করোনা-বিধি উড়িয়ে তৃণমূলের বিজয়-উৎসব। রবিবার পানিহাটিতে। ছবি: সুমন বল্লভ।
অষ্ট পর্বের বঙ্গ ভোটের শেষ লগ্নে এসে কোভিড বিধি নিয়ে কঠোর হয়েছিল নির্বাচন কমিশন। পথেঘাটে ভিড় ঠেকাতে দোকান-বাজারে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু কোভিড বিধি কার্যত উড়িয়ে দিল ভোটের ফল! জয়ের খবর মিলতেই কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে দলে দলে পথে নামেন তৃণমূল সমর্থকেরা। তাঁদের বেশির ভাগের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। বরং উল্লাসে আবির খেলতে দেখা গিয়েছে তাঁদের।
রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি লিখে কমিশন নির্দেশ দিয়েছে, যে-সব এলাকায় এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে, সেখানকার থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারদের সাসপেন্ড করে বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কমিশনের মুখপাত্র শেফালি শরণ রবিবার টুইট করে জানান, জয়ের ইঙ্গিত পেয়ে জমায়েত করে বিজয়োৎসবের যে-রিপোর্ট আসছে, তাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে কমিশন। প্রতিটি ঘটনায় এফআইআর করতে হবে বলে কমিশন পাঁচ রাজ্যের (পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, তামিলনাড়ু, পুদুচেরি ও অসম) প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট থানার ওসি-দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণের নির্দেশ বাস্তবায়িত করে কমিশনের কাছে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে।
রাজ্যে দৈনিক করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা যখন কুড়ি হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে, সেই সময়ে এই বিজয়োল্লাস কী ভয়ানক বিপদ ডেকে আনতে পারে, তা ভেবে শিউরে উঠেছেন অনেকেই। বস্তুত, বিজয় মিছিল নিষিদ্ধ করে দিয়েছে কমিশন। সেই নিষেধাজ্ঞাও আমল পায়নি এ দিন।
তৃণমূলের জয়ের ইঙ্গিত মেলার কিছু ক্ষণের মধ্যেই দূরত্ব-বিধি শিকেয় তুলে কালীঘাটে ভিড় জমাতে শুরু করেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। আবির খেলা, বক্স বাজিয়ে ‘খেলা হবে’ গানের তালে নাচ, দল বেঁধে সেলফি তোলা— সবই চলে অবাধে। কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় মোটরবাইকে চেপে পতাকা নিয়ে চক্কর কাটতে শুরু করেন সমর্থকেরা। তাঁদের অনেকের মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি। মধ্য কলকাতায় বিজেপির রাজ্য অফিসের অদূরেও জমায়েত করে উল্লাসে মাতেন তৃণমূলকর্মীরা।
ব্যারাকপুরের চাকুলিয়া মোড়ে মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে এক দল তৃণমূলকর্মী রাস্তায় নেমে ‘খেলা হবে’ গান বাজিয়ে নাচতে থাকেন। চলছিল পরস্পরকে আবির মাখানো। কারও মুখেই মাস্কের বালাই ছিল না। বিকেলে পুরুলিয়া পলিটেকনিক কলেজের সামনে জনা ত্রিশেক তৃণমূলকর্মীকে সবুজ আবির মেখে, পতাকা উড়িয়ে, ধামসা-ঢোল নিয়ে ছোটখাটো মিছিল করতে দেখা যায়। তাঁদের অনেকের মুখে মাস্ক ছিল না। কারও থাকলে, তা থুতনিতে নেমে গিয়েছিল। দূরত্ব-বিধিও লাটে ওঠে। বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গণনা কেন্দ্রের বাইরে ৪০ জন তৃণমূলকর্মী আবির মাখেন। আইএনটিটিইইসি-র জেলা সভাপতি অলকা সেন মজুমদার, জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র দিলীপ আগরওয়ালও সেখানে ছিলেন।
কোচবিহার থেকে জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি থেকে মালদহ, বালুরঘাট— সর্বত্রই কোভিড বিধি উড়িয়ে উল্লাস হয়েছে। গণনা কেন্দ্রে এজেন্ট, সরকারি কর্মী, পুলিশের জটলাও দেখা যায় বহু জায়গায়। স্বাস্থ্য দফতরের উত্তরবঙ্গের ওএসডি সুশান্ত রায় বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতি ভাল নয়। এখন হুল্লোড়, জটলা করা যাবে না। সতর্ক থাকতে হবে সকলকে। পুলিশ-প্রশাসনের আরও নজরদারি দরকার ছিল।’’
বর্ধমান শহরের একাধিক ওয়ার্ডে, জিটি রোডে বাইক নিয়ে জমায়েত, মাস্ক ছাড়া পতাকা-আবির খেলতে দেখা যায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের। গণনা কেন্দ্রের মধ্যে টিভির সামনেও ভিড় হয়। দুপুরে জয়ের ব্যবধান বাড়তেই বিজয় মিছিল করে ঝাড়গ্রামের রূপছায়ার দলীয় কার্যালয়ে আসেন তৃণমূলকর্মীরা। তাঁদের পটকা ফাটাতেও দেখা যায়। অধিকাংশের মুখেই মাস্ক ছিল না। বিকেলে বাইক মিছিলও হয়।
জয় নিশ্চিত বুঝে মেদিনীপুরে গণনা কেন্দ্রের বাইরে কিছু দূরে জমায়েত করেন তৃণমূলকর্মীরা। আবির খেলাও হয়। তবে সকালের দিকে সেখানে ছবিটা অন্য রকম ছিল। গণনা কেন্দ্রের সামনে ছিল কড়াকড়ি। বেলা গড়াতে সেই ব্যবস্থাপনা
কিছুটা আলগা হয়ে যায়। করোনা আবহে গণনা কেন্দ্রের সামনে শিবির গড়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা ছিল কমিশনের। শিবির হয়নি। তবে ইতিউতি শাসক দলের কর্মীদের জমায়েত দেখা গিয়েছে। মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনেও আবির মাখার উৎসাহে কোভিড বিধি শিকেয় ওঠে।
মুখ্যসচিবদের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলিকেও চিঠি দিয়েছে কমিশন। তাতে বলা হয়, কয়েকটি দল যে-ভাবে নির্দেশিকা উপেক্ষা করছে, তাতে কমিশন অখুশি। মুখ্যসচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে বিধিভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে এফআইআর-ও করতে বলে কমিশন।
ক’দিন আগেই রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশিকা দিয়ে বেশ কিছু গতিবিধিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপের কথা বলেন। গণনার সময় ও তার পরে কোভিড সুরক্ষা বিধি কী ভাবে পালন করতে হবে, সেই ব্যাপারে কমিশনের নির্দেশ রূপায়ণের কথাও জানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy