ভোটপ্রচারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গোপীবল্লভপুরের পর লালগড়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোপীবল্লভপুরের সভায় একাধিক ইস্যুতে বিজেপি-কে তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘আগে সিপিএম আমাকে মারত, এখন বিজেপি মারছে।’’
মমতার বক্তব্য: ‘‘আমাদের প্রার্থী একদিকে বীরবাহা হাঁসদা। অভিনেত্রী। আদিবাসী সম্প্রদায়ের কৃতী মেয়ে। আরেকজন বিনপুরের দেবনাথ। এঁদের সমর্থনে, আবেদন করতে এসেছি।’’
‘‘লালগড় আমার কাছে নতুন জায়গা নয়। যখন লালগড়ে আসতে ভয় পেত তখন আমি লালগড় থেকে নেতাই, ঝাড়গ্রাম থেকে গোপীবল্লভপুর থেকে জামবনি— সর্বত্র ঘুরে বেড়িয়েছি। ’’
‘‘ছত্রধর মাহাতোকে আপনারা জানেন। সিপিএমের সময়ে ওকে একটা মামলায় জেলে আটকে রাখা হয়। গত ১০ বছর জেল খেটেছে ও। আমি ছত্রধরের সঙ্গে এসেছিলাম গ্রামে। একজন বিধবা মহিলা, চিন্তামণির কান কেটে নেওয়া হয়েছিল। তিন জন মারা গিয়েছিলেন। ১৫ জন জখমও হয়েছিলেন। ছত্রধরের সঙ্গে আমি ওই গ্রামে গিয়েছিলাম।অন্যরা কেউ ঢুকতে পারেনি। সেদিন থেকে আপনাদের সঙ্গে আমার পরিচয়।’’
‘‘যখন মাওবাদী আন্দোলন চলছে, জঙ্গলমহল কাঁপছে, প্রতিবছর প্রায় ৪০০ লোক খুন হচ্ছিল সেই সময় আমি মহাশ্বেতা দিকে নিয়ে এসেছিলাম এখানে মিটিং করতে।’’
‘‘মিটিং করে ফেরার পথে ঝিটকার জঙ্গলে আমার গাড়ি প্রায় ৪ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল। তারাই এখন বিজেপি করছে।’’
‘‘৯ জন খুন হয়েছিল নেতাইয়ে। আমি এসেছিলাম। পরিবার পরিজনদের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। তাই আমার কাছে ঝাড়গ্রাম, নেতাই, লালগড় নতুন নয়।’’
গোপীবল্লভপুরে যে বামপন্থীরা আছেন যাঁরা বিজেপি-র বিরুদ্ধে সত্যিই লড়তে চান, তাঁদের মমতার অনুরোধ, ‘‘সিপিএমকে ভোট দিয়ে ভোট নষ্ট করবেন না। তৃণমূলকে ভোট দিন। আসুন ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করি।’’
২০১৯এর লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্র থেকে বিজেপি জিতেছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা বললেন, ‘‘‘বিজেপি জেতার পর দু’বছর কেটে গিয়েছে। ওরা কি কিছু করছে?’’
মমতার প্রশ্ন, ‘‘ওরা কি চাকরি দিয়েছে, হাসপাতাল করেছে? কলেজ করেছে? স্কুল করেছে? কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো প্রকল্প দিয়েছে? কিন্তু আমি আসার পর ৩২ হাজার ছেলেমেয়েকে হোমগার্ডের চাকরি দিয়েছিলাম। তাদের অনেককেই এখন জুনিয়র কনস্টেবলের পদে উন্নীত করা হয়েছে।’’
‘‘অনেক সিভিকদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। প্যারা টিচার নিয়োগ করা হয়েছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছি। স্টেডিয়াম দিয়েছি। আগামীদিনে আরও করব। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল হবে। যাতে এখানকার ছেলেমেয়েরা ভালভাবে পড়াশোনা করতে পারে।’’
‘‘একটা পায়ে কাজ করা যায় না। তবু আমি যন্ত্রণা নিয়েও এসেছি। কারণ এখানরকার মা-বোনেদের পা আমার আরও একটা পায়ের কাজ করবে। ’’
‘‘আগেও ওরা মেরেছিল। মত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলাম। এবার পায়েও আঘাত করল। তবে সেই চোটের জন্য আমার ততটা কষ্ট হচ্ছে না। যতটা আমার মা-বোনেদের দুর্দশা দেখে কষ্ট হচ্ছে। তাঁদের ভাল থাকতে দেখলেই আমি ভাল থাকি।’’
তৃণমূল কর্মীদের প্রতি মমতা নির্দেশ, ‘‘আগে যা কাজ করতেন তার চারগুণ বেশি কাজ করতে হবে।’’
‘‘এটা একটা বড় রাজনৈতিক যুদ্ধ। বিজেপি-কে যদি রাজ্য থেকে দেশ থেকে সরাতে হয় তবে বাংলা থেকে লড়াইয়ের ডাক দিতে হবে।’’
ঝাড়গ্রামবাসীর প্রতি মমতার প্রশ্ন , ‘‘বীরবাহা হাঁসদার মতো এত ভাল প্রার্থী কোথা থেকে পাবেন? পুরস্কার প্রাপ্ত মেয়ে। অন্যদিকে দেবনাথ কমবয়সি। আমি চাই ছোটরাও বড়দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করুক।’’
ঝাড়গ্রামের মানুষকে মমতার প্রশ্ন, ‘‘ঝাড়গ্রাম জেলা তৈরি করল কে? আমি যদি বলি আমি করে দিয়েছি। অনেকদিনের দাবি ছিল নতুন জেলার। সেই জেলা আমি তৈরি করে দিয়েছ।’’
বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। মেডিক্যাল কলেজ বলেছিলেন, তা-ও করা হচ্ছে। । স্টেডিয়াম চেয়েছিলেন। স্টেডািয়াম করে দেওয়া হয়েছে। কলেজ চেয়েছিলেন। চারটি কলেজ বানানো হয়েছে। যা চেয়েছিলেন সব দেওয়া হয়েছে।
মমতা জানতে চাইলেন, ‘‘আপনারা রেশন পান তো?’’ মমতার ঘোষণা, ‘‘তৃণমূলকে ভোট দিলে আর রেশন দোকানে যেতে হবে না। দুয়ারে সরকারের মাধ্যমে বাড়়ির দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে যাবে রেশন।’’
‘‘শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক কিছু করা হয়েছে। আদিবাসী ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।’’
‘‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের পাঁচলক্ষ টাকা ভেলোরেও ব্যবহার করা যাবে। গোটা ভারতে ব্যবহার করতে পারবেন।’’ জানালেন মমতা।
‘‘বছরে চার মাস করে দুয়ারে সরকার করব আমরা’’ ঘোষণা করলেন মমতা।
‘‘আগামী মে মাসের পর ১৮ বছর বয়সের পর সব বিধবাদের আমরা ১০০০ টাকা করে ভাতা দেব।’’
সব ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে এই ভাতা দেওয়া হবে।
ক্লাবে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া প্রসঙ্গে মমতা বললেন, ‘‘বিজেপি-ও এখন টাকা ছড়াবে। আমি কিছু গদ্দারকে জানি যারা টাকা দেখে বিজেপি-তে গিয়েছে। তারা টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করবে। যদি টাকা দেয় তবে মনে রাখবেন, ওই টাকা আপনাদেরই টাকা। জনগণের টাকা। বিজেপি-র টাকা নয়। জনতার থেকে নেওয়া টাকা।’’
‘‘টাকা দিলেও ভোট দেবেন না। তার কারণ আপনাকে আপনার ধর্ম করতে দেওয়া হবে না। আপনাকে বলতে হবে জয় শ্রী রাম। মারাংবুরু নয়।’’
‘‘আমার কাছে খবর আছে, ভোটের আগে বাইরে থেকে গুণ্ডারা আসবে। আপনাদের ভোট লুঠ করে নিয়ে যাবে বলে। তবে আজ যদি ভোট লুঠ করে, জানবেন কাল আপনার বাড়ি লুঠ করবে। আপনার জমি জায়গা লুঠ করে নিয়ে চলে যাবে।’’
কেরোসিনের দাম বাড়া নিয়ে কেন্দ্রকে কটাক্ষ মমতার। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘বিজেপি এলে কেরোসিন দেবে না, খাদ্য দেবে না, শিক্ষা দেবে না। দলিত মহিলাদের উপর অত্যাচার করবে। উত্তরপ্রদেশে কী ভয়াবহ সব ঘটনা ঘটেছে দেখেছেন?’’
বিজেপি-কে দূরাচারী, দুঃশাসন, দুর্যোধন, দাঙ্গাকারী, ধান্দাবাজ বলে কটাক্ষ মমতার।
‘‘বিজেপি চরিত্রহরণের কারখানা। কতগুলো গদ্দার, মীরজাফর সিপিএম আর তৃণমূল থেকে গিয়ে যোগ দিয়েছে ওদের দলে। সিপিএমের হার্মাদ ছিল, এখন তারাই বিজেপি-র ওস্তাদ হয়েছে।’’
‘‘সিপিএমের সময় লালগড় নেতাই যা ছিল আর আজ যা হয়েছে, তার মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। আজ যে লালগড় ভাল আছে, নেতাই ভাল আছে, তাতে আমি খুশি।’’
‘‘তিনটি মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল করে দিয়েছি। ঝাড়গ্রামের জন্য সব কিছু করে দিয়েছি। আর কী কী করব?’’
মমতা বললেন, ‘‘বাইরে থেকে এক হাজার নেতা মন্ত্রী নিয়ে এসেছে বিজেপি। আম্ফান হলে এঁদের টিকি দেখা যায় না। আর নির্বাচনের সময় এসেছে টাকা বিলোতে। তাই ওদের বিদায় দিন। মানুষকে বাঁচতে দিন।’’
‘‘মনে রাখবেন এটা দিল্লির ভোট নয়। আমাকে এখানে চাইলে আমার প্রার্থীদের ভোট দিন। প্রার্থী জিতলে তবেই সরকার গড়তে পারব।’’
‘‘এই সরকার থাকলে নানা প্রকল্পে টাকা পাবেন এমনকী মৃত্যুর পরও পরিবার ২০০০ টাকা করে পাবে।’’
‘‘৪০ শতাংশ চাকরি বাড়িয়েছি আমরা বাংলায়। দারিদ্রও কমিয়েছি আমরা।’’
১০ লক্ষ মহিলাকে নিয়ে আবার স্বনির্ভর সংগঠন গড়ার প্রতিশ্রুতি মমতার। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘যাঁরা আছেন তাঁরা তো থাকবেনই। আরও ১০ লক্ষ মহিলা তার সঙ্গে যুক্ত হবেন। এই গোষ্ঠীর জন্য এবারের বাজেটে ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তা-ও আপনারা পাবেন।’’
‘‘বল দিয়ে বোল্ড আউট করে দিন বিজেপি-কে।’’ বললেন মমতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy