Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Babul Supriyo

Bengal polls: ১৫-১২-১৯৭০: এক জন্মদিন, একই দল, দুই প্রার্থী, দুই কেন্দ্র আর এক প্রতিপক্ষ

বিজেপি-র অন্দরের খবর, টালিগঞ্জে মমতা নিজে প্রার্থী হতে পারেন, এই সম্ভাবনা জোরাল হতেই সেখানে ‘ওজনদার’ প্রার্থী দেওয়ার ভাবনা শুরু হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২১ ২১:২৭
Share: Save:

প্রথমজন ভোট লড়ছেন নন্দীগ্রামে। দ্বিতীয়জনের নাম ঘোষণা হল রবিবার। তিনি লড়বেন টালিগঞ্জে। প্রথমজন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। পেশাদার রাজনীতিক। দ্বিতীয়জন আপাতত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। পেশায় গায়ক এবং অভিনেতা। নেশায় রাজনীতিক। প্রথমজনের প্রতিপক্ষ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয়জনের ‘সম্ভাব্য’ প্রতিপক্ষ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুভেন্দু অধিকারী এবং বাবুল সুপ্রিয়। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট দু’জনকে এক সুতোয় বেঁধে ফেলছে ক্রমশ। কিন্তু তার চেয়েও আশ্চর্য সমাপতন— দু’জনেরই জন্মতারিখ একই— ১৫.১২.১৯৭০। ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭০।

শুভেন্দু এর আগে বিধানসভা এবং লোকসভা ভোটে লড়েছেন। জিতেওছেন। তাঁর শেষ বিধানসভা কেন্দ্রের স্টেশন নন্দীগ্রাম। কিন্তু এবার তাঁর প্রতিপক্ষ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা। পক্ষান্তরে, বাবুলের রাজনৈতিক জীবনে এটিই প্রথম বিধানসভা ভোট। এর আগে ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে পরপর আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে জিতেছেন বাবুল। দু’বারই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন। টালিগঞ্জে তাঁর ‘সম্ভাব্য’ প্রতিপক্ষ সেই মুখ্যমন্ত্রী মমতাই।

বাবুলকে এবার টালিগঞ্জ বিধানসভায় কেন টিকিট দিল বিজেপি? দিল, কারণ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা নন্দীগ্রামের পাশাপাশি টালিগঞ্জে আসনেও ভোট লড়তে পারেন বলে জল্পনা ক্রমশ জোরাল হচ্ছে। সেই কারণেই টালিগঞ্জে বাবুলের বিরুদ্ধে ‘সম্ভাব্য’ প্রার্থী মমতা। এমনিতে ওই আসনের প্রার্থী হিসেবে রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের নাম ইতিমধ্যেই ঘোষিত। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, তৃণমূলের অন্যান্য প্রার্থী ইতিমধ্যেই দেওয়াল-টেওয়াল লিখে জোরকদমে প্রচারে নেমে পড়লেও অরূপকে ময়দানে দেখা যাচ্ছে না। দলীয় সূত্রের খবর, তাঁকে আপাতত ‘ধীরে চলো’ নীতি নিতে বলা হয়েছে। প্রসঙ্গত, তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা ঘোষণার দিনই মমতা হাল্কাচালে তাঁর ঘনিষ্ঠদের কাছে বলেছিলেন, পরে তিনি টালিগঞ্জ থেকেও ভোট লড়তে পারেন। তৃণমূলের অন্দরের রাজনীতি সম্পর্ক ওয়াকিবহালদের মতে, সেদিন থেকেই অরূপ মানসিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন। তাঁকে ওই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কূটনৈতিক জবাব দিয়েছেন অরূপ। বলেছেন, ‘‘মমতা’দি তো রাজ্যের সমস্ত আসনেই প্রার্থী। সেটা তো উনি নিজেই বলেছেন।’’ কিন্তু পাশাপাশি এটাও সত্যি যে, যদি সত্যিই শেষপর্যন্ত মমতা টালিগঞ্জে প্রার্থী হন, তা হলে অরূপের সরে দাঁড়ানো ছাড়া উপায় থাকবে না। সেক্ষেত্রে সরাসরি লড়াই হবে মমতা-বাবুলের। যেমন নন্দীগ্রামে হচ্ছে মমতা-শুভেন্দুর।

শেষপর্যন্ত মমতা নন্দীগ্রামের পাশাপাশি টালিগঞ্জেও লড়লেও তা তাঁর পক্ষে অগৌরবের হবে না। অতীতে ইন্দিরা গাঁধী থেকে শুরু করে নরেন্দ্র মোদী— অনেকেই একাধিক কেন্দ্র থেকে লড়েছেন। একাধিক কেন্দ্র থেকে লড়েছেন সনিয়া গাঁধী এবং রাহুল গাঁধীও। ফলে বিপক্ষ যদি দু’টি কেন্দ্র থেকে লড়ার বিষয়ে মমতাকে আক্রমণও করে, তাহলেও তার পাল্টা জবাব দিতে শাস শিবিরের কোনও অসুবিধা হবে না। বিশেষত, যখন স্বয়ং মোদী ২০১৪ সালে বডোডরার পাশাপাশি বারাণসী থেকেও ভোটে লড়েছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, মমতা ওই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন কি না।

বিজেপি-র অন্দরের খবর, টালিগঞ্জে মমতা নিজে প্রার্থী হতে পারেন, এই সম্ভাবনা জোরাল হয়ে উঠতেই সেখানে ‘ওজনদার’ প্রার্থী দেওয়ার ভাবনা শুরু হয়েছিল। বস্তুত, একটা সময়ে টালিগঞ্জের এক অভিনেত্রীকে ওই আসনে দাঁড় করানোর কথা ভাবছিলেন বিজেপি-র শীর্ষনেতৃত্ব। তাঁ নাম নিয়ে আলোচনাও হয়েছিল দলে। সংশ্লিষ্ট অভিনেত্রীর কাছএ জানতেও চাওয়া হয়েছিল যে, তিনি টালিগঞ্জে দাঁড়াতে ‘স্বচ্ছন্দ’ কি না। ওই অভিনেত্রী ভেবে জানাবেন বলার মধ্যের টালিগঞ্জ নিয়ে মমতার ভাবনার কথা প্রকাশ্যে আসে। তখন বিজেপি নেতৃত্ব ভাবনাচিন্তা শুরু করেন মিঠুন চক্রবর্তীর নাম নিয়ে। এমনকি, শিলিগুড়ির এক কর্মসূচিতে কৈলাস বিজয়বর্গীয় বিধানসভা ভোটে মিঠুনের নাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ভাসিয়েও দিয়েছিলেন। কিন্তু দলীয় সূত্রে খবর, তার পর মিঠুন নিজে ভোটে দাঁড়াতে অনীহা প্রকাশ করেন। তখন বাবুলকে টালিগঞ্জে দাঁড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। বাবুল রাজিও হয়ে যান।

টালিগঞ্জের প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পর বাবুল প্রকাশ্যে রবিবার রাত পর্যন্ত মুখ খোলেননি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠমহলের দাবি, তিনি আদৌ অখুশি নন। বাবুলের এক হিতৈষীর কথায়, ‘‘যদি শেষপর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী টালিগঞ্জে দাঁড়ান, তা হলে বাবুল’দা তাঁর প্রতিপক্ষ হিসেবে আলাদা পরিচিতি পাবেন। নন্দীগ্রামের মতোই টালিগঞ্জও সারা দেশের নজরে থাকবে। যদি মুখ্যমন্ত্রীকে হারিয়ে দিতে পারেন, তা হলে তো কথাই নেই! জায়ান্ট কিলার হয়ে যাবেন। আর যদি হেরেও যান, তাতে অগৌরবের কিছু নেই। হাজার হোক, হারলেও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে হারবেন। আর হেরে গেলেও উনি সাংসদ তো থাকবেনই। কেন্দ্রের মন্ত্রীও থাকবেন। ফলে এতে বাবুল’দার উপর কোনও চাপ নেই। সে কারণেই উনি রাজিও হয়ে গিয়েছেন।’’

কিন্তু বাবুল কি জানেন, এক আশ্চর্য সমাপতনে তাঁর এবং শুভেন্দুর জন্মদিনের সঙ্গে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎও এক সূত্রে গাঁথা হয়ে যেতে পারে? বাবুল-ঘনিষ্ঠ বলছেন, ‘‘উনি তো বলেন, আমরা রাম আর শ্যাম!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy