এমন পোস্টারেই ছেয়ে গিয়েছে জামালপুর। —নিজস্ব চিত্র।
ভোটের আগে বিজেপি-কে ‘বহিরাগত’ বলে আক্রমণ শানিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু দলের অন্দরেই বহিরাগত বনাম ভূমিপুত্র দ্বন্দ্ব অব্যাহত। সেই তালিকায় নয়া সংযোজন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর। বহিরাগত কাউকে প্রার্থী করলে পরিণাম ভয়ঙ্কর হবে বলে পোস্টার পড়ল সেখানে। তাতে বিড়ম্বনায় পড়েছে জোড়াফুল শিবির শিবির।
২৭ মার্চ থেকে রাজ্যে নির্বাচন শুরু হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ২৯৪টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি তৃণমূল। তার আগে বুধবার সকালে ‘বহিরাগত নয় ভূমিপুত্র’ পোস্টারে ছেয়ে যায় জামালপুর বাজার, বাসস্ট্যাণ্ড, হালাড়া-সহ বেশ কিছু জায়গায়। তাতে কোথাও লেখা হয়, ‘পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর বিধানসভার নাগরিকরা ডিটেনশন ক্যাম্পের বাসিন্দা নন। এখনও সময় আছে। প্রার্থীর নাম ঘোষণার আগে তৃণমূলের নেতারা সাবধান হোন। এ বারও যদি বহিরাগত কাউকে জামালপুর বিধানসভায় প্রার্থী করা হয়, পরিণাম ভয়ংকর হবে। ভোটের দিন সাপ-লুডো খেলা খেলে দেবেন জামালপুরের জনগণ’।
আবার এমন ফ্লেক্সও চোখে পড়ে, যেখানে লেখায়, ‘জামালপুরবাসীর একটাই রায়—জামালপুর বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেস থেকে ভূমিপুত্র প্রার্থী চাই’। সবক’টি ফ্লেক্সের নীচেই লেখা হয় ‘সৌজন্যেঃ জামালপুর বাসী’। মঙ্গলবার দিনভর জামালপুরে এই ধরনের ফ্লেক্স দেখা যায়নি। বুধবার তৃণমূল প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করবে বলে জানা গিয়েছিল। তাই গভীর রাতে সেগুলি টাঙানো হয় বলে অনুমান স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের। এর পিছনে বিজেপি-র হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ।
এলাকার প্রবীণ মানুষদের একাংশ যদিও এই ঘটনায় অবাক হচ্ছেন না। তাঁরা জানিয়েছেন, কংগ্রেস জমানা থেকেই এমন চলছে। আজ পর্যন্ত স্থানীয় কাউকে জামালপুর বিধানসভায় প্রার্থী করা হয়নি। কংগ্রেসের আমলে বর্ধমান নিবাসী পুরঞ্জয় প্রামাণিক জামাপুরের প্রার্থী হতেন। তৃণমূলও সেই একই ধারা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১১ সালের পর ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনেও বর্ধমানের প্রামাণিক পরিবারে উজ্জ্বল প্রামাণিক জামালপুর বিধানসভায় তৃণমূল প্রাথী হিসেবে ভোটে লড়েন। তবে প্রথম বার জিতলেও, দ্বিতীয়বার হেরে যান তিনি। শুধুমাত্র বামেরাই জামালপুরবাসীর সেন্টিমেন্টকে গুরুত্ব দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাকে প্রার্থী করেন। জামালপুরের সেলিমাবাদের বাসিন্দা, বাম নেতা সুনীল সাঁতরা বহু বার সেখান থেকে ভোটে লড়ে জয়ী হয়েছেন। এখন সেই জয়ের ধারা অব্যাহত রাখছেন জামালপুরের নবগ্রামের বাম নেতা সমর হাজরা। জামালপুরের বাসিন্দা হওয়াটাই তাঁদের জয়ের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন স্থানীয়দের একাংশ।
তবে পোস্টার ঝোলানো নিয়ে জামালপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শ্রীমন্ত রায় বলেন ,‘‘ব্যানার ও ফ্লেক্সে বহিরাগত তত্ত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এটা বিজেপির-ই কাজ। রাজ্যের ২৯৪টি আসনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই প্রার্থী ধরে নিয়ে ভোটে লড়ব আমরা। আমাদের স্লোগান বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়।’’ শ্রীমন্ত-র দাবি, ‘‘বহিরাগতদের নিয়ে এসে বিজেপি বাংলা জয়ের স্বপ্ন দেখলেও, তৃণমূলের এই শ্লোগানে কাত হয়ে পড়েছে তারা। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে জামালপুরবাসী সেজে আসলে বিজেপির লোকজনই বহিরাগত তত্ত্ব তুলে ধরে ক্ষোভ ছড়াতে চাইছে। তবে এ সব করে লাভ হবে না।’’
শ্রীমন্তের অভিযোগ যদিও উড়িয়ে দিয়েছেন জামালপুর বিধানসভার বিজেপি-র আহ্বায়ক জিতেন ডকাল। তিনি বলেন, ‘‘দেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও মোদীজি, অমিত শাহজি এবং নড্ডাজি-কে বহিরাগত বলছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। অথচ তৃণমূলের লোকজনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া ব্যানার ও ফ্লেক্স ঝুলিয়ে দাবি করছেন বহিরাগতকে’প্রার্থী করা যাবে না। বহিরাগত তত্ত্বে আসলে তৃণমূলই যে কুপোকাত হয়ে গিয়েছে, এতেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy