প্রতীকী ছবি। ফাইল চিত্র
এক দিকে ফুলহার, অন্য দিকে গঙ্গা। মাঝে আমবাগানের সমারোহ নিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোহময়ী রতুয়া। তবে বর্ষায় এই দুই নদীর জলস্রোতে ভাঙে বাঁধ, প্লাবিত হয় এলাকার বেশিরভাগটাই। ফুলহারে সেতু গড়ে এলাকারই দুই জনপদ মহানন্দাটোলা ও বিলাইমারির বাসিন্দাদের যোগাযোগের সমস্যা মিটলেও ফি বছর বন্যা আর ভাঙনের সমস্যা মেটেনি আজও।
একই সমস্যায় জর্জরিত পড়শি মালতীপুরও। মহানন্দার ভাঙনে এখানে কষ্ট সারাবছরই। তবে ভাঙন সমস্যা ছাড়াও মিল রয়েছে এই দুই জনপদে। যেমন, দুই জায়গাতেই আয়ের মূল উৎস আমচাষ। আবার দু’জায়গারই প্রচুর মানুষ কাজের সূত্রে পাড়ি দেন ভিন্ রাজ্যে। আর দুই বিধানসভাতেই মোট জনসংখ্যার অন্তত ৭০ শতাংশ সংখ্যালঘু। তাই এই ভোটের দিকে নজর থাকে সব দলেরই। তবে এ বারের ভোটে এই দুই আসনেই অন্যতম ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে সংখ্যালঘু ভোটের ‘ভাগাভাগি’। রতুয়ায় নির্দল প্রার্থী ও মালতীপুরে এমআইএম কতটা ভোট কাটবে, তার উপরই নির্ভর করছে অনেক কিছু।
বিগত কয়েক দশক ধরেই রতুয়া বিধানসভা বাম ও কংগ্রেসের ‘দুর্গ’ বলেই পরিচিত ছিল। গত বিধানসভা ভোটে জয়ী হন কংগ্রেস প্রার্থী সমর মুখোপাধ্যায়। পরে দলবদল করে তিনি তৃণমূলে আসেন এবং এবার টিকিটও পেয়েছেন। তবে গত লোকসভা ভোটে এখানে লিড পায় তৃণমূল। পঞ্চায়েত ভোটেও সেই আধিপত্য দেখায় তারা।
এ বার নির্বাচনে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই জনপদে এনআরসি নিয়ে ভয় সংখ্যালঘু বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে আর তার পরিত্রাতা হিসেবে উঠে আসছে একটাই নাম, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা হলে, এ বার কি সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূলের ঝুলিতে? রতুয়ার তৃণমূল প্রার্থী সমরের দাবি, ‘‘আমিই জিতব।’’
তবে রয়েছে কাঁটাও। কারণ, রতুয়ায় নির্দল প্রার্থী শেখ ইয়াসিনের স্ত্রী পায়েল খাতুন। বাসিন্দার সুখে-দুঃখে পাশে থাকায় ‘রবিনহুড’ বলে পরিচিত ইয়াসিন কয়েক মাস আগেও ছিলেন তৃণমূলে। কিছু দিন আগেই বিজেপিতে যোগ দেন। এখন প্রশ্ন, ইয়াসিন বিজেপিতে অথচ তাঁর স্ত্রী নির্দল প্রার্থী কেন? আর এখানেই সামনে আসছে ‘ভোট কাটাকাটির’ তত্ত্ব। রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, বিজেপিকে সুবিধা করে দিতেই সংখ্যালঘু ভোট ভাগাভাগি করবেন নির্দল প্রার্থী। যদিও ইয়াসিন তা মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘স্ত্রী নিজের লড়াই নিজে করছেন।’’ জোট প্রার্থী এখানে কংগ্রেসের নাজেমা খাতুন। রতুয়ার রাজনীতিতে নাজেমা আনকোরা। তবে, যেহেতু আগে এই জনপদ বাম-কংগ্রেসের গড় ছিল, তাই সেই পুরনো ভোটব্যাঙ্ক নিয়েই এ বারও আশাবাদী জোট। নাজেমা বলেন, ‘‘আমিই জিতব।’’ এ দিকে মুখে না বললেও ‘ভোট কাটাকাটি’র সুযোগ এবং ৩০ শতাংশ হিন্দু ভোটকে ভোটবাক্সে ফেলতে মরিয়া বিজেপিও। যদিও প্রার্থী অভিষেক সিংহানিয়া বলেন, ‘‘শুধু হিন্দু ভোটই নয়, প্রচুর সংখ্যালঘু মানুষের আশীর্বাদও পাব।’’
পাশের জনপদ মালতীপুরেও চলছে এই ‘ভোট কাটাকাটির’ অঙ্কই। গত বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে কংগ্রেস প্রার্থী আলবেরুনি জুলকারনাইন জিতেছিলেন। এ বারের নির্বাচনে তিনি জোট প্রার্থী। লোকসভা ভোটেও লিড পায় কংগ্রেস। এক সময় রায়গঞ্জ লোকসভা আসনে সাংসদ ছিলেন প্রার্থীর বাবা গোলাম ইয়াজদানি।
সেই সুবাদে আলবেরুনির প্রতি সহানুভূতি রয়েছে। তবে অভিযোগ, বিধায়ক হওয়ার পরে আলবেরুনিকে সেভাবে দেখা যায়নি। আলবেরুনি বলেন, ‘‘সারা বছর মানুষের সঙ্গে থেকে উন্নয়নের চেষ্টা করেছি।’’
বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে অল্পের জন্য হেরে যান তৎকালীন আরএসপি প্রার্থী আব্দুর রহিম বক্সি। পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন এবং এ বার প্রার্থী। এখানেও এনআরসি-সিএএ ভয় কাজ করছে। তাই এখানেও কি ভরসার নাম তৃণমূলই? রহিম বক্সি বলেন, ‘‘শুধু সংখ্যালঘু কেন, সকলেই উন্নয়নের নিরিখে আমাদের সমর্থন করবেন।’’ তবে রাজনৈতিক মহল বলছে, এখানে এমআইএম শিক্ষক মতিউর রহমানকে প্রার্থী করায় সংখ্যালঘু ভোট ভাগাভাগি হতে পারে। তবে রতুয়ার মতোই পুরো হিন্দু ভোট পালে টানতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। নতুন মুখ, দলীয় প্রার্থী মৌসুমী দাস বলেন, ‘‘বিজেপির সরকার গড়তে মানুষ আমাকেই আশীর্বাদ করবেন।’’
সব মিলিয়ে দুই আসনেই সব প্রার্থীর দাবি, জিতছেন তিনিই। তবে জনতার দাবি কী, অপেক্ষা ২ মে পর্যন্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy