সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র
নিজে আগ্রহী নন জানিয়ে দিলেও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে চর্চা যেন থামতেই চাইছে না। বৃহস্পতিবার সারা দিন ধরে নানা মহলে আলোচনা চলতেই থাকল যে, তিনি সত্যিই কি আর বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন না? পাকাপাকি ভাবেই কি তিনি রাজনৈতিক পিচে ব্যাট হাতে নামার ব্যাপারে ‘না’ বলে দিয়েছেন? আগামী ৭ মার্চ, ব্রিগেডে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভায় কি সত্যিই সৌরভকে দেখা যাবে না?
রাজ্য এবং দেশের রাজনীতিতে তো বটেই এমনকি, ভারতীয় ক্রিকেট মহল থেকেও অনেকে কলকাতায় পরিচিতদের ফোন করতে থাকেন সৌরভের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চেয়ে। অনেকের মনেই আগ্রহ ছিল ‘দাদা’র সম্ভাব্য নতুন ইনিংস নিয়ে।
বীরেন্দ্র সহবাগের মতো কেউ কেউ সৌরভের অধীনে খেলার সময়ে পূর্বাভাস করেছিলেন, ‘‘দাদা এক দিন রাজনীতিতে যোগ দেবে আর দারুণ করবে।’’ সেই পূর্বাভাস সত্যি হওয়ার খুব কাছাকাছি এসেও সম্ভবত মিলিয়ে যাওয়ার পথে। সহবাগেরা তাই আঙুল কামড়াতে পারেন। আবার একটা পক্ষ মনে করে, রাজনীতির ময়দানে অন্য প্যাঁচ-পয়জার চলে। ক্রিকেটের রণনীতি কষার সঙ্গে তার তুলনা চলতে পারে না। সৌরভ এ সবের থেকে দূরে থাকলেই ঠিক করবেন।
সৌরভ যে এই মুহূর্তে রাজনীতিতে আসতে চাইছেন না, সেই খবরকে আরও উস্কে দিয়েছেন বামফ্রন্টের প্রাক্তন নেতা অশোক ভট্টাচার্য। সৌরভ-ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন মন্ত্রী এ দিন ফেসবুকে লেখেন যে, সৌরভের সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়েছে এবং প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক তাঁকেও জানিয়ে দিয়েছেন, এখন রাজনীতিতে আসতে আগ্রহী নন।
স্বয়ং সৌরভ এত সব কৌতূহলের বাতাবরণ থেকে অনেক দূরে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে আনন্দবাজারে তাঁর বিজেপি হাইকম্যান্ডকে ‘না’ বলে দেওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে সারা দিন ধরে নানা সংবাদমাধ্যম তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে গিয়েছে। তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তিনি কারও ফোনেই সাড়া দেননি। তবে বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, ‘না’-এর ‘স্টান্স’ থেকে কোনও নড়চড় বৃহস্পতিবারেও হয়নি। এবং, খুব নাটকীয়, খুব অভাবনীয় কোনও পটপরিবর্তন না-হলে সৌরভ তাঁর সিদ্ধান্ত আর পাল্টাবেন না বলেই ওয়াকিবহাল মহলের মত।
প্রথম বার হাসপাতাল থেকে স্টেন্ট বসিয়ে বাড়ি ফেরার দিনে সৌরভ সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘‘দ্রুতই আমি আবার উড়তে চাই।’’ সে দিন রাজনৈতিক মহল মনে করেছিল, বোধ হয় নতুন আকাশে ওড়ার দিকে ইঙ্গিত করলেন। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, ক্রিকেটের বৃত্ত ছাড়িয়ে রাজনীতির আকাশে ওড়ার কথা ভাবার জায়গায় তিনি খুব একটা নেই। হঠাৎ করে আসা হদ্রোগের অসুখ নতুন অভিযানে নামার ব্যাপারে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিয়ম বাঁধা জীবনের মধ্যে এখন থাকতে হচ্ছে তাঁকে। ডাক্তারি মতে চলা ডায়েটের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। সকাল-বিকাল হাঁটতে হচ্ছে। বেহালার বাড়িতেই থাকা অফিসে বসা শুরু করলেও খুব একটা বাইরে বেরোচ্ছেন না। আমদাবাদে নতুন স্টেডিয়ামের উদ্বোধনেও যাননি। সেখানে অমিত শাহ ও পুত্র জয় শাহ ছিলেন মূল আয়োজক। তবু ছিলেন না সৌরভ।
বিধানসভা ভোটের আগে এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে রাজনীতির পিচে ব্যাট করতে নামলে দৈনন্দিন শৃঙ্খলা অটুট রাখা তাঁর পক্ষে কঠিন হবে। যে ভাবে বাঁ হাতি স্পিনারকে ক্রিজ ছেড়ে অনায়াসে বেরিয়ে এসে ছক্কা মারতেন, রাজনীতির পিচে একই ভঙ্গিতে স্টেপ আউট করার মতো জায়গায় এই মুহূর্তে তিনি নেই।
আবার কারও কারও মনে হচ্ছে, বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বও কি বুধবারের ‘না’ শুনেই হাল ছেড়ে দেবেন? তাঁরাও কি ফের বোঝানোর চেষ্টা করবেন না দাদাকে? কারও কারও মত, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়ার পরেও ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর ব্রিগেড সমাবেশে সৌরভকে হাজির করানোর চেষ্টা জারি থাকলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাতেও কি মত বদল করানো যাবে সৌরভকে? বৃহস্পতিবার রাতেও এই প্রশ্নের উত্তর ‘না’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy