Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
TMC

Bengal Polls: উত্থানের ইতিহাসে কম যায় না কেউই ভোটের প্রথমাঙ্কে তাই লড়াই ‘অঙ্ক’ নিয়েও

নীলবাড়ি দখলের আট দফা লড়াইয়ে ‘ভোট প্রথমা’ শনিবার। সেই লড়াইয়ে যে আসনগুলিতে ভোটগ্রহণ সেগুলিতে ‘অঙ্ক’ নিয়েও চর্চা চলছে রাজ্য রাজনীতিতে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২১ ১৫:৫৫
Share: Save:

নীলবাড়ি দখলের আট দফা লড়াইয়ে ‘ভোট প্রথমা’ শনিবার। প্রথম দফার সেই লড়াইয়ে যে আসনগুলিতে ভোটগ্রহণ সেগুলিতে ‘অঙ্ক’ নিয়েও চর্চা চলছে রাজ্য রাজনীতিতে। কারণ, পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালে মাত্র তিনটি আসন পাওয়া বিজেপি ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে ১২১টি বিধানসভায় এগিয়ে থেকে বিধানসভা ভোটের লড়াই শুরু করছে। শাসক তৃণমূল শিবিরের অনেকেই বলছেন, লোকসভা নির্বাচন আর বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ, প্রথমটি কেন্দ্রের সরকারি নির্বাচনের। দ্বিতীয়টি রাজ্যের। কিন্তু তার পাশাপাশি এমন যুক্তিও আছে যে, দু’বছর আগে হয়ে যাওয়া ভোটের ফলাফল দু’বছর পরে বড় ভূমিকা নেবে না কেন। তাই ভোটের অঙ্ক নিয়ে উৎসাহিত সবপক্ষই।

প্রথম দফার নির্বাচনের প্রধান দুই প্রতিপক্ষ তৃণমূল এবং বিজেপি-র উত্থানের ইতিহাসও বলে দিচ্ছে অঙ্কই। আবার সেই অঙ্কই বাম-কংগ্রেস জোটকে এই গণ আলোচনার বাইরে রেখেছে। কারণ, গত লোকসভা নির্বাচনের হিসেব বলছে, শনিবার ভোটের প্রথম দফায় যে ৩০ আসনে ভোটগ্রহণ, সেখানকার কোনও আসনেই এগিয়ে ছিল না বাম বা কংগ্রেস। যদিও ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনগুলির মধ্যে কংগ্রেস দু’টি এবং বামেরা একটি আসনে জয় পেয়েছিল। আর বিজেপি একটিও আসন পায়নি। তৃণমূল পেয়েছিল ৩০টির মধ্যে ২৭টি আসন। কিন্তু ২০১৯-এর হিসেব সেই অঙ্ক অনেকটাই উল্টে দিয়েছে। লোকসভা ভোটে এই ৩০টি আসনের মধ্যে ২০টি আসনে এগিয়ে থাকার ইতিহাস নিয়ে লড়াইয়ে নামছে গেরুয়াশিবির। সেখানে শাসক তৃণমূল এগিয়ে আছে ১০টি আসনে।

গত বিধানসভা নির্বাচনে গোটা রাজ্যে বিজেপি জয় পেয়েছিল মাত্র তিনটি আসনে। সেখানে প্রথম দফাতেই ২০ আসনে এগিয়ে থাকার ‘লাভজনক’ অঙ্ক নিয়ে ভোটের লড়াই শুরু করছে বিজেপি। মনে রাখতে হবে বিজেপি-র উত্থানের ইতিহাস বলছে, তারা কেন্দ্রীয় স্তরে মাত্র দু’টি আসন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর নজির দেখিয়েছে। ১৯৮৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি গোটা দেশে পেয়েছিল মাত্র দু’টি আসন। সেখানে পাঁচ বছর পর ১৯৮৯ সালেই জয় মেলে ৮৯টি আসনে। এর পরে অনেক ওঠানামা থাকলেও শেষ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৩০৩টি আসনে জয় পেয়েছে। আর তারই অঙ্গ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গেও ১৮ আসনে জয় পেয়েছিল বিজেপি। যেটা চার পাঁচ বছর আগে ছিল মাত্র দু’টি। ঠিক একই ভাবে ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মাত্র ৩০টি আসনে জয় পাওয়া তৃণমূল পাঁচবছর পরের ২০১১ সালের ‘পরিবর্তন’-এর নির্বাচনে জয় পেয়েছিল ১৮৪ আসনে। যদিও তারা সে বার কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়েছিল। পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পরে ২০১৬ সালে সেই তৃণমূলের বিধায়ক সংখ্যা আরও বেড়ে হয়েছিল ২১১। প্রসঙ্গত, সে বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কারও সঙ্গে জোট বাঁধেননি। একাই তিনি দু’শো পেরিয়েছিলেন।

লোকসভা নির্বাচনের অঙ্ক দেখা হলেও উত্থানের ইতিহাসে কম যায় না তৃণমূল। ২০০৪ সালে মাত্র দু’টি আসনে জয় পাওয়া তৃণমূল এক লাফে ২০০৯ সালে ১৯টি এবং‌ ২০১৪ সালে ৩৩টি আসনে জয় পায়। ২০১৪ সালে দেশজুড়ে প্রবল ‘মোদী-হাওয়া’-র মধ্যেও দুরন্ত ফল করেছিল তৃণমূল। তার পাঁচবছর পরে ২০১৯ সালে বিজেপি-র ১৮ আসনে জয় তৃণমূলের শক্তিক্ষরণের প্রমাণ দিয়েছিল বটে। কিন্তু তারা একেবারে ধুয়েমুছেও যায়নি। ৪২-এর মধ্যে তারা ২২টি আসনে জয় পেয়েছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের বক্তব্য, ২০১১ সালে রাজ্য বিধানসভা জয়ের বিপুল প্রভাব পড়েছিল লোকসভা নির্বাচনের পশ্চিমবঙ্গের ফলাফলে। যে কারণেই ‘মোদী হাওয়া’ তখন সে ভাবে কাজ করেনি। সুতরাং, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি যে ভোট বাংলায় পেয়েছিল, তার প্রভাব নীলবাড়ির লড়াইয়ে দেখতে পেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, বাংলায় বিজেপি-র উত্থান মূলত ২০১৮ সাল থেকেই। ২০১৬ সালে বিধানসভায় ‘খাতা খোলা’ বিজেপি ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে অনেক জায়গাতেই উল্লেখযোগ্য ফল করেছিল। আর ২০১৯ সালে তাদের প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল।

প্রথম দফায় যে ৩০টি আসনে ভোটগ্রহণ শনিবার, সেখানকার হিসেবেই বলছে ২০১৬ সালের (৮.৬০) থেকে ২০১৯ সালে বেড়ে বিজেপি-র প্রাপ্তি হয়েছিল ৪৬.৩১ শতাংশ ভোট। অন্য দিকে, তৃণমূলের প্রাপ্তি ভোট ৫০.৩৯ থেকে কমে হয়েছিল ৪২.০১ শতাংশ। আর কংগ্রেস ২৮.০৬ থেকে নেমে যায় ৫.১৭ শতাংশে। বামেদের শক্তিক্ষরণও কম হয়নি। তারা ৬.০১ থেকে নেমে যায় ২.১৮ শতাংশে। ফলে প্রথমদফার অঙ্ক বলছে, ২০ থেকে ১০টি আসনে এগিয়ে থেকে ময়দানে নামছে বিজেপি। তফাতের মধ্যে, দলের তিন ‘ভোট সেনাপতি’ মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী, শোভন চট্টোপাধ্যায় এখন তৃণমূলে নেই। এর মধ্যে প্রথম দু’জন বিজেপি-র প্রার্থী। আবার পাশাপাশি এই প্রথম প্রশান্ত কিশোরের মতো ভোটকৌশলী তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছেন। সেই কৌশল ‘ভোট-অঙ্ক’ বদলাতে পারবে কি না, তা অনেকটাই নির্ভর করছে প্রথম দফার ভোটে। কারণ, এই দফায় একদা তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি দুই মেদিনীপুর জেলায় ভোট। আবার তেমনই ভোট বিজেপি-র ‘জমি’ তৈরি করা জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার ১৭টি আসনেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee BJP TMC West Bengal Assembly Election 2021 PM Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy