মানুষের ঢল: রবিবার ব্রিগেডে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটের সভায়। ছবি: সুমন বল্লভ
ব্রিগেডে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ-এর সমাবেশে বিপুল ভিড় নিয়ে তরজা শুরু হল তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে। সরাসরি কারও নাম না করেও তৃণমূলের কটাক্ষ, মাত্র ৭ শতাংশ ভোট নিয়ে বামেরা ব্রিগেড ভরায় কী ভাবে? বিজেপির দিকে ইঙ্গিত করে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি, বামেদের ব্রিগেডে লোক জুগিয়েছে আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফ এবং তাদের এই ভূমিকার পিছনে রয়েছে অন্য কোনও মৌলবাদী শক্তির মদত। অন্য দিকে, বিজেপির দাবি, বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ এর ব্রিগেড সমাবেশের ভরাতে লোক দিয়েছে তৃণমূলই।
ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং আইএসএফ-এর সমাবেশে এ দিন দৃশ্যতই ভাল ভিড় হয়েছিল। সে প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বাঁকুড়ার ইঁদপুরে সাংবাদিক বৈঠকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘রাজ্যে লোকসভার ফলের নিরিখে ওঁদের (বাম নেতৃত্বের) ৭ শতাংশ ভোট আছে। সেই ভোট নিয়ে ওঁরা যদি ব্রিগেডে বড় সমাবেশ করতে পারেন, তা হলে ভাল! কিন্তু নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হবেন।’’ পাশাপাশি, তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়েরও মন্তব্য, ‘‘বামেরা কোনও ভাবে ব্রিগেড ভরিয়েছে। কিন্তু ভোটে তারা অস্তিত্ব ধরে রাখতে পারবে না।’’ বিপরীতে বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এ দিন লাভপুরে দাবি করেছেন, ‘‘সিপিএম, কংগ্রেস, আব্বাস সিদ্দিকির এত লোক জোগাড়ের ক্ষমতা ছিল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে ওদের ব্রিগেডে লোক দিয়েছেন।’’
গত কয়েক বছরে বামেদের ব্রিগেড সমাবেশে ভিড় হলেও ভোটবাক্সে তার প্রতিফলন হয়নি। বরং, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বামের ভোটের খানিকটা বিজেপি পেয়েছিল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন। এ দিন সেই প্রেক্ষিতে ব্রাত্যবাবু বাম নেতৃত্বের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘‘আমাদের একটাই অনুরোধ, আপনাদের কর্মীদের বোঝান যে, এখানে বামপন্থার প্রকৃত ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। ফলে বামপন্থী হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোট দিন বা নিজেদের দলকে ভোট দিন। ভোট দয়া করে ট্রান্সফার করবেন না। বাম রাম হচ্ছে, দেখতে ভাল লাগে না।’’ রাজ্যের আর এক বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘বামেদের হাত থেকে চলে যাওয়া ভোট তাদের কাছে ফিরে এলে তো ভালই। আমরা তো সেটাই চাই।’’
সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের অবশ্য পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘ব্রিগেড ভরাতে আমাদের চার্টার্ড বিমান লাগে না। মানুষ ভালবেসেই সমাবেশে আসেন।’’
তবে এ দিন ব্রিগেডে আব্বাসের অংশগ্রহণ এবং তাঁকে ঘিরে শ্রোতাদের একটা বড় অংশের উচ্ছ্বাসকে সন্দেহের চোখে দেখছে তৃণমূল। সুব্রতবাবুর কথায়, ‘‘আমরা কংগ্রেস এবং বামেদের রাজনৈতিক বিরোধী হলেও একটা বিষয়ে তাদের সম্পর্কে গর্ব বোধ করতাম যে, তারা ধর্মনিরপেক্ষ। কিন্তু আজকের পর আর তারা নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বা অসাম্প্রদায়িক বলতে পারবে না।’’
বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ-এর এ দিনের ব্রিগেড সমাবেশ নিয়ে বিজেপির সমালোচনাও মূলত আব্বাস-কেন্দ্রিক। পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুরের নীলদার সভায় শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘আজকে একটা ব্রিগেড হয়েছে। বামপন্থীরা বলবেন ধর্মনিরপেক্ষতার কথা! পাশে আব্বাস সিদ্দিকিকে নিয়ে মিটিং করেছেন। এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হবেন মহম্মদ সেলিম। আর উপ মুখ্যমন্ত্রী হবেন আব্বাস সিদ্দিকি।’’ শুভেন্দুর বার্তা, ‘‘বামপন্থীরা সাবধান। আপনাদের ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি আর চলবে না। আসুন আপনারা বিজেপিতে। যার একমাত্র স্লোগান ভারত মাতা কি জয়।’’
আগামী রবিবারেই ব্রিগেডে বিজেপির সভায় আসার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। সেখানে এ দিনের চেয়ে বেশি লোক আনার চ্যালেঞ্জ নিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘সিপিএম, কংগ্রেস, আব্বাস ভাইয়েরা এক ঝুড়ি লোক নিয়ে ব্রিগেড করেছে। হয়তো কিছু লোক হয়েছে। এর থেকে পাঁচগুণ বেশি লোক বিজেপি করবে। সবাইকে যেতে হবে। প্রতিটি বুথ থেকে গাড়ি করে মোদীজির ব্রিগেডে যেতে হবে।’’
রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘আজ ইনকিলাব জিন্দাবাদ ধ্বনি কার্যত ম্লান হয়ে গিয়েছে। যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির কথা বলেছেন, যাঁরা জয় শ্রীরামে সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ পান, সেই বাম এবং শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেস নেতৃত্ব আজ ভাইজানের কাছে, সাম্প্রদায়িকতার কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy