দলীয় কর্মীর মোটরবাইকে চেপে লালপুর এলাকায় কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। ছবি: সুমন বল্লভ।
মেজাজটা এখনও সেই আগের মতোই রয়েছে।
মঙ্গলবার ভোটের দিন সকালে তাঁর রায়দিঘির খাসতালুকে পৌঁছতেই বললেন, “এখন কোনও কথা বলব না। যত ক্ষণ আপনার সঙ্গে কথা বলব, তত ক্ষণে বরং অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলে ফেলতে পারব।”
আজকের রায়দিঘির সিপিএম প্রার্থী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, রাজ্যের প্রাক্তন বিধায়ক এবং মন্ত্রী। এত দিনের পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদের চিন্তা কী? জবাব এল, “গতকাল (সোমবার) সারা রাত ধরে গোটা রায়দিঘি জুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে শাসকদলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। বাড়ি থেকে আমাদের ভোটারদের বেরোতে নিষেধ করেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী চলে গেলে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।”
সাদা পাঞ্জাবি, সবুজ সরু পাড়ের সাদা ধুতি দক্ষিণী কায়দায় পরে সাতসকালেই ভোট দেখতে বুথে বুথে ঘুরছিলেন আশি ছুঁই ছুঁই প্রার্থী। বাহন কখনও এসইউভি, কখনও স্থানীয় কর্মীর মোটরবাইক। কোথাও তেমন কোনও গোলমালের খবর না থাকলেও তাঁর বেশি নজর ছিল লালপুর এলাকায়। কেন, তা অবশ্য খোলসা করে বলেননি। পথে স্থানীয়দের অনুরোধ মানতে একটি বন্ধ দোকানে বসতেই হল তাঁকে। একেবারে মেঠো কায়দায় আট থেকে আশির প্রত্যেককে সন্তুষ্ট করলেন ঠিকই, কিন্তু একবারের জন্যও চিন্তামুক্ত দেখাল না তাঁকে।
আয়লা-বিধ্বস্ত রায়দিঘির নদী লাগোয়া এলাকায় হাঁটু কাদায় নেমে স্থানীয়দের সঙ্গে বাঁধ মেরামতও করতে দেখা গিয়েছিল তৎকালীন বিধায়ক ও মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়কে। ২০১১ সালের ভোটে অবশ্য সেই সব কাজ ধোপে টেকেনি। সে বার সিপিএম বিরোধী প্রবল হাওয়ায় রাজনীতিতে নবাগতা, অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়ের কাছে হেরে গিয়েছিলেন ‘মেঠো রাজনীতিবিদ’। পরের ভোটেও নিরাশই থাকতে হয়েছে ‘দাপুটে’ এই নেতাকে। কিন্তু এ বার? এলাকার মনোভাব মিশ্র। কেউ চান তৃণমূলকে। কারও আশা, কান্তিবাবুর প্রত্যাবর্তন হবে। আবার কারও অনুমান, সংখ্যালঘু ভোট কাটাকাটিতে সুবিধা হতে পারে বিজেপির।
যদিও জেতা-হারার অঙ্ক কখনওই তাঁকে কষতে দেখেননি মানুষ। উল্টে, ভোট বিপর্যয়ের পরে আমপান-বিধ্বস্ত জেলার একটি বড় অংশ আবার খেটো ধুতি পরে মানুষের পাশে থাকার কাজে নেমে পড়তে দেখেছে তাঁকে। একটা সময়ে দেওয়াল লিখনে কান্তিবাবুর নামের পাশে লেখাও থাকত, ‘কাজের মানুষ, কাছের মানুষ।’ এ বার কি ভোটার-মনে জায়গা পাবে সেই লিখন?
প্রশ্ন শেষ না হতেই জোড়হাতে কান্তিবাবুর জবাব, “ও সব কথা থাক। এ নিয়ে আজ কোনও কথা বলব না।” খানিকটা অভিমানই যেন ঝরে পড়ে তাঁর কণ্ঠে। লালপুরের ভাঙা পথ ধরে ছুটে যায় ‘কাজের মানুষ’-এর এসইউভি। আপাত শান্তি সর্বত্র। কোথাও কেন্দ্রীয় বাহিনী এলাকায় টহল দিচ্ছে। পাখির চোখে ভোট দেখতে ওড়ানো হচ্ছে ড্রোন। ডায়মন্ড হারবার মহকুমা এলাকার একাধিক বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল কেন্দ্রীয় বাহিনীর আচরণ নিয়ে অভিযোগ তুললেও কার্যত নিরুত্তাপ সিপিএম প্রার্থী। বললেন, “আজ একটা বুথ দখল করেছিল ওরা। কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছি। তবে ভয় উপেক্ষা করে মানুষ ভোট দিচ্ছেন। তবু কোনও বুথের ভিতরে ঢুকব না।”
দেওয়াল লিখন মিলবে কি না, কারও জানা নেই। তবে কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় যে বদলাবেন না, সে দৃঢ়তা চোখে-মুখে স্পষ্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy