তারাপীঠ-রামপুরহাট রাস্তা। নিজস্ব চিত্র।
ধাক্কাটা এসেছিল গত বিধানসভা নির্বাচনে। বীরভূম জেলার ১১টি আসনের মধ্যে হাঁসনে কংগ্রেসের কাছে হারতে হয়েছিল তৃণমূলকে। পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী আর কেউ নন, এলাকার পাঁচ বারের বিধায়ক অসিত মাল। তাঁকে হারিয়ে দেন বর্তমান জেলা কংগ্রেসর সভাপতি মিল্টন রশিদ। সেই অসিত মালকে ২০১৯ সালের লোকসভা আসনে বোলপুর কেন্দ্র থেকে জিতিয়ে আনে তৃণমূল। তবে, এ বার ভোটে হাঁসন কেন্দ্র পুনরুদ্ধার করতে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব মরিয়া।
২০১৬ সালে প্রায় ১৬ হাজার ভোটে হাঁসন হাতছাড়া হাওয়ার পর থেকেই কী ভাবে ওই কেন্দ্র নিজেদের দখলে আনা যায়, তার জন্য চেষ্টা শুরু করে তৃণমূল। বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন নলহাটি ২ ব্লকের ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং রামপুরহাট ২ ব্লকের ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতে বাম-কংগ্রেস জোটে ভাঙন ধরাতে একের পর এক দু’দলের নেতাদের তৃণমূল নিজেদের দিকে টেনে নিতে থাকে। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতেই তৃণমূল জয়ী হয়। নলহাটি ২ পঞ্চায়েত সমিতি এবং রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতিও তৃণমূল দখল করে। জেলা পরিষদের ৪টি আসনেই তৃণমূল প্রার্থীরা বিনা লড়াইয়ে জয়ী হন।
তৃণমূলের নেতারাও আড়ালে মানছেন, হাঁসন কেন্দ্রে লড়াইটা কঠিন। অসিত মাল হাঁসন থেকে কংগ্রেসের টিকিটেই পাঁচ বার জিতেছিলেন। ২০১৬-র বিধামসভা ভোটের আগে তাঁর হটাৎ তৃণমূলে যোগ দেওয়াটা স্থানীয় বাসিন্দাদের বড় অংশ ভাল চোখে দেখেননি বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তা ছাড়া, বিদায়ী বিধায়ক মিল্টন রশিদ এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয়। নানা ভাবে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেন তিনি। করোনা আবহে লকডাউনের সময়েও তাঁর অনেক উদ্যোগ এলাকায় প্রশংসা কুড়িয়েছে। সারা বছর এলাকায় থেকে তিনি রাজনীতি করার চেষ্টা করেন। স্থানীয় নানা অনুন্নয়ন নিয়ে বারবার সরবও হয়েছেন।
এ হেন মিল্টনের মোকাবিলা রাজনৈতিক ভাবে করার পাশাপাশি উন্নয়ন করেও করার চেষ্টা চালিয়েছে তৃণমূল। তারা মিল্টনের বিরুদ্ধে উন্নয়ন না-করার অভিযোগ তুলছেই। এ ছাড়া, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি মেনে বীরভূম জেলা পরিষদের উদ্যোগে দুনিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন ৮টি গ্রামের মানুষের বছরে চার মাসের বেশি সময় জলবন্দি দশা ঘোচাতে ভাংলা কাঁদরের উপর পাকা সেতু নির্মাণ করেছে। কালুহা, হাজারপুর-সহ বিভিন্ন গ্রামে পরিস্রুত পানীয় জল প্রকল্প সরবরাহ চালু করেছে। মাড়গ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, তারাপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামোগত উন্নতি করা হয়েছে। তারাপীঠ-রামপুরহাট দুই লেনের নতুন রাস্তা হয়েছে। তৃণমূলকে আশায় রেখেছে ২০১৯-এর লোকসভার ভোটের পরিসংখ্যানও। সেই হিসেব অনুযায়ী, তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায় হাঁসন কেন্দ্র থেকে ৩০ হাজার ভোটের ‘লিড’ পেয়েছিলেন। হাঁসনে এ বার তৃণমূল প্রার্থী করেছে সিউড়ির বিদায়ী বিধায়ক, চিকিৎসক অশোক চট্টোপাধ্যায়কে। অশোকবাবুর দাবি, ‘‘বর্তমান বিধায়ক বাসিন্দাদের দাবিপূরণে ব্যর্থ। আমাদের সরকার এলাকার অনেক উন্নতি ঘটিয়েছে।’’
অভিযোগ মানতে চাননি মিল্টন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এক জন বিরোধী বিধায়ক হিসেবে বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে যতটা সম্ভব উন্নয়ন করা হয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, বিরোধী বিধায়কদের কাজ করতে দেওয়া হয় না। উন্নয়নের স্বার্থে মাড়গ্রামে দ্বারকা নদের উপর সেতু নির্মাণ-সহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী থেকে জেলা প্রশাসনের কাছে বারবার দরবার করা সত্ত্বেও শোনা হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy