গত রবিবার বিধানসভা নির্বাচনের ইস্তাহার প্রকাশ করেছে বিজেপি। এর পরে বুধবারই প্রথমবার রাজ্যে এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কাঁথিতে জনসভায় সেই ইস্তাহার সম্পর্কে বিস্তারিত না বললেও মোদীর দাবি, স্থানীয় বিষয় মাথায় রেখেই বানানো হয়েছে এ বারের ইস্তাহার। এর আগে করোনাকালে দেশবাসীর কাছে বিদেশি সামগ্রী বর্জন এবং দেশীয় সামগ্রী ব্যবহারের আবেদন জানিয়ে ‘ভোকাল ফর লোকাল’ স্লোগান দিয়েছিলেন মোদী। এ বার বাংলার নির্বাচনে দলের ইস্তাহারকে সেই একই অভিধা দিলেন তিনি। বললেন, ‘‘রাজ্যের বিজেপি নেতাদের ধন্যবাদ জানাই। এখানকার মানুষের মনের কথাই ইস্তাহারে প্রকাশিত হয়েছে। মেদিনীপুর ভারতের কৃষিতে অনেক বড় স্থান নিয়ে আছে। এখানে চিংড়ির অত্যাধুনিক চাষ হচ্ছে। কিন্তু দিদি এখানে কৃষকদের ফুড প্রসেসিং, কোল্ড স্টোরেজের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছেন। এ বার সে সব হবে।’’
নন্দীগ্রামে প্রচারে এসে আহত হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ঘটনাকে ‘নাটক’ বলে আক্রমণও চালায় বিজেপি। কিন্তু মোদী সরাসরি সে কথা না বললেও নন্দীগ্রামের জেলায় এসে তেমনই ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন। বললেন, ‘‘দিদি মেদিনীপুরে এসে নানা বাহানা দেখাচ্ছেন।’’ এর পরে পরেই তিনি বলেন, ‘‘দিদি এখনও তাঁদের কাছে জবাব দিতে পারেননি, যাঁদের ঘর বাড়ি শেষ হয়ে গিয়েছিল আমপানে। তার পর তাঁদের জন্য যে অনুদান পাঠানো হয়েছিল, সেটা ভাইপো উইন্ডোতে থেমে গিয়েছিল। আজ বাংলা প্রশ্ন করছে, আমপানের টাকা, চাল কে লুটে নিল। আমপানে ক্ষতিগ্রস্তরা এখনও কেন ভাঙাচোরা ঘরে বসবাস করছেন। যখন প্রয়োজন, তখন দিদি দেখেন না। আর ভোট এলে উনি বলেন, দুয়ারে সরকার। এটাই আপনার খেলা। পশ্চিমবঙ্গের শিশুরা পর্যন্ত আপনার খেলা বুঝে গিয়েছে। এই জন্যই ২ মে দিদিকে দুয়ার দেখিয়ে দেবে। মানুষ আপনাকে দরজা দেখিয়ে দেবে।’’
প্রথম থেকেই ডবল ইঞ্জিন সরকারের কথা প্রচারে বলছেন মোদী। বুধবারও তার অন্যথা হয়নি। মোদী বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার পেটুয়াঘাট বন্দরকে আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এতে এখানকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ মিলবে। আপনাদের যে উপকূল রয়েছে, তাতে আপনাদের জন্য বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। কেন্দ্র সরকার নানা প্রকল্পের মাধ্যমে পর্যটনের প্রসার ঘটাচ্ছে। আর এর লাভ মেদিনীপুরের মানুষ পাবেন। এখানকার প্রতিটি নাগরিক তার সুবিধা পাবেন।’’
বুধবারের আগে পুরুলিয়া ও খড়্গপুরে সভা করে ‘খেলা হবে’ ইস্যুতে আক্রমণ শানান মোদী। কাঁথিতেও তিনি বলেন, ‘‘বাংলার মানুষ বলছে, তৃণমূলের খেলা শেষ হবে। বিকাশ আরম্ভ হবে। বাংলার বিকাশই বিজেপি-র লক্ষ্য। বাংলা চায় শিল্প, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, নারীর সম্মান।’’ তবে মোদীর বুধবারের বক্তব্যের বড় অংশ জুড়েই ছিল ইস্তাহার প্রসঙ্গ। বলেন, ‘‘এখানকার কাজু চাষি, পান চাষি, ফুল চাষিদের কেন্দ্রের সব প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হবে। গমের প্যাকেজিং একশো শতাংশ চটের ব্যাগে হচ্ছে। এর সুবিধা কৃষকরাও পাবেন।’’ সেই সঙ্গে মমতাকে আক্রমণ করে মোদীর বক্তব্য, ‘‘বাংলার কৃষকরা ভোলেননি, কী ভাবে দিদি ওঁদের সঙ্গে নির্মমতা দেখিয়েছেন। দিদি আপনাদের পিএম কিসান সম্মান নিধি থেকে বঞ্চিত করে রেখেছেন। কৃষকদের কাছে পৌঁছতে দিচ্ছে না তৃণমূল সরকার। ভারত সরকার কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু দিদি কৃষকদের শত্রু হয়ে বসে রয়েছেন। তাই ২ মে সব দেওয়াল ভেঙে যাবে। বিজেপি সরকার আসবে। আর কৃষকদের তিন বছরের টাকা তাঁদের দেবই আমি। গত ৩ বছরের যে টাকা দিদি আপনাদের দিতে দেননি, আমি আপনাদের দেবই। আমি প্রতিশ্রুতি পূরণ করেই ছাড়ব। ভূমিহীন কৃষক, মৎস্যজীবীদেরও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি। ডবল ইঞ্জিনের সুবিধা এটাই।’’
কেন্দ্র ও রাজ্যে একই রাজনৈতিক দলের সরকার থাকার সুবিধার উল্লেখ করতে গিয়ে অসমের কথাও টেনে আনেন মোদী। বলেন, ‘‘অসমে দেখুন, উন্নয়নের জোয়ার বইছে। জঙ্গিরা পর্যন্ত মূলস্রোতে ফিরছেন। আর এখানে বোমাবাজিতে বাড়িঘর পর্যন্ত উড়ে যাচ্ছে। মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। দিদি বসে বসে দেখছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy