Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Darjeeling

bengal polls: গড়রক্ষার যুদ্ধে ফাটল ধরাচ্ছেন দলত্যাগীরা  

বিদায়ী বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য ২০১১ সালে পরিবর্তনের নির্বাচনে হাজার পাঁচেক ভোটে হেরেছিলেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২১ ০৮:০৯
Share: Save:

‘গুরু-শিষ্যের লড়াই’ দেখছে মানুষ!

নদী না নালা বোঝা দায়। নাম জোড়াপানি। শিলিগুড়ির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে নদীর এই অংশে আবর্জনার স্তূপ জমে। ফি বর্ষায় জল ছাপিয়ে ঢোকে লাগোয়া বস্তিতে, গরিব বাসিন্দাদের বাড়িতে। তখন রাত জেগে, নাওয়া-খাওয়া ভুলে দুর্ভোগ পোহান তাঁরা। এ সব নিয়ে কাকে বলবেন? ভোটের সময় সেই সুযোগ আসে!

বিদায়ী বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য ২০১১ সালে পরিবর্তনের নির্বাচনে হাজার পাঁচেক ভোটে হেরেছিলেন। পরে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কাম ব্যাক’-এর মন্ত্রে লড়ে ২০১৫ সালে শিলিগুড়ির মেয়র হন। পরের বছর ফের বিধায়ক। প্রচারে তাঁকে এলাকায় দেখে বাসিন্দারা বলেন, ‘‘এ বার অন্তত জল জমার সমস্যাটা দেখুন।’’ আশ্বাস দেন প্রার্থী। বারবার প্রচারেও যাচ্ছেন। কেন হঠাৎ নিজের ওয়ার্ডের থেকেও এই জায়গাটিকে বাড়তি গুরুত্ব?
কারণ, এখানকার কাউন্সিলর যে ছিলেন শঙ্কর ঘোষ। এক সময়ে অশোকের ঘনিষ্ঠ শিষ্য, এখন গুরুর বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী। হাতে এখনও তাঁর চে গেভারার ট্যাটু। তবে গলায় গেরুয়া উত্তরীয়।

দুই লক্ষ পঁচিশ হাজার ভোটার। মাড়ওয়াড়ি ভোটের অধিকাংশ বিজেপির দিকে বলে চাউর হয়েছে। অশোকবাবুর দাবি, ‘‘সেই ভোট তো ৩৫ শতাংশের মতো। অবাঙালি ভোট তো আরও আছে।’’ জেলা সিপিএম কার্যালয়ের এক নেতা মজা করে বলেন, এই শহরেই কান পাতলে ‘অশোক আগরওয়াল’ নাম-ও শোনা যায়। মুচকি হাসেন অশোক, ‘‘ওই ভোটের একাংশ আমার দিকেও রয়েছে।’’ শঙ্করকে অবশ্য এখন আর শিষ্য বলতে নারাজ তিনি। বলেন, ‘‘মানুষ দলত্যাগ ভাল ভাবে নেয় না। লোভের বশে নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে ও যেটা করেছে, তাতে লোকে ছ্যা-ছ্যা করছে।’’ শঙ্করেরও পাল্টা উত্তর, ‘‘আমি তাঁর শিষ্য হব কেন? যখন ক্ষমতায় থাকেন, লোককে চেনেন না। বুঝতে পারছেন না, মানুষ এখন তাঁর পাশে নেই।’’

বর্ধমান রোডে ব্যবসায়ীদের সভায় প্রচারে শঙ্কর বলছেন, ‘‘আপনারা কাকে চান? যাকে দিয়ে কাজটা হবে, শহরের সমস্যাগুলো মিটবে, নাকি যিনি শুধু চিঠি লিখবেন?’’ অশোককে কটক্ষ করে বলেন, ‘‘চিঠি লিখে লিখে বই ছাপালে হবে?’’ শহরের ট্র্যাফিক সমস্যা, মহানন্দার দূষণ, পানীয় জল সমস্যা, কর্মসংস্থানের অভাব, কিছুই মেটেনি বলেই শঙ্করের দাবি। এবং তাঁর আশ্বাস, ‘‘সুযোগ দিলে স্বপ্নের শিলিগুড়ি গড়ব।’’

‘গুরু-শিষ্যের লড়াই’ দেখছে মানুষ।

আশোকবাবুর দাবি, ‘‘বড় বড় কথা। শিলিগুড়ির জন্য রাজ্য কিছু করেছে, না কেন্দ্র? আমরা মাথা নত করিনি। লড়াই করে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কিছু বরাদ্দ এনে পুরসভা থেকে শহরের উন্নয়ন কাজ করেছি।’’

ব্যান্ডপার্টি নিয়ে বিধানমার্কেটে ঘটা করে প্রচার করছেন তৃণমূল প্রার্থী ওমপ্রকাশ মিশ্রও। তৃণমূলের প্রার্থীর দাবি, ‘‘প্রচারে ভাল সাড়া মিলছে।’’ তবে বহিরাগত প্রার্থী নিয়ে তৃণমূলে অন্তর্দ্বন্দ্ব শোনা যায়। দলের কেউ নাকি বিজেপি, কেউ সিপিএমের সঙ্গে তলে তলে যোগ রেখেছে। তৃণমূল তা অস্বীকার করেছে। গত লোকসভা ভোটে শিলিগুড়ি আসনে ৭৩ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়েছে বিজেপি। বাম, কংগ্রেস দাঁড়াতেই পারেনি। হাওয়া তেমন থাকলে অশোকের বিপদ বাড়বে, বলছেন স্থানীয়রাই।

জেলা সিপিএমের দফতরে বরং চর্চা, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি কেন্দ্র নিয়ে। সেই চর্চার মূল আলোচ্য, প্রার্থী বদল করে বোকামি করেছে তৃণমূল। একটি সূত্রের দাবি, এলাকায় রাজবংশী ভোট নেপালি ভোটের থেকে বেশি। তাই উত্তরবঙ্গের বুদ্ধিজীবী সেলের আহ্বায়ক তথা রাজবংশী মুখ নলিনীরঞ্জন রায়কে বদলে প্রাক্তন আমলা রাজেন সুনদাসকে প্রার্থী করে সুবিধা হবে না তৃণমূলের। তৃণমূলের একাংশের দাবি, এলাকায় নেপালি ভাষাভাষীর ভোটের কথা ভেবে বিমল গুরুঙের পরামর্শে রাজেনকে প্রার্থী করা হয়। তাতে তাঁর সুবিধা হয়েছে বলে দাবি বিজেপি প্রার্থী আনন্দ বর্মনের। এই দাবি তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম মনোভাবাপন্নদের একাংশেরও। আনন্দের কথায়, ‘‘আমরা এই কেন্দ্রে জিতব, একশো শতাংশ নিশ্চিত। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো নেতারাও তাই
প্রচার করছেন।’’ গত লোকসভা ভোটে এই বিধানসভা থেকে ৬৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। বাম, কংগ্রেসের ১১, তৃণমূল ২০ শতাংশের মতো ভোট ছিল।

রাজেনের দাবি, ‘‘মানুষের সমর্থন আমাদের সঙ্গেও রয়েছে।’’ কেপিপি নেতা অতুল রায়ের কথা, তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে। রাজবংশী ভোট পেতে তাঁর দিকেও তাকিয়ে তৃণমূল। তবে প্রার্থী বদল করায় সংশয় তো আছেই, মানছেন দলেরই অনেকে। এলাকার এক চায়ের দোকানি বলেন, ‘‘বিজেপি প্রার্থীর কথা লোকে বলছেন। শেষ বেলায় প্রার্থী বদলে তৃণমূল প্রচারে পিছিয়ে পড়েছে। দেখা যাক কী হয়।’’ গত দু’বারের বিদায়ী বিধায়ক, মোর্চার হয়ে কংগ্রেসের প্রার্থী শঙ্কর মালাকার। কংগ্রেসের মরা বাজারেও গত দু’-দু’বার তিনি কখনও তৃণমূলের, কখনও বামেদের সঙ্গে নিয়ে ঠিক জিতেছেন। বলছেন ‘‘এবার লড়াই কঠিন। তবে নেপালি ভোট, রাজবংশী ভোট, এলাকার ২৫টি চা বাগানের ভোট কারও একার নয়। অনেক মানুষ পাশে থাকবেন বলে বিশ্বাস করি।’’

শঙ্করের মতো লড়ছেন ফাঁসিদেওয়ার দু’বারের বিধায়ক সুনীল তিরকিও। তিনি নিজেই বলেন, ‘‘এ বার পরিস্থিতি একটু কঠিন। বিরোধীরা টাকা ছড়াচ্ছে। আমাদের অর্থ বল কম।’’ তৃণমূল প্রার্থী ছোটন কিস্কু বাম জমানার প্রাক্তন বিধায়ক, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের প্রাক্তন সহকারি সভাধিপতিও। সাড়ে তিন বছর তৃণমূলের ঘর করছেন। জনজাতির জন্য সংরক্ষিত এই বিধানসভায় ভোটার ২,৩৮,৪৫৮। ছোটবড় মিলিয়ে ২৫টি বাগান রয়েছে। চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বেড়ে ২০২ টাকা হয়েছে। যা গত কয়েক মাস ধরে হাতে পাচ্ছেন। ছোটনরা চা সুন্দরী এবং মজুরি বৃদ্ধির কথা প্রচার করছেন। বাগানে সিপিএমের প্রভাবও রয়েছে। ছোটন বলেন, ‘‘সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীকে লোকে চাইছেন না। গত
১০ বছরে তাঁকে লোকে বিপদে আপদে পায়নি।’’

এই বিধানসভায় দু’টি ব্লক। ফাঁসিদেওয়ার চেয়ে খড়িবাড়িতে তিনি অনেকটাই এগিয়ে যাবেন বলে দাবি বিজেপি প্রার্থী দুর্গা মুর্মুর। কৃষক পরিবারের ছেলে। গত বিধানসভা ভোটেও দাঁড়িয়েছিলেন। গাড়ির ছাদে লোকজন নিয়ে বসে কড়া রোদে ঘুরছেন। দুই হাত নেড়ে, কখনও হাত জোড়া করে প্রচার চালাচ্ছেন। দুর্গা বলেন, ‘‘মানুষের আশীর্বাদ চাইছি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy