Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
TMC

শুক্রবার সকাল থেকে কালীঘাটে মমতার দফতরে মহাযজ্ঞ, পৌরোহিত্যে অভিষেক

অনেকে বলছেন, ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার জন্যই ওই যজ্ঞ। তবে সে একান্তই জল্পনা। তবে কালীঘাট সূত্রের খবর, শুক্রবারের যজ্ঞ আগে থেকেই পরিকল্পিত।

নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৩:৪০
Share: Save:

বিকেলে বিধানসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে চলেছে নির্বাচন কমিশন। তার অব্যবহিত আগে মহাযজ্ঞের আয়োজন কালীঘাটে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি লাগোয়া তৃণমূলের কার্যালয়ে শুক্রবার যজ্ঞ চলছে। সকাল থেকে সেই যজ্ঞে বসে রয়েছেন যুব তৃণমূলের সভাপতি, সাংসদ তথা দলের অঘোষিত দু’নম্বর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। অভিষেককে পাশে নিয়ে যজ্ঞ সম্পাদন করছেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সেবায়েত জগন্নাথ দয়িতাপতি।

অনেকে বলছেন, ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার জন্যই ওই যজ্ঞ। এ নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষও করেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘পুরীতে গিয়ে মানুষ যজ্ঞ করে। আজ পুরীকে উড়িয়ে এনে কলকাতায় কালীঘাটের বাড়িতে যজ্ঞ করতে হচ্ছে। তহলে বুঝতে পারছেন হাল কী? হাল এতটা খারাপ যে গঙ্গার পূর্ব থেকে পশ্চিমে গিয়েও সমাধন হয়নি। এখন আবার পুরীর অধিপতিকে কলকাতায় নিয়ে এসে যজ্ঞ করা হচ্ছে। কখনও সরস্বতী বন্দনা হচ্ছে, কখনও পুজোর প্রসাদ বিতরণ হচ্ছে, কখনও দয়িতাপতি হচ্ছে, কখনও আবার সেই একই মুখে ইফতার পার্টিতে অংশ নেওয়া হচ্ছে, ইনশাল্লাহ বলা বলা হচ্ছে। এ সব নাটকবাজি করে লাভ কী? মানুষ এই ছবি দেখতে চান না।’’

তবে ভোটের দিন ঘোষণার সঙ্গে যজ্ঞের কোনও সংযোগ নেই বলে দাবি তৃণমূলের। কালীঘাট সূত্রের খবর, শুক্রবারের যজ্ঞ আগে থেকেই পরিকল্পিত। তার আয়োজনও শুরু হয়েছে কয়েকদিন আগে থেকেই। নির্বাচন কমিশন যে শুক্রবারেই ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করবে, তা আগে থেকে কারওরই জানা ছিল না। বরং রাজ্যের রাজনৈতিক মহল ভাবছিল, মার্চের প্রথম সপ্তাহে ভোটের দিন ঘোষণা হবে। ফলে যজ্ঞ এবং ভোটের দিন ঘোষণার দিন মিলে যাওয়া নেহাতই এক সমাপতন। এমনিতে কালীর উপাসক মুখ্যমন্ত্রী মমতা। প্রতি বছর নিজের বাড়িতে নিষ্ঠাভরে কালীপুজো করেন তিনি। আবার গত ২৫ বছর ধরে প্রতি শুক্রবার সন্তোষী মাতার ব্রত পালন এবং পুজোও করেন তিনি। বছরে দু’বার পুরীর মন্দির থেকে দয়িতাপতি সেবায়েত এনে জগন্নাথের নামে যজ্ঞ করেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজে সেই যজ্ঞে হাজির থাকেন। তবে শুক্রবার সকালে যজ্ঞের আসনে মাস্ক পরিহিত অভিষেককেই দেখা গেল।

যজ্ঞ শেষ হওয়ার পর বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ দলের শীর্ষনেতাদের নিয়ে ওই দফতরেই জরুরি বৈঠকে বসার কথা মমতার। এমনিতে প্রতি শুক্রবারেই তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠক বসে। সেখানে মমতা-সহ অন্যান্য শীর্ষনেতা থাকেন। কালীঘাটের বাড়িতেই সেই বৈঠক হয়। তার কয়েক ঘণ্টা আগে এই যজ্ঞ। সাধারণত নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণা হওয়ার পরই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত করে রাজনৈতিক দলগুলি। ফলে মমতা যখন বৈঠকে বসবেন, তখন যজ্ঞ যেমন সমাপ্ত হবে, তেমনই ঘোষিত হয়ে যাবে রাজ্যে ভোটের দিনলিপিও। ওই বৈঠকে দলের প্রার্থিতালিকা নিয়েও কথা হওয়ার কথা। ভোটের প্রস্তুতি এবং সাফল্যের কারণেই ওই যজ্ঞ কি না, তা জানা যায়নি।

তবে যজ্ঞে অভিষেকের উপস্থিতি নজর কেড়েছে সকলের। কারণ ২০২১-এ নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে শুরু থেকেই বিজেপি-র নিশানায় রয়েছেন অভিষেক। এমনকি, রাজ্যে দলের হয়ে প্রচারে আসা বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও যত না মমতাকে আক্রমণ করেছেন, তার চেয়ে বেশি অভিষেকের কথাই শোনা গিয়েছ তাঁদের মুখে। নাম না করলেও তাঁকে ‘ভাইপো’ বলে আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি নেতারা। তৃণমূল ছেড়ে পদ্মশিবিরে নাম লেখানো নেতারাও কোথাও ‘তোলাবাজ’, কোথাও ‘বালিচোর’, কোথাও আবার ‘কয়লাচোর’ বলে আক্রমণ করেছেন তাঁকে। এ নিয়ে সম্প্রতি একটি সভায় মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে মমতাকেও। তাঁর ভাইপো বলেই অভিষেককে এত আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ঘটনাচক্রে, চলতি সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিবিআই) অভিষেকের স্ত্রী রুজিরার সঙ্গে কথা বলেছে। তার সামান্য আগে সেখানে গিয়েছিলেন মমতা। সিবিআই সূত্রের দাবি, রুজিরার সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীরা ‘সন্তুষ্ট’ হননি। এই আবহে নির্বাচনের আগে মমতার বাড়ির লাগোয়া দফতরে যজ্ঞশালায় অভিষেকের উপস্থিতি নজর কাড়ছে সকলের। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, এ যজ্ঞের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির কোনও সম্পর্ক নেই। এই যজ্ঞ হচ্ছে বরাবরের মতোই নির্ঘণ্ট মেনে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy