পুরুলিয়ার বলরামপুরের জনসভায় যোগী আদিত্যনাথ। মঙ্গলবার। ছবি: সুজিত মাহাতো
মঙ্গলবার দুপুর ২টো ১৫ মিনিট। বেলদায় বিজেপির সভাস্থলে যখন পৌঁছলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, মাঠে তখন মেরেকেটে হাজার দেড়েক লোক। চরম অস্বস্তিতে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। অবস্থা বুঝে মঞ্চের পিছনে অস্থায়ী ছাউনিতে ঢুকে পড়লেন যোগী। দলের নেতারা জানালেন, যোগীজি বিশ্রাম নিচ্ছেন। খানিক পরে বক্তৃতা করবেন।
ঘন্টা দেড়েক ‘বিশ্রাম’-এর পরে সাড়ে ৩টেয় যোগী যখন মঞ্চে উঠলেন, বেলদার প্রস্তাবিত স্টেডিয়াম মাঠে তখন হাজার ছয়েক মানুষ। সভাস্থল অনেকটাই ফাঁকা। বক্তৃতা করতে এসে যোগীও বলেন, ‘‘আমি এখানে এক ঘন্টা আগেই চলে এসেছি।’’
অথচ লোক ভরানোর কম চেষ্টা করেননি বিজেপি নেতারা। মাইক্রোফোন হাতে বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি অরূপ দাস বারবার বলেছেন, ‘‘পুলিশকে অনুরোধ, রাস্তায় গাড়িগুলিকে আটকাবেন না। স্বেচ্ছাসেবকদের বলব, রাস্তা থেকে লোকজনকে মাঠে ঢুকিয়ে দিন।’’ এর পরও মঞ্চের সামনের দিকটা ফাঁকা ছিল। যোগীর এক রক্ষী বিষয়টি নজরে আনেন। এর পরই অরূপ বলেন, ‘‘মঞ্চের সামনের জায়গাটা ভরাতেই হবে। আগে এই জায়গা ভরাট করুন।’’ যাঁর সমর্থনে এই সভা, নারায়ণগড়ের সেই বিজেপি প্রার্থী রমাপ্রসাদ গিরির দাবি, ‘‘যোগীজি যাওয়ার পরেও অনেক মানুষ এসেছেন।’’
বাঁকুড়ার রাইপুরের ফুলকুসমার বালি ময়দানে যোগীর সভা ছিল দুপুর একটায়। যথাসময়েই তা শুরু হয়। হাজার তিরিশেক লোকের আয়োজন করা হলেও বিজেপি নেতৃত্বই বলছেন, হাজার পনেরো লোক হয়ছিল। কারণ হিসাবে পরপর দু’দিন দক্ষিণ বাঁকুড়ায় অমিত শাহ ও যোগীর সভা থাকা এবং ভরা দুপুরের গরমের কথা বলছেন তাঁরা। পুলিশের হিসেব, সভাস্থলের সিকি ভাগ ভরেছিল এখানে। যোগী আসার আগে হাজার পাঁচেক লোক ছিল। বক্তৃতার সময়ে আরও হাজার দেড়েক আসে।
এ দিন জমাটি ভিড় দেখা যায়নি বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার রোড শো-তেও। বিষ্ণুপুর কুমারী টকি থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রোড শো হওয়ার কথা ছিল বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ। নড্ডা আসেন ২টোর কিছু পরে। পুলিশের হিসেবে হাজার দুয়েক হোক হয়েছিল। বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজিত অগস্তির দাবি, সংখ্যাটা দশ হাজার। পরে নড্ডার সভা ছিল কোতু লপুরের বাগরোলে, বিকেল ৩টেয়। শুরু হয় ৫টার কিছু পরে। সেখানেও মাঠ ভরেনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে আদিত্যনাথ, নড্ডা— বিজেপির তাবড় নেতাদের সভার এই দশা দেখে বিঁধছে তৃণমূল। এ দিন পুরুলিয়ায় রঘুনাথপুরের সভায় তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বহিরাগতদের বাংলার মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন। সকালে চায়ের দোকানে যা ভিড় হয়, বিজেপির সভায় সেই ভিড়ও হচ্ছে না। দেখলাম যোগী আদিত্যনাথ সভায় পুরো মাঠ ফাঁকা। গ্রামে সরস্বতী, কালী পুজোর বিসর্জনে এর চেয়ে বেশি লোক হয়।’’
এ দিন বেলদার সভায় দুর্নীতি এবং অরাজকতার প্রশ্নে তৃণমূল সরকারকে বিঁধেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিল রাম-বন্দনা। যোগী বলেন, ‘‘জয় শ্রীরামে আপত্তি কেন? মনে রাখবেন, রামের বিরোধিতা যে-ই করেছে, মানুষ তাকে যোগ্য জবাব দিয়েছে।’’ মেদিনীপুরের মানুষকে অযোধ্যায় রামমন্দির দর্শনের আহ্বান জানান তিনি। বেলদার আকাশে সূর্য তখন পশ্চিমে ঢলেছে। উত্তরপ্রদেশের মতো বাংলাতেও ডাবল ইঞ্জিন সরকার গড়ার ডাক দেন যোগী। দাবি করেন, ‘‘বাংলায় নতুন ভোর আসবে।’’
বাঁকুড়ার রাইপুরের ভোট সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘কপালে একটা তিলক কেটে, মুখে পানমশলা চিবোতে চিবোতে এক গুন্ডা ছদ্মবেশে আসে। এরা বাইরে থেকে গুন্ডা নিয়ে আসছে আর এলাকায় হামলা করছে।’’ মমতার মন্তব্য, ‘‘মনে রাখবেন, বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে মেয়েরা সব থেকে বেশি অত্যাচারিত। ধর্ষিতার বাবা অভিযোগ জানাতে গেলে তাঁকেও খুন করা হচ্ছে।’’ যোগী-রাজ্যে আদিবাসী ও দলিতদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ করে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘বাংলায় মা-বোনেরা শান্তিতে আছেন।’’
(তথ্য: বরুণ দে, সুশীল মাহালি, অভিজিৎ অধিকারী)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy