মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
তরুণ মুখে আস্থা রেখেই বিধানসভা ভোটের ময়দানে নামছে সিপিএম। দলের ছাত্র ও যুব নেতৃত্বের প্রায় সব উল্লেখযোগ্য মুখকেই এ বার ভোটে প্রার্থী করল তারা। যে নন্দীগ্রাম কেন্দ্র এখন রাজ্য রাজনীতিতে সব আলোচনার কেন্দ্রে, সেখানেও সিপিএম লড়তে পাঠাচ্ছে যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার উপরে জোর দিয়েই এ বার ইস্তাহার ও প্রচারের সুর বেঁধেছে বামেরা। প্রার্থী তালিকা থেকেও ইঙ্গিত স্পষ্ট যে, এ বারের বিধানসভা ভোটে বামেদের নজর তরুণ প্রজন্মের দিকেই।
সংযুক্ত মোর্চার দুই শরিক কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) জন্য জায়গা ছেড়ে রেখে প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ভোটের জন্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছিল বামেরা। একই ভাবে বুধবার কংগ্রেস এবং আইএসএফের জন্য আসন ছেড়ে বাকি ৬ দফার ভোটের জন্য বাম প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে দিয়েছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। সেই তালিকায় রয়েছেন জেএনইউ-এর ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী ঐশী ঘোষ, দীপ্সিতা ধর, যুব নেতা সায়নদীপ মিত্র, দেবজ্যোতি দাস, ছাত্র নেতা সৃজন ভট্টাচার্য, প্রতীক-উর রহমান-সহ বহু তরুণ মুখ। তালিকায় রূপোলি চমক বলতে টালিগঞ্জ কেন্দ্রে অভিনেতা দেবদূত ঘোষ। দলের ‘হেভিওয়েট’ নেতাদের মধ্যে পলিটবুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমকে প্রার্থী করা হয়েছে হুগলির চণ্ডীতলা থেকে। পরিষদীয় রাজনীতির চেনা মুখেদের মধ্যে সুজন চক্রবর্তী, অশোক ভট্টাচার্য, তন্ময় ভট্টাচার্যেরাও আছেন।
এই তালিকায় বামেদের বর্তমান বিধায়কদের মধ্যে অন্তত ৬ জনের নাম নেই। সিপিএমের আনিসুর রহমান, সন্তোষ দেবরায়, আরএসপি-র বিশ্বনাথ চৌধুরীরা শারীরিক ও বয়সজনিত কারণে এ বার আর প্রার্থী হচ্ছেন না। তার বাইরেও মানস মুখোপাধ্যায়, রুনু দত্ত, জাহানারা খানের মতো সিপিএম বিধায়কদের নামও এ দিনের তালিকায় নেই। যদিও বিমানবাবু জানিয়েছেন, কিছু আসন নিয়ে যে হেতু এখনও কংগ্রেস এবং আইএসএফের সঙ্গে আলোচনা চলছে, তাই কারা শেষ পর্যন্ত বাদ পড়লেন, তা এখনও চূড়ান্ত করে বলা যাচ্ছে না।
তৃণমূলের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর সম্মুখ সমরে নন্দীগ্রাম এখন সব চেয়ে উত্তেজক রণাঙ্গন! বাম শরিক সিপিআইয়ের কাছ থেকে নিয়ে সেই আসনে এ বার লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম নিজেই। প্রথমে আইএসএফ আসনটি লড়তে চাইলেও পরে তারা মত বদলায় এবং সক্রিয় হয় সিপিএমও। দলের স্থানীয় স্তর থেকে দুই সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম এলেও এ দিন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে আলোচনার পরে ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভানেত্রী মীনাক্ষীকে নন্দীগ্রামের জন্য বেছে নেয় আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। বিশেষত, বিজেপির তরফে শুভেন্দু প্রার্থী হওয়ার প্রেক্ষিতে সিপিএমের এই পদক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। বিমানবাবুর বক্তব্য, ‘‘নন্দীগ্রাম এখন হট স্পট! ওখানে আমরাই লড়ব। আমাদের প্রার্থী মীনাক্ষী।’’
মীনাক্ষীর বক্তব্য, ‘‘দল যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা পালন করব। শুধু নন্দীগ্রাম নয়, রাজ্যের সর্বত্র লড়াই হবে।’’ মীনাক্ষী স্থানীয় প্রার্থী না হওয়ায় তাঁকে নিয়েও যে কথা উঠতে পারে, তা আন্দাজ করেই বিমানবাবু বলেছেন, ‘‘সারা রাজ্যেই রাজনৈতিক আন্দোলনে উনি অংশগ্রহণ করেন। এ বারের ভোটে বীরভূমের কুসুম্বা গ্রামের কথা এসেছে, যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর মামার বাড়ি। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বীরভূমের মেয়ে নন্দীগ্রামে দাঁড়ালে বহিরাগত হবে কেন? একই ভাবে বলতে পারি, বধর্মানের মেয়ে মীনাক্ষী নন্দীগ্রামে কী ভাবে বহিরাগত হবে?’’
বাম প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হলেও জোটের মধ্যে টানাপড়েন ও সংশয় অবশ্য অব্যাহত। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘আমাদের সঙ্গে আসন-রফা নিয়ে বামেদের আলোচনা চলছে। কিন্তু হঠাৎ করে তালিকা বেরিয়ে গিয়েছে, আমাদের জানা ছিল না! যে আসন আমাদের দেওয়া হয়েছে, সেখানে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে কি না, সেটা দেখে বলতে হবে। সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হবে। তবে কয়েকটা আসনে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হলে সেটা হবে দুর্ভাগ্যজনক।’’ মনোনয়নের দিন চলে যাচ্ছে দেখেও কংগ্রেসের টালবাহানার জেরে তাদের চাপে রাখতেই সিপিএম অবশ্য তালিকা ঘোষণা করে দিয়েছে। বিমানবাবুর বক্তব্য, ‘‘প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রয়েছেন দিল্লিতে। চিঠি-চাপাটি করে আলোচনা চালাতে হচ্ছে। এতে সময় লাগছে। মুখোমুখি বসলে অনেক সহজেই সমস্যা মিটে যেত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy