স্মৃতি: গোয়াবাগানের বাড়িতে সন্দীপ ঘোষের ছবি হাতে স্ত্রী সুজাতা এবং ছেলে সায়ন। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী পালিয়ে এসেছেন কি না, খোঁজ করতে এক দুপুরে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিল পুলিশ। আচমকা পুলিশ পৌঁছনোয় হকচকিয়ে গিয়েছিলেন রোগীর পরিজনেরা। হাসপাতালে ফোন করে তাঁরা জানলেন, রোগী নিখোঁজ। তাই স্বাস্থ্য দফতর থেকেই পুলিশ পাঠানো হয়েছিল খোঁজ করতে। রাতে সেই হাসপাতালই প্রায় ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে জানাল, রোগী মারা গিয়েছেন! দুপুরে মৃতদেহ গুনতির সময়ে ‘হিসেবে’ ভুল হয়ে গিয়েছিল।
গোয়াবাগানের বাসিন্দা, করোনায় মৃত সন্দীপ ঘোষের পরিবারের কাছে গত মে মাসের করোনাকালের এই ভুল যে আরও নিদারুণ পরিণতি নিয়ে অপেক্ষা করছে, তা তাঁরা বুঝতে পারেন পরের কয়েক দিনে। হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ জানাতে সন্দীপবাবুর স্ত্রী সুজাতা ঘোষ বড়তলা থানায় গেলে সেখান থেকে তাঁকে বৌবাজার থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কারণ হিসেবে জানানো হয়, ঘটনাটি যে সরকারি হাসপাতালের, সেটি ওই থানারই অন্তর্গত। অভিযোগ, বৌবাজার থানায় গেলে সুজাতাদেবীকে বলা হয়, ‘‘এ ভাবে তো অভিযোগ জানানো যায় না। সরকারি হাসপাতালের ঘটনা, ফলে সেখানকার সুপারের কাছেই অভিযোগ জানাতে হবে!’’ করোনা পরিস্থিতিতে শুধু সুজাতাদেবী কেন, করোনায় মৃতের পরিবারের সঙ্গেই হাসপাতালের সুপার দেখা করে অভিযোগ শোনার মতো পরিস্থিতি ছিল না। স্বভাবতই, তা হয়নি।
এর পরে শুরু হয় মৃতের ডেথ সার্টিফিকেট পেতে হয়রানি। সেই সময়ে অভিযোগ উঠছিল, মৃতের নাম, বয়স, ঠিকানায় ভুলের পাশাপাশি কখনও কখনও মৃত্যুর তারিখ পর্যন্ত লিখে দেওয়া হচ্ছে এক বছর আগের! ওই সময়েই হওয়া ঘূর্ণিঝড় আমপানের পরে ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়া আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায় বলে অনেকের দাবি। অভিযোগ, একাধিক বার ঘোরানোর পরে সন্দীপবাবুর পরিবারকেও বলে দেওয়া হয়, ‘‘পরে আসুন। ঝড়ের জন্য এখনও সার্টিফিকেটের ভুল শুধরে আসেনি। তাড়া থাকলে পেন দিয়ে ঠিক করে দেওয়া হবে।’’
ভোটের আবহে বঙ্গে করোনার সংক্রমণ নতুন করে বাড়তে দেখে সেই আতঙ্কের স্মৃতিই যেন ফিরে আসছে সুজাতাদেবীদের। পরিস্থিতি দেখে তাঁদের মনে হচ্ছে, বিপদ এড়াতে এখনই ভোট বন্ধ হওয়া উচিত। সুজাতাদেবী বললেন, ‘‘ভোট দিয়ে কী হবে? কোনও নেতা-নেত্রী মাস্ক পরছেন না। ভোটের জন্যই তো করোনা লাফিয়ে বাড়ছে। আমি ভোট দিতে যাওয়া মানে, যাঁরা সতর্ক হচ্ছেন না, তাঁদেরই পরোক্ষে সমর্থন করা। আমার স্বামীর সঙ্গে যা হয়েছে, সেটাই অন্য কারও সঙ্গে হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করে দেওয়া।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘ভোট দেবই বা কাকে? সদ্য প্রিয়জন হারানো কাউকে কেন অত হয়রানির মধ্যে পড়তে হবে, এর উত্তর কি কেউ দিতে পারবেন? পিতৃহারা ছেলেটা কবে চাকরি পাবে, সেটাও কি কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবেন?’’
সন্দীপবাবু ছিলেন চিত্রশিল্পী। তাঁর আয়েই চলত গোয়াবাগানের সংসার। তিনি যখন মারা যান, ছেলে সায়ন কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সেই ছেলের ইচ্ছে ছিল, ব্যাঙ্কে চাকরি করবেন। হঠাৎ বাবার মৃত্যুর পরে সেই স্বপ্ন দেখা ছেড়ে এখন একটি ল্যাবরেটরিতে রাতের কর্মী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন ওই তরুণ। পড়া শেষ হয়নি। শেষ হবে কি না, তা-ও জানা নেই। বছর বাইশের তরুণ বললেন, ‘‘গত এক বছরে অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে আমাদের। সব নেতা আর ভোটারদের কাছে অনুরোধ, এমন অসাবধানতার নজির গড়বেন না, যাতে আমার মতো আরও অনেকের জীবন বদলে যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy