Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
বেহালা পশ্চিম
partha chatterjee

Bengal Polls: জয় নয়, পার্থের চিন্তা ব্যবধান নিয়ে

আত্মবিশ্বাসী পার্থের সামনে অন্যতম বিরোধী হিসেবে দাঁড়িয়ে অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়।

প্রার্থী: (বাঁ-দিক থেকে) পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় এবং নীহার ভক্ত।

প্রার্থী: (বাঁ-দিক থেকে) পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় এবং নীহার ভক্ত। —নিজস্ব চিত্র।

মধুমিতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২১ ০৮:০২
Share: Save:

বেহালার ম্যান্টনে ডায়মন্ড হারবার রোডের ধারে দাঁড়িয়ে হুড খোলা জিপ। জিপের চার দিক ঘেরা চলতি বিধানসভা নির্বাচনে বেহালা পশ্চিমের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ছবি সংবলিত হোর্ডিংয়ে। পঞ্চম বারের জন্য বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রের বিধায়ক হওয়ার লক্ষ্যে আর একটু পরেই প্রচারে বেরোবেন তিনি।

নিজের দফতরে বসে মৃদু হেসে পার্থ বললেন, ‘‘জিতব তো বটেই। এখন ভাবনা, ব্যবধান আরও কত বাড়বে।’’ গত লোকসভা নির্বাচনের হিসেব বলছে, অনেক বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটের সংখ্যার নিরিখে বিজেপি তৃণমূলকে টপকে গেলেও এই কেন্দ্রে তা হয়নি। পার্থের আরও যুক্তি, ‘‘আর জিতব না-ই বা কেন? এখানে তো কিছু করার বাকি নেই। তার সঙ্গে আমপান, করোনার সময়ে ত্রাণ বিলি, বিনা পয়সায় খাওয়ার ব্যবস্থা— সব করা হয়েছিল।’’ আরও বললেন, ‘‘এই কেন্দ্রে এমন কোনও বুথ নেই, যেখানকার বাসিন্দাদের কর্মসংস্থান হয়নি। সারা বছর মানুষের পাশে থেকেছি। এখানকার ভোটদাতারা তো তৃণমূলকেই ভোট দেবেন।’’

আত্মবিশ্বাসী পার্থের সামনে অন্যতম বিরোধী হিসেবে দাঁড়িয়ে অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। প্রার্থী হয়ে বার বার শ্রাবন্তী জানাচ্ছেন, হালে বাইপাসের ধারে মেঘ ছুঁয়ে যাওয়া বহুতলের বাসিন্দা হলেও আদতে তিনি বেহালার ঘরের মেয়ে। পর্ণশ্রীতে তাঁর বাড়ি। এখানেই তাঁর বেড়ে ওঠা। বাবা-মা এখনও এখানেই থাকেন। মাঝেমধ্যেই বাইপাসের বাড়ি থেকে শ্রাবন্তী ছুটে আসেন এই বেহালায় ফুচকা খেতে। পার্থ জানালেন, অনেক সেলিব্রিটি থাকেন বেহালায়। গুনে শেষ করা যাবে না। শ্রাবন্তীও তাঁদের অনুষ্ঠানে আগে এসেছেন। তবে প্রার্থী নিয়ে তিনি ভাবছেন না। তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন। যে বিজেপি ধর্মের নামে এই রাজ্যকে ভাগ করতে চাইছে। বিপথে চালিত করতে চাইছে বাংলার কৃষ্টি, শিক্ষা, সংস্কৃতিকে।

একদা শ্রাবন্তী তৃণমূলের কাছের মানুষই ছিলেন। ২১ জুলাইয়ের অনুষ্ঠান-মঞ্চেও অতীতে তাঁকে দেখা গিয়েছে। তবে বিজেপির প্রার্থী হয়ে এই কেন্দ্রের গলিঘুঁজি-রাজপথ চষে ফেলে শ্রাবন্তী বলছেন, ‘‘মোদীজির স্বপ্নের সোনার বাংলার সঙ্গে গড়তে হবে সোনার বেহালা।’’ অভিযোগ করছেন, এই কেন্দ্রে এখনও বর্ষায় জল জমে। আমপানের পরে গোটা বিধানসভা কেন্দ্রকে স্বাভাবিক করে তুলতে সে ভাবে কাজ হয়নি। স্থানীয় হাসপাতালে এলাকার মানুষ যথাযথ পরিষেবা পান না।

তবে বিজেপিতে যোগ দিয়েই শ্রাবন্তী টিকিট পেয়ে যাওয়ায় কিছুটা ক্ষোভও রয়েছে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের মধ্যে। তাঁদের মত, পার্থের বিরুদ্ধে পোড়খাওয়া কোনও রাজনীতিবিদ দরকার ছিল। এরই মধ্যে দোলের দিন মদন মিত্রের সঙ্গে এক পার্টিতে তৃণমূলের ‘খেলা হবে’র সঙ্গে নাচগানের আবহে দেখা গিয়েছে শ্রাবন্তীকে। সঙ্গে আরও দুই অভিনেত্রী তথা বিজেপি প্রার্থী পায়েল এবং তনুশ্রী। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ গোপন করেননি বেহালা পশ্চিমের বিজেপি কর্মকর্তারা। ভোটারেরাও কিছুটা অবাক। পরিস্থিতি বুঝে বিষয়টির জন্য ফেসবুকে দুঃখ প্রকাশ করেছেন শ্রাবন্তী। পাশে থাকার অনুরোধ করেছেন এলাকার সিনিয়র বিজেপি নেতাদের।

সংযুক্ত মোর্চা এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে সিপিএমের নীহার ভক্তকে। সারা দিন পরে, সন্ধ্যার দিকে তাঁকে পাওয়া গেল পর্ণশ্রীর কাছে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে। বাড়িতে ছাত্রছাত্রী পড়িয়ে জীবনযাপন করেন ১২৭ নম্বর ওয়ার্ডের এই কাউন্সিলর। প্রশ্ন ছিল, এ বার তো আপনার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এবং সেলিব্রিটি অভিনেত্রী? জবাব এল, ‘‘যে মানুষটা সারা দিন রিকশা চালান, যিনি বাজারে আনাজ বিক্রি করেন, তাঁদেরই আমি সেলিব্রিটি বুঝি।’’ আর তৃণমূল প্রার্থী সম্পর্কে নীহারের বক্তব্য, ‘‘শিল্পমন্ত্রী হয়ে উনি কোন শিল্প এনেছেন? শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে যদি উনি সফল হতেন, তা হলে হাজার হাজার যুবক- যুবতীকে শিক্ষকের চাকরির দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হত না। মাদ্রাসার শিক্ষক-চাকরিপ্রার্থীদের নোংরা জল পেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হত্যে দিতে হত না। এসএসসি, টেট নিয়ে দুর্নীতি নতুন কোনও কথা নয়।’’ তৃণমূল জমানায় শিক্ষাক্ষেত্রের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে সম্পূর্ণ ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলেও তাঁর অভিযোগ। নীহার বলেন, ‘‘বছরের পর বছর কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। হয় না পরিচালন সমিতির বৈঠক।’’

পার্থ কিন্তু দাবি করছেন, সরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল চালু করা থেকে শুরু করে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট জমানায় ‘না হওয়া বহু কিছুই’ তাঁর সরকার করতে পেরেছে। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত বহু শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি— তিন ভাষায় ছাপানো হ্যান্ডবিলে লেখা হয়েছে, ‘শরীরের ছিন্ন বসনটা ছিঁড়ে ফেলে এক নবরূপে সেজেছে আমার, আপনার বেহালা পশ্চিম জনপদ। আগামীর অধিকারের অগ্রাধিকারে বেহালা পশ্চিমের অভিভাবক হাল ধরেছেন শক্ত হাতে।’ আরও দাবি করা হয়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পথ সংস্কার, বস্তি উন্নয়ন, নিকাশি পরিকাঠামোর উন্নয়ন, জমা জলের যন্ত্রণা থেকে মুক্তির ক্ষেত্রে এক সবুজ বিপ্লবের সাক্ষী থেকেছে বেহালা পশ্চিম।

এখন দেখার, বেহালা পশ্চিম পার্থকেই আবার আপন করে নেয় কি না!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy