গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
শনিবার ভোট চতুর্থীতে রাজ্যে জোড়া সমাবেশ করলেন প্রধানমন্ত্রী। শিলিগুড়িতে বক্তব্য রাখেন ৪৪ মিনিট আর কৃষ্ণনগরে ৩৪ মিনিট। সব মিলিয়ে ৭৮ মিনিট। আর তার মধ্যেই মোট ১২৬ বার ‘দিদি’ ডাক শোনা গেল মোদীর গলায়।
রাজ্যে প্রচারে এসে অমিত শাহ ‘মমতা দিদি’ বলেন। কিন্তু মোদীর গলায় ‘দিদি’ শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে মানুষ। সেই ২০১৪ সাল থেকেই বাংলায় রাজনৈতিক মঞ্চ পেলেই মোদী ‘দিদি’, ‘দিদি’ করেন। রাজ্যের বাইরে সভা থাকলেও বাংলার প্রসঙ্গ এলে ‘দিদি’, ‘দিদির দল’, ‘দিদির সরকার’ বলেন তিনি। কিন্ত বাংলায় এলে মোদীর আক্রমণের মূল লক্ষ্যটাই যেহেতু মমতা হন, তাই ‘দিদি’ উচ্চারণ আরও বেড়ে যায়। ২০১৪-র লোকসভা, ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে ‘দিদি’ ডাক শোনা গেলেও ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রচার পর্বে নতুন সংযোজন হয় নানা সুরে ‘দিদি-ই-ই-ই’ বলা।
তবে ২০২১-এর নির্বাচনী লড়াইয়ের বাংলায় সেই ডাক ও সুর যেন নতুন মাত্রা পেয়েছে। আবার প্রতি দফায় ভোটগ্রহণ পর্ব যত এগোচ্ছে ততই যেন বক্তৃতায় ‘দিদি’ সংখ্যায় বাড়ছে। চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণের দিন যেন সেটা সবচেয়ে বেশি শোনা গেল। শনিবার দু’টি বক্তৃতাতেই কত বার ‘দিদি’ বলেছেন মোদী তা গুণে দেখেছে আনন্দবাজার ডিজিটাল। শিলিগুড়িতে ৪৪ মিনিটে ৬৮ বার আর কৃষ্ণনগরে ৩৪ মিনিটে ৫৮ বার।
মোদীর ‘দিদি’ ডাক নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে তৃণমূল। পাল্টা কটাক্ষ করেছেন মমতাও। গত মঙ্গলবারই মমতা উত্তরবঙ্গের একটি জনসভায় বলেন, ‘‘উনি রোজ ‘দিদি’, ‘ও দিদি’ বলে ব্যঙ্গ করছেন। আমার তাতে কোনও সমস্যা নেই। আমার গুরুত্ব রয়েছে বলেই এ সব করছেন।’’ মমতা নিজে কোনও সমস্যা নেই বলে উল্লেখ করলেও দলের মহিলা নেত্রীরা এ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন। শশী পাঁজা, জুন মালিয়া এবং অনন্যা চক্রবর্তী একই সঙ্গে মোদীর ওই ডাকের বিরুদ্ধে সরব হন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, মুখ্যমন্ত্রীকে ওই ভঙ্গিতে ডেকে আদতে বাংলার মহিলাদের অসম্মান করছেন প্রধানমন্ত্রী। মেয়েদের টিপ্পনী কাটতে এই ধরনের বাচনভঙ্গি ব্যবহার করা হয় বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।
বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে মোদীর মুখে খুব বেশি শোনা যাচ্ছে যে শব্দগুলি তার মধ্যে ‘কাটমানি’, ‘তোলাবাজি’, ‘সিন্ডিকেট’, ‘তুষ্টিকরণ’ থাকলেও সবকিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছে ‘দিদি’। শুধু ডাকাই নয়, নিত্য নতুন সুর ও ছন্দও আনছেন মোদী। শনিবারই যেমন একই বাক্যে তিন বার ‘দিদি’ বলেছেন মোদী। ‘দিদি, ও-দিদি, আদরণীয় দিদি’ বলে নানা অভিযোগ তুলেছেন বা প্রশ্ন করেছেন। মোদীর বক্তৃতায় আরও একটা বিষয় লক্ষ্য করা গিয়েছে যে, যদি ৩০ মিনিটের বক্তৃতায় ৬০ বার ‘দিদি’ বলে থাকেন তবে তার মধ্যে বার দশেক প্রথম ১০ মিনিটে। শেষ ১০ মিনিটেও বার দশেক। মাঝের সময়টা যেন ধ্রুপদী সঙ্গীতের ভাষায় ‘ঝালা’-য় ওঠে ‘দিদি’ ডাক। ওই ১০ মিনিটে বার তিরিশেক ‘দিদি’ ডেকে নেন।
মোদীর বক্তব্য শুনে আরও একটা বিষয় স্পষ্ট যে তিনি এই ‘দিদি’ বলায় বেশ মজাই পান। আর হাততালিও পান। কর্মী-সমর্থকদের সেই উচ্ছ্বাসও যে তিনি পছন্দ করছেন সেটাও বোঝা যায় শনিবারের দুই বক্তৃতায়। লক্ষ্য করা গিয়েছে, যত বার তিনি সুর কেটে ‘দিদি, ও-দিদি, আদরণীয় দিদি’ বলেছেন তত বারই বক্তৃতায় লম্বা যতি এনেছেন মোদী। কথা থামিয়ে জনতাকে হাততালি দেওয়ার সময় দিয়েছেন। যেখানে থেমেছিলেন ফের যেন সেখান থেকেই শুরু করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy