কাছে-দূরে: রাজচন্দ্রপুর স্টেশনের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যানারের দু’পাশে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যানার। —নিজস্ব চিত্র।
বালির নিশ্চিন্দা থেকে কিছুটা এগিয়েই রাজচন্দ্রপুর স্টেশন যাওয়ার রাস্তার বাঁকে দাঁড়িয়ে দু’জনে। একেবারে পাশাপাশি। আজ অবশ্য তাঁরা একেবারে পাশে থেকেও একে অপরের পাশে নেই!
আজ শনিবার রাজ্যের চতুর্থ দফার নির্বাচনে দু’জনেই একে অন্যের প্রতিপক্ষ। তাঁরা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১ থেকে যে সম্পর্কের সূচনা, ২০২১-এ তা শেষ হয়েছে। রাজীব এখন দল বদলে পদ্ম শিবিরে। আর তাই মমতাও রাজীবকে ‘গদ্দার, বিশ্বাসঘাতক’ বলছেন। বৃহস্পতিবার বালির জনসভা থেকেও রাজীবের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন মমতা। চুপ থাকেননি রাজীবও। তিনিও পাল্টা দিয়েছেন।
দলনেত্রী ও দলবদলকারীর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের আবহে রাজচন্দ্রপুর স্টেশন মোড়ের এই ছবি তাই বিস্ময় জাগায়। যেখানে দেখা গিয়েছে, ওই দু’জনকে ‘পাশাপাশি’ দাঁড়িয়ে থাকতে। তবে সশরীরে নয়। বিরাট কাটআউটে। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাসিমুখে হাত জোড় করে হাঁটার ভঙ্গিমায়। তাঁর ঠিক দু’পাশে খানিকটা ছোট আকারের কাটআউটে হাত জোড় করে রাজীব। এক ঝলকে মনে হতে পারে, প্রার্থী বুঝি ভোট প্রচারে দলনেত্রীর সঙ্গে বেরিয়েছেন। সে দিকে তাকিয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলে উঠলেন, “ডোমজুড়ের মাটিতে এক দিন এটাই ছিল বাস্তব। আজ তা অতীত। তাই তো দু’জনের ছবির পাশে থাকা প্রতীক ভিন্ন।”
আজ তাই অন্য জায়গার থেকে ভিন্ন ডোমজুড়ের ভোটচিত্র। রাজ্যের এই হাইভোল্টেজ ভোটে রাজীব যেমন নিজস্ব ইমেজে পুরনো জায়গায় মর্যাদার লড়াইয়ে নেমেছেন। তেমনই তৃণমূলও মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের প্রার্থী কল্যাণ ঘোষকে জিতিয়ে রাজীবকে যোগ্য জবাব দেওয়ার লড়াইতে নেমেছে। আর তাই শুক্রবার সকাল থেকেই সমস্ত পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়ে কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর কাজে নামতে দেখা গেল কল্যাণকে। জগদীশপুর বাজারের কাছে দেখা হতেই বললেন, “কর্মীদের মনোবল বাড়াতে বেরিয়েছি। নির্বাচনী কার্যালয়ে গিয়ে ওঁদের সঙ্গে দেখা করছি, কথা বলছি। ভোটের আগের দিন ঘরে বসে থাকলে চলবে না।”
কেন, কোথাও কি কিছু আশঙ্কা রয়েছে? ক্ষোভের সঙ্গে কল্যাণের জবাব, “ডোমজুড়ের ৪০৩টি বুথের সর্বত্র এজেন্ট দিতে পারবে না ওঁরা (বিজেপি)। তাই বাইরের থেকে লোক এনে ভোট করানোর পরিকল্পনা করেছে। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। উনি (রাজীব) তো এখানকার মানুষের গণতন্ত্র কেড়ে নিয়েছিলেন।” একই সঙ্গে জেলা পরিষদের মেন্টর কল্যাণের দাবি, বালি-বেলুড় স্টেশন সংলগ্ন বিভিন্ন কোয়ার্টার্স, ভাঁড়পট্টি, নির্মীয়মাণ বহুতলে বাইরের লোকজনকে এনে রেখেছে বিজেপি। তাঁদের দিয়ে দুর্গাপুর-১, সাঁপুইপাড়া, নিশ্চিন্দার ১টি করে অংশ, জগদীশপুর, চামরাইল, চকপাড়ার কয়েকটি বুথে এবং বাঁকড়ার সুভাষপল্লি, উত্তর নিবড়ায় ভোট করানোর পরিকল্পনা রয়েছে পদ্মশিবিরের। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে বলেই জানালেন কল্যাণ।
যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন রাজীব। এ দিন তিনি এজেন্টদের নিয়ে বৈঠক করেছেন বলেও জানা গিয়েছে। ব্যস্ত রাজীব। এ দিন তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে কল্যাণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফোনে বলেন, “এত ভয় কিসের! ওঁরাই (তৃণমূল) তো খেলা হবে, খেলা হবে বলছেন। জিতে বসে আছেন দাবি করছেন। সেখানে আমরা অবাধ-শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাইছি। সেটা হলে আমার বহিরাগতদের লাগবে না। বরং ওঁরা বহিরাগত নিয়ে আসছেন।” ডোমজুড়ের বহু জায়গায় ভোটের আগের দিনও পদ্মফুলের পতাকা, ব্যানার সে ভাবে চোখে পড়ছে না কেন, জানতে চাইতে রাজীবের দাবি, “বেশির ভাগ জায়গায় তো ওঁরা রাতের অন্ধকারে আমাদের ব্যানার, পতাকা খুলে দিচ্ছে।” ডোমজুড়ের যুদ্ধে দীর্ঘ ১০ বছর পরে রাজীবের সৈন্য-সামন্ত আলাদা। বরং তাঁর কাছে নতুন...। কথা শেষ হওয়ার আগেই ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে উত্তর, “রাজীব একাই যথেষ্ট। নতুন সৈন্য সামন্তকে টাট্টু ঘোড়ার মতো ছোটাচ্ছি, তাই চিন্তা নেই।”
আজ সকাল থেকেই ডোমজুড়ের মাটিতে দৌড়বে যুযুধান দুই পক্ষের ঘোড়া। কার ঘোড়ার খুরে কত ঝড় উঠবে, তা অবশ্য বলবে সময়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy