বিরতি: খেতে খেতে কচুরি বিক্রেতা দেবাশিস চন্দের সঙ্গে গানের ডুয়েটে বাবুল। বিক্রমগড় বাজারে। —নিজস্ব চিত্র।
‘খেলা হবে’ স্লোগানে তাঁর ঘোরতর আপত্তি! কিন্তু মুখে সারাক্ষণ খেলা নিয়েই খই ফুটছে। বেলাশেষের বিক্রমগড় বাজারে আইএসএল ফাইনালের গল্প শোনাচ্ছেন বাবুল সুপ্রিয়— “বামপন্থীরা শুনুন, মুম্বই এফসি-র সঙ্গে খেলা হলে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলকে এক হতে হয়। এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই। একটা ভোটও ও দিকে দেবেন না!” টালিগঞ্জে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে ঘুরিয়ে সবারই সমর্থন চাইছেন তিনি। যা শুনে সিপিএম প্রার্থী দেবদূত ঘোষ বিরক্ত— ‘‘বিজেপি বা তৃণমূলকে আমরা কেন সমর্থন করব?’’
গল্ফ গ্রিনের একটি পার্কে ছোটদের ক্রিকেট দেখে থামল প্রচার-গাড়ি। মাইক হাতে বাবুল বললেন, “বাঁ হাতি বোলার একটা রাউন্ড দ্য উইকেট বল করো তো!” কিশোর ক্রিকেটার নিজের মতোই বল করে! তবু উইকেট আসতেই বাবুল উৎফুল্ল, ‘‘দেখ, আমি ভালবেসে বলতেই উইকেট পড়ে, আর দিদি বিজেপি-কে ফুটবল দিয়ে বোল্ড আউট করতে চাইছেন!’’
শুনে তৃণমূল শিবিরেও সকৌতুক প্রশ্ন, বাবুল সুপ্রিয় খেলা বোঝেন? এই তো সিডনি টেস্টে ভারতের হনুমা বিহারীর ম্যাচ বাঁচানো ব্যাটিংকে কটাক্ষ করে টুইটারে ‘হাস্যাস্পদ’ হলেন। বাবুল তবু নেতাজিনগরে সান্ধ্য ফুটবলে নামছেন। দিল্লি থেকে ট্রেনে চেপে চলে এসেছে তাঁর চকচকে মোটরবাইক। আসানসোলের ভোটযুদ্ধে বীরত্বের স্মারক। কর্মীদের শোনাচ্ছেন, ‘‘কোথাও ঢুকতে বাধা দিলেই মোটরবাইক চালিয়ে ঢুকে পড়তাম!’’ তারকা-গায়কের ‘মোটরবাইক-নাট্য’ও জমজমাট।
আসানসোলে গত দু’টি লোকসভা ভোটের ছায়াই দেখছে এ বারের টালিগঞ্জ কেন্দ্র। ফিল্ম ইউনিটের সর্বময় ডিরেক্টরের ভঙ্গিতে রোড শোয়ের খুঁটিনাটি প্রার্থীর হাতে। তাঁর কব্জিতে ঘড়ির গেরুয়া ব্যান্ড থেকে গাড়ির চালকের গেরুয়া পাগড়ি, সব কিছুতেই নিখুঁত পরিকল্পনার ছাপ। যুব মোর্চার এক নেতা নিষেধ সত্ত্বেও ওঁর গাড়িতে উঠেছিলেন। তাঁকে দেখামাত্র নামিয়ে দিয়ে তারকা-নেতার ঠাট্টা, “দাদা এ বার তৃণমূলের প্রচার করতে চললেন!” মণ্ডল সভাপতি সোমা ঘোষ বা সঞ্জয় দাসেরা শুধু রুট দেখাচ্ছেন। জিতবেন দাবি করেও বাবুল বলছেন, “আমি মন্ত্রী হলেও হারলে ‘ইগো হার্ট’ হবে না! তাই কঠিন কেন্দ্রে লড়তে এসেছি।”
রবিবার সকালে ন’টার বদলে ঢুকতে ঢুকতে বেলা পৌনে ১২টা। বলছিলেন, ‘‘রোদে পোড়ায় সানস্ক্রিন মাখাতে বৌ-মেয়ের মনোযোগ খুব এনজয় করছি!” রুট নিয়ে মন্ত্রীমশাইয়ের হাল্কা গোসা। “কথা ছাড়া প্রচারে কী লাভ!” গাড়িতে মাইক হাতে চলমান সভার উপযোগী রুট খুঁজেই প্রচার শুরু হল।
আসানসোলে ‘কয়লা-মাফিয়া’ বা ‘শত্রু’ পুলিশের সঙ্গে কার্যত অসিযুদ্ধের ভঙ্গিতে ‘আমি মোদীজির চৌকিদার’ বলে তেড়ে যেতেন বাবুল। তবে এ বার সৌজন্য রাখতে বিক্রমগড়ে তৃণমূলের অফিস থেকে একটু সরে প্রচার শুরু হল। বাজার থেকে টলিপাড়ায় তোলাবাজি, সিন্ডিকেট, প্রোমোটারির গুচ্ছ অভিযোগে অরূপ বিশ্বাস ও তাঁর ভাই স্বরূপ বিশ্বাসই বাবুলের নিশানায়। বাজারে বিরিয়ানি-বিক্রেতাকে বলছেন, দোকানে লেবু-লঙ্কা ঝোলাতে হবে না, এ বার সবাই পয়সা দিয়েই খাবে! গল্ফ গ্রিনের সরকারি আবাসনে ঢুকে কর্মীদের বকেয়া ডিএ-র আশ্বাস থেকে চলচ্চিত্র উৎসবে প্রসেনজিৎকে ব্রাত্য রাখার অভিযোগ— সবই আওড়ে চলেছেন তিনি। পুকুরে পানা, পাড়ার জিমের সামনে জটলায় ভুঁড়ির আধিক্য বা বারমুডাধারী প্রৌঢ়ের নীল-সাদা সাজ— সব বিষয়েই বক্তব্য রাখছেন।
টিভি সেন্টারের সামনে যেতে যেতে প্রথম রেকর্ডিংয়ের স্মৃতিচারণ! তার পরেই ঘোষণা— জলসা পরে, আগে এলাকায় জল আসবে! বাবুল বলছেন, “মোদীজি বারাণসীতে না-থাকলেও উন্নয়ন হয়! আমি এখানে থাকি না-থাকি, কাজ দেখবেন। আমার গানে দাগ লাগবে না। অরূপ বিশ্বাসের মতো কোটি টাকার পুজো নিয়ে পড়ে থাকব না!” অরূপ-শিবির শুধু বলছে, তা হলে দুর্গাপুজা হয় বাংলায়? বাকি অভিযোগের জবাব মানুষই দেবে! দুপুরের নাগরিক পল্লিতেই নাক টেনে তারকা-প্রার্থী বলছেন, “আহ্! মাংস হচ্ছে! এ বার আলু দিয়ে ঝোল খেয়ে সব ঘুমোবেন! আর আমায় মিটিংয়ে যেতে হবে!”।
এত নাটকীয়তায় গানও ব্রাত্য নয়। বিক্রমগড়ের কচুরি বিক্রেতা দেবাশিস চন্দের দুটো কচুরি খেয়ে তাঁর সঙ্গে একটু ডুয়েটও হল— কিশোর-লতার ‘গুম হ্যায় কিসি কে পেয়ার মে দিল সুবাহ শাম’। আপ্লুত বিজেপি কর্মীরা তাতে জুড়ে দেন, ‘জয় শ্রী রাম’! প্রচার-গাড়িতে আবার বাবুল গাইলেন, ‘আমার মন বলে চাই চাই গো, যারে নাহি পাই গো...!’
চাওয়া-পাওয়ার এই কঠিন অঙ্কে রবীন্দ্রনাথকে তো থাকতেই হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy