হুগলির সাহাগঞ্জের সভায় আক্রমণাত্মক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র
২৯৪ কেন্দ্রে তিনিই প্রার্থী। আগের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে এমনটাই বলেছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বারের নির্বাচনের আগে বুধবার সেই তত্ত্বকেই আরও জোরালো ভাবে তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, বিজেপি একমাত্র তাঁকেই ভয় পায়। ডানলপ ময়দানে দাঁড়িয়ে ডানলপ কারখানা চালু না হওয়ার জন্য কেন্দ্রকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। একই মাঠে দু’দিন আগে সভা করেছেন প্রদানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি মমতার বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছিলেন। তার জবাবে বুধবার তাঁকে ‘দাঙ্গাবাজ’ বলেছেন মমতা। বিদ্ধ করেছেন দুর্নীতির অভিযোগে। তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে ‘খেলা হবে’ স্লোগানও।
২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের প্রচারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘প্রার্থী দেখবেন না, আমাকে ভোট দিন।’’ সেই জাদুতে ‘কাজ’ হয়েছিল। এ বার নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়েও নিজেকেই বাজি রেখেছেন তৃণমূল নেত্রী। গত ১০ ফেব্রুয়ারি উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে সেই ‘কৌশল’ প্রথম সামনে আনেন মমতা। তার পর বিভিন্ন সভার মতো বুধবার সরাসরি সেই ভাষায় না বললেও তিনিই যে কাণ্ডারি সে কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন বারে বারে। মমতা বলেছেন, ‘‘খেলা হবে। এক দিকে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি থাকবে। আর এক দিকে থাকবে তৃণমূল। আমি থাকব গোলরক্ষক, দেখি ক’টা গোলে মারতে পারেন। একটাও পারবেন না। সব বারপোস্টের উপর দিয়ে যাবে।’’
বহু বছর ধরে ডানলপ কারখানা বন্ধ। সোমবারই সেই ডানলপে সভা করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু কারখানা খোলার কার্যত কোনও প্রতিশ্রুতি শোনা যায়নি মোদীর মুখে। সেই ডানলপ, জেসপ চালু না হওয়ার জন্য কেন্দ্রকে দূষে মমতা বলেন, ‘‘এ বার যদি আমি বলি, ২০১৬ সালে আমরা পশ্চিমবঙ্গ সরকার বললাম, আমরা ডানলপ অধিগ্রহণ করতে দাও। আমরা জেসপ চালাতে চাই। ২০১৬ সালে চিঠি দিয়েছি। বিধানসভায় পাশ করিয়েছি। এটা ২০২১ সাল। পাঁচ বছর হয়ে গেল, ডানলপ আমাদের অধিগ্রহণ করতে দিল না।’’
ডানলপের কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মমতা আরও বলেন, ‘‘কর্মীগুলো খেতে পাবে না বলে আমরা ১০ হাজার টাকা করে এক্সগ্রেসিয়া দিই। তাই কর্মীরা আজও বেঁচে আছে। এই ডানলপে মিটিং করার আগে আপনার বলা উচিত ছিল, ৫ বছর ধরে কেন অধিগ্রহণের অনুমতি দেননি। নিজে করবেন না, আমাকেও করতে দেননি।’’ ডানলপ কর্ণধারের সঙ্গে বিজেপি-র সখ্যের প্রশ্ন তুলে মমতার তোপ, ‘‘পবন রুইয়ার শরৎ বোস রোডের বাড়িতে থাকেন বিজেপি নেতারা।’’
সোমবার মোদী তৃণমূল নেতা-কর্মীদের তোলাবাজ বলে আক্রমণ করেন। জবাবে মমতা বলেন, ‘‘কথায় কথায় উনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস তোলাবাজ। আপনি কী? আপনি তো সবচেয়ে বড় দাঙ্গাবাজ। ধান্দাবাজ। যাঁরা ৫ টাকা ১০ টাকা তোলে, তাদের বলে তোলাবাজ। আর আপনারা যাঁরা গোটা দেশ বিক্রি করে দেন, কারখানা বিক্রি করে দেন, কোটি কোটি টাকা কাটমানি খান, তাঁরা কী? তাঁরা কি র্যাটমানি? গরিব লোকেরা নিলে হয় কাটমানি। আর আপনারা খেলে হয় র্যাটমানি।’’
বাম জমানায় খানাকুল, গোঘাট, আরামবাগে অত্যাচারের প্রসঙ্গ টেনে মমতা এ দিন বিজেপি, বাম, কংগ্রেসকে এক বন্ধনীতে রেখে বলেন, ‘‘বাম, কংগ্রেস, বিজেপি এক হয়েছে। আমাদের হারাবে।’’ ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে হুগলিতে বেশ কয়েকটি বিধানসভা আসনে প্রত্যাশামতো ফল করতে পারেনি তৃণমূল। সেই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘গত বার আমরা কিছু ভুল করেছিলাম। আমরা সেগুলো শুধরে নেব। কিন্তু আপনারা আমাদের ফেরাবেন না। তা হলে বাংলা অন্যদের হাতে চলে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy