বাঁধনহীন: রাজ্যে প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমিতের সংখ্যা। তা সত্ত্বেও কোভিড-বিধি ভেঙে প্রচার। —নিজস্ব চিত্র।
গাদাগাদি ভিড়টা তাঁর সঙ্গেই চষে বেড়াচ্ছে এ পাড়া থেকে ও পাড়া। সেই ভিড়ে কারও মুখেই মাস্কের বালাই নেই। নেই দূরত্ব-বিধি মেনে দায়িত্ব পালনের কোনও রকম চেষ্টাও। প্রার্থীও যাঁর সঙ্গে যেমন ভাবে পারছেন, হাত মেলাচ্ছেন। জড়িয়ে ধরার আবেগেও কমতি নেই। গলিঘুঁজির প্রচার সেরে নানা রঙের বেলুন আর পতাকায় মোড়া যে হুডখোলা গাড়িতে গিয়ে প্রার্থী উঠলেন, সেখানেও গাদাগাদি ভিড়!
ভবানীপুরের তৃণমূল প্রার্থী, বছর সাতাত্তরের শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে দেখে বোঝারই উপায় নেই যে, দিন কয়েক আগেই তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। অবস্থা এমন হয়েছিল যে, তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। সেখান থেকে ছাড়ার সময়ে তাঁকে বয়সের কথা মনে করিয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন চিকিৎসকেরা। তবে শুধু শোভনদেববাবুই নন, ভোটবঙ্গে এমন বহু প্রার্থীই রয়েছেন, যাঁরা করোনা-বিধি উড়িয়ে প্রচার সারছেন, নিজেদেরই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও। রাজ্যে সংক্রমিতের সংখ্যা যে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, সে নিয়ে হুঁশ নেই বয়স্ক প্রার্থীদেরও।
শোভনদেববাবু ফোনে বললেন, ‘‘যতটা সম্ভব মানার চেষ্টা করছি। প্রচার তো করতে হবে।’’ তাঁর পুত্র সায়নদেব চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বললেন, ‘‘ভিড়ের মধ্যে যাচ্ছেন ঠিকই, তবে বাবাকে পুরো ঘেরাটোপের মধ্যে রেখেছি। সব জায়গায় আমি নিজে থাকছি। মাস্কও খুলতে দিচ্ছি না। কিন্তু কেউ কাছে এগিয়ে এলে প্রার্থী তো আর তাঁকে দূরে ঠেলে দিতে পারেন না!’’
একই কথা শিলিগুড়ির সিপিএম প্রার্থী, ৭২ বছরের অশোক ভট্টাচার্যের। তিনি বললেন, ‘‘আমার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। যে দিন জ্বর এল, সে দিন তিনটে বাড়িতে গিয়েছিলাম, লকডাউনে মানুষ কেমন আছেন জানতে। বুঝতেই পারিনি আক্রান্ত হব। সেই ভয় সঙ্গে নিয়েই এখন সর্বক্ষণ মাস্ক পরে থাকার চেষ্টা করছি।’’ কিন্তু বহু প্রচারেই তো তাঁকে দেখা যাচ্ছে মাস্কহীন অবস্থায়! থামিয়ে দিয়ে অশোকবাবু বলেন, ‘‘হাত মেলালে তবু সঙ্গে সঙ্গে স্যানিটাইজ়ার দিয়ে নেওয়া যাচ্ছে। কিন্তু জড়িয়ে ধরলে কী করব? আসলে কিছু করারই নেই। ভোট এখন বড় বালাই।’’
এই ভোট বালাইয়ের কথাই বালিগঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী, বছর বাহাত্তরের সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের গলায়। তিনি বললেন, ‘‘আমার এখনও করোনা হয়নি ঠিকই। তবে বয়স যে হেতু বেশি, ভয় তো আছেই। ভ্যাকসিন নিয়েও সে ভয় পুরোপুরি যায় বলে মনে হয় না। মাস্কটা সারাক্ষণ পরার চেষ্টা করছি।’’ কিন্তু বয়স্ক ভোটপ্রার্থীদের মুখে সঙ্গীদের সতর্ক হতে বলার কথা শোনা যায় না কেন? সুব্রতবাবুর দাবি, ‘‘রাজনীতির মিটিং-মিছিলে একটা আবেগ থাকে। সেই আবেগেই অনেক সময়ে নিয়মের কথা মাথায় রাখা যায় না। তবু আমি ছেলেদের সর্বক্ষণ মাস্ক পরে থাকতে বলি।’’ রাসবিহারীর বিজেপি প্রার্থী, বছর চৌষট্টির সুব্রত সাহার আবার দাবি, ‘‘প্রচারের আগে যতই মাস্ক পরার কথা বলে দেওয়া হোক, কেউই শোনেন না দেখেছি। যতই হোক, বয়স তো হয়েছে। তাই করোনা নিয়ে যথেষ্ট ভয়ে রয়েছি। ভাইরাসের মোকাবিলা করে কী ভাবে প্রচার চালাব, সেটা প্রথম থেকেই আমার জন্য একটা বড় চিন্তার ব্যাপার ছিল।’’
করোনায় তো আক্রান্ত হয়েছিলেনই, প্লাজ়মা দানেরও অভিজ্ঞতা রয়েছে বালিগঞ্জের সিপিএমের চিকিৎসক প্রার্থী ফুয়াদ হালিমের। তা সত্ত্বেও প্রচারে বহু জায়গায় তাঁকে মাস্কহীন অবস্থায় ঘুরতে দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ। এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এখন সবটাই প্রার্থীর সচেতনতার উপরে নির্ভর করছে। কিন্তু এটা হওয়ার কথা নয়। দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে কি না, সেটা সরকারের স্পষ্ট করে জানানো উচিত। তা জানানো হলে নির্বাচন কমিশনও কড়া বিধি বেঁধে দিতে পারে। যে হেতু কমিশনের কোনও কড়া বিধি নেই, তাই সবই চলছে প্রার্থীদের সচেতনতার উপরে। আমরা সব সচেতন ভাবেই করছি।’’
চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার যদিও বললেন, ‘‘বিধি আরোপ করতে হবে কেন? নিজে থেকেই তো সতর্ক হওয়া উচিত। যে প্রার্থীদের করোনা হয়ে গিয়েছে, তাঁদেরও যখন অসচেতনের মতো কাজ করতে দেখা যায়, তখন আশাহত লাগে। এখন সব বালাই উড়িয়ে সকলে শুধু ভোটের বালাইকেই বড় করে দেখছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy