাকায় নেতাদের পকেট ভরেছে।’’ রাজেন্দ্রের কথায়, ‘‘মাছের এলাকা এটা। অথচ, হিমঘর তৈরি করা হয় না।’’
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিদায়ী বিধায়ক তথা এ বারের তৃণমূলের প্রার্থী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘কিছু মানুষ আছেন, তাঁরা উন্নয়ন দেখতে পান না। প্রতিশ্রুতি পালনের সঙ্গে সঙ্গে স্কুল এবং মাদ্রাসার উন্নয়নে আর্থিক সাহায্য করেছি। পানীয় জলের নলকূপ করা হয়েছে। তিনটি সেতু কংক্রিটের করার জন্য আর্থিক অনুমোদন আদায় করেছি। নির্বাচনের পরে কাজ শুরু হবে।’’ তিনি জানান, চারটি অ্যাম্বুল্যান্স দিয়েছি। উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্থানের উন্নতিতে অর্থ সাহায্য করা হয়েছে। বেশ কিছু কংক্রিট ও পিচ রাস্তা করার পাশাপাশি রাস্তায় হাইমাস আলো লাগানো হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy