Advertisement
২০ জানুয়ারি ২০২৫
২০১১-২০২১। প্রত্যাশা কতটা পূরণ হল আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়?
TMC

উন্নতি, তবু হিংসা কেন

কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা বার বার সমালোচিত হয়েছে গত দশ বছরে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:১৪
Share: Save:

বদলা নয়, বদলের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজ্যে পালাবদল ঘটিয়েছিল তৃণমূল। সুশাসনের প্রত্যাশা নিয়ে মানুষ হাত উপুড় করে ভোট দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা বার বার সমালোচিত হয়েছে গত দশ বছরে।

তা হলে কি সবই খারাপ? উত্তর, না। অনেক জায়গায় আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তার মধ্যে বিশেষত পড়ছে নদিয়ার হাঁসখালি, নবদ্বীপ, মুর্শিদাবাদ সংলগ্ন সীমান্ত ঘেঁষা করিমপুর। হাঁসখালিতে এক সময় খুন ও পাল্টা খুন লেগেই থাকত। তবে বিগত তিন-চার বছরে বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস ও তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দুলাল বিশ্বাসের খুনের ঘটনা ছাড়া তেমন বড় ঘটনা ঘটেনি (যদিও ভোটের মুখে মুর্শিদাবাদে খোদ প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের উপর হামলার ঘটনা বিতর্ক উসকে দিয়েছে)। কৃষ্ণনগর শহরে সমাজবিরোধীদের দাপাদাপি অনেকটাই বন্ধ হয়েছে। সীমান্তে পাচার কমেছে অনেকটাই। হুগলিতে রমেশ মাহাতো, নেপু গিরি, টোটন বিশ্বাস, বিশাল দাসের মতো দাগি দুষ্কৃতীরা এখন জেলে। উত্তরবঙ্গের এক পুলিশকর্তার দাবি, “সামগ্রিক ভাবে আইনশৃঙ্খলার অনেক উন্নতি হয়েছে। ৯৮% ক্ষেত্রে অভিযোগ হলেই দ্রুত পদক্ষেপ হয়েছে।”

অনেকেই এ কথা মানছেন। একই সঙ্গে প্রশ্নও রাখছেন, শুরুর দিকে পদক্ষেপে কেন জোর ছিল না? কেন এ রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসার পরম্পরা বন্ধ হল না?

২০১৫-তে বিধাননগর পুরসভা নির্বাচন বা ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক সন্ত্রাস দেখেছে এ রাজ্য। উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল বরাবরই দুষ্কৃতীদের ‘স্বর্গরাজ্য’ হিসেবে পরিচিত। গত দু’বছর ধরে রাজনৈতিক কারণে অশান্ত ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া-জগদ্দল এলাকা। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে ব্যারাকপুর কেন্দ্রে বিজেপির টিকিটে জয়ী হন এক সময়ের তৃণমূল নেতা অর্জুন সিংহ। অভিযোগ তার পর থেকেই বোমা-গুলির রাজত্ব চলছে এই সব এলাকায়। লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে টানা চার মাস এলাকার দোকান-বাজার খোলেনি। প্রাণ গিয়েছে অন্তত ছ’জনের। গত জুলাই মাসে প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করা হয় টিটাগড়ের বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লকে।

দশ বছরে যে ভাবে পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে, তা-ও চোখে পড়ার মতো। ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজের নির্বাচনে ‘ডিউটি’ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান পুলিশ অফিসার তাপস চৌধুরী। ঘটনায় নাম জড়ায় শাসক দলের নেতা মুন্না ইকবালের। গ্রেফতার হলেও মুন্না জামিন পেয়ে যান। সেই মামলার বিচার শেষ হয়নি। ইতিমধ্যে অসুস্থতার কারণে মুন্না মারা গিয়েছেন। পরের বছর নভেম্বরে একটি ঘটনায় ধৃতদের ছাড়ানোর জন্য আলিপুর থানায় হামলা হয়। প্রাণ বাঁচাতে টেবিলের তলায় ফাইল দিয়ে মাথা ঢেকে লুকিয়েছিলেন এক পুলিশকর্মী। পরে সেটাই রাজ্যের পুলিশের ‘অসহায়তা’র প্রতীকী চিত্র হয়ে ওঠে। হামলায় মূল চক্রী হিসেবে নাম জড়ায় এক যুব তৃণমূল
নেতার। কিন্তু তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান।

২০১৫-তে কলকাতা পুরসভা ভোটে ‘ডিউটি’ করতে গিয়ে গিরিশ পার্কে গুলিবিদ্ধ হন পুলিশ অফিসার জগন্নাথ মণ্ডল। সেই ঘটনাতেও দুষ্কৃতীদের সঙ্গে শাসক দলের এক বিধায়ক ও তাঁর স্বামীর নাম জড়িয়েছিল। দুষ্কৃতীদের ধরলেও রাজনৈতিক নেতাদের ছোঁয়নি লালবাজার।

আবার পুলিশের ‘অতি সক্রিয়তা’র ছবিও রয়েছে। ২০১৭ সালে পাহাড়ে আন্দোলনের সময়ে সিংমারিতে, পরের বছর ইসলামপুরের দাড়িভিটে স্কুল শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে আন্দোলনের সময়ে বা সম্প্রতি উত্তরকন্যা অভিযানে— প্রতি বারই পুলিশের বিরুদ্ধে গুলিচালনার অভিযোগ ওঠে। সিংমারিতে তিন জন, দাড়িভিটে দুই তরুণ এবং উত্তরকন্যা অভিযানে বিজেপি সমর্থক উলেন রায়ের মৃত্যু হয়। প্রতি বারই পুলিশ দাবি করে, তারা গুলি চালায়নি। দিন কয়েক আগে কলকাতার রাস্তায় আন্দোলনরত বাম ছাত্র-যুবকর্মীদের উপর পুলিশ যে ভাবে লাঠি, জলকামান, কাঁদানে গ্যাস চালিয়েছে, তার সমালোচনা করেছে বহু মানুষ। আন্দোলনে যোগ দিতে আসা বাঁকুড়ার বাম যুবনেতা মইদুল ইসলাম মিদ্যার মৃত্যুর পরে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সব মহলেই। অনেকের বক্তব্য, ক্ষমতার দম্ভের ফলেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। বাম আমলেও এই একই প্রবণতা অনেক সময়েই প্রকট হয়েছিল।

তবে কি পরিস্থিতি আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে গত দশ বছরে?

দেশের প্রাক্তন এক শীর্ষ আমলা জহর সরকার এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘আমি বলব না যে বাম আমল থেকে মমতার আমলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বা নাগরিক অধিকার অনেকটা বিপন্ন হয়েছে। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের জন্য পরিস্থিতি আগের থেকে জটিল হয়েছে। আগে আমলাদের উপরে শুধু রাজ্যের শাসকদের চাপ থাকত। তাতে পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা থাকত। এখন দিল্লি থেকেও চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। নড্ডার কনভয়ে হামলার অভিযোগ নিয়েই তো তা ঘটেছে। ফলে, চাপ দু'দিক থেকেই।’’

(আগামিকাল সামাজিক সুরক্ষা)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC West Bengal Assembly Election 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy