দীপক রাগ: পিতৃদত্ত নাম দীপক চক্রবর্তী। বাড়িতে সকলে ‘দীপু’ বলেই ডাকতেন। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে ‘দীপক’ নামটা বোধহয় চলে না। তাঁর অনেক পরে আরও একজন ‘দীপক’ হয়েছেন ‘দেব’। যেমন তাঁর সিনিয়র নায়ক নাম নিয়েছিলেন ‘চিরঞ্জিত’। তাঁর নাম সেই বলেই খ্যাত।
মিত্রভাবাপন্ন: উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে । তার পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়তে শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেই পাঠ শেষ করেননি। একদা বেশ কিছুটা সময় ‘দেশ’ পত্রিকার প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। দূরদর্শনে সংবাদপাঠক হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছিলেন। অভিনয় করেছেন মঞ্চেও। কিন্তু শেষপর্যন্ত তাঁর গন্তব্য হয়ে দাঁড়াল সেলুলয়েড। এবং অতঃপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে ঘাসফুলের অরণ্যে।
অনিচ্ছুক-ইচ্ছুক: বিধানসভা ভোটের আগে মমতাকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, আর ভোটে দাঁড়াতে চান না। বয়স হয়ে গিয়েছে। এখন উনসত্তর প্লাস চলছে। অনিচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন প্রকাশ্যেই। মমতা শোনেননি। তাই বারাসতে এবার আবার তৃণমূলের প্রার্থী বর্ষীয়ান অভিনেতা। অনিচ্ছুক থেকে ইচ্ছুক রাজনীতিক হয়েছেন।
টিকা-টিপ্পনি: বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে নেমে প্রথম টিকাকরণের পরে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। তবুও বারাসত থেকে প্রতিদিন পাঁচটা করে ওয়ার্ড ঘুরেছেন। সঙ্গে থাকত ওআরএস এবং ডাবের জল। এমনিতে সব খাবারই পছন্দ। তবে এই কড়া রোদে প্রচারের সময় দুপুরে মাছের পাতলা ঝোল আর ভাত। রাতেও তা-ই।
বউ-মা-পাগলা: বাংলা ছবিতে তাঁর সংলাপ এখনও অমর— ‘‘বউ হারালে বউ পাওয়া যায়। মা হারালে মা পাওয়া যায় না রে পাগলা!’’ নির্ঘাত জানেন, ভোট হারালে ভোটও পাওয়া যায় না। তাই জোরদার খাটছেন। ঘুরছেন। ভোট চাইছেন।
ফেলুদায় ফেল: একটা সময়ে খুব ইচ্ছে ছিল ‘ফেলুদা’র ভূমিকায় অভিনয় করার। তবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পরে সব্যসাচী চক্রবর্তী যখন ‘ফেলুদা’ হলেন, তখন চিরঞ্জিতের মনে হয়েছিল, ওটাই ঠিক হয়েছে। নিজে ‘ফেলুদা’ হতে না পারলেও পরবর্তী প্রজন্মের অভিনেতাদের প্রশংসাই করেছেন। বলেছিলেন, ‘‘ব্যোমকেশ আর ফেলুদা— দুটোই আবির করেছে। ভালই করেছে। তবে মনে হয় ব্যোমকেশ একটু বয়স্ক। তাই উত্তমকুমারকে দারুণ মানিয়েছিল।’’
কিরীটহীন কিরীটী: সাহিত্যিক নীহাররঞ্জন গুপ্তের সঙ্গে পারিবারিক যোগাযোগ। ছোটবেলা থেকেই নীহাররঞ্জনের গোলপার্কের বাড়ি ‘উল্কা’-য় যাতায়াত ছিল। নীহাররঞ্জনকে দেখে মনে হত, উনি সক্কলের চেয়ে আলাদা। পরে মনে হয়েছিল অন্য কেউ নন। গোয়েন্দা কিরীটীর স্রষ্টা নিজেই স্বয়ং কিরীটী। বাবা নামজাদা আঁকিয়ে শৈল চক্রবর্তী কিরীটীর বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকতেন। সেখান থেকেই কিরীটীকে নিয়ে চিরঞ্জিতের মুগ্ধতা শুরু। পরিচালক অঞ্জন দত্তকে অনেক দিন আগে একবার বলেওছিলেন ‘কিরীটী’-কে নিয়ে ছবি করার জন্য। শেষমেশ হয়ে ওঠেনি।
রহস্যরোমাঞ্চ সিরিজ: সমুদ্র তাঁর ভারী একঘেয়ে লাগে। চিরঞ্জিত বেড়াতে যেতে চান পাহাড়ে। কারণ, পাহাড়ের অচেনা বাঁকের রহস্য তাঁকে এখনও আকৃষ্ট করে।
তারকায় পাস (১): তিনি কোনওদিন বলেননি ‘‘আমিই ইন্ডাস্ট্রি।’’ কিন্তু তিনিও বিশ্বাস করেন, বাণিজ্যিক ছবি হিট না হলে বাংলা ইন্ডাস্ট্রি বাঁচবে না। তারকাও তৈরি হবে না। বাংলা ছবির অবস্থা যে ভাল না, ভালই বোঝেন। তাঁর স্পষ্ট অভিমত, আর্ট ফিল্মে তারকা তৈরি হয় না। মনে করেন, ঋত্বিক চক্রবর্তী বাণিজ্যিক ছবির তারকা হয়ে গেলে এখন যে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলো করছেন, তার একটাও পেতেন না। চিরঞ্জিত বিশ্বাস করেন, নায়ক চশমাটাও এমন ভাবে ঘোরাবে যে, দর্শক দেখে আর নড়তে পারবে না। এটাই ছবি।
তারকায় পাস (২): বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হিসেবে তারকারা ময়দানে নামায় যারপরনাই উৎসাহিত। আন্তরিক ভাবে চান, ইন্ডাস্ট্রির আরও মানুষ রাজনীতিতে আসুন।
যদি বলো হ্যাঁ: গল্প ভাল লাগলে এখনও ছবি করনে। করতে চান। কেবল ছবি ভাববেন, ছবি খাবেন, ছবি শোবেন— এমন করেননি কখনও। বাণিজ্যিক ছবির পক্ষে সওয়াল করেন। কিন্তু অবসরে নিজে ‘বাড়িওয়ালি’ বা ‘চতুষ্কোণ’-এর মতো ছবি দেখতেই পছন্দ করেন। তখন তিনি ‘চিরঞ্জিত’ থাকেন না। ‘দীপক’ হয়ে যান।
মনের খাতায় লেখা: সাতের দশকের মাঝামাঝি প্রথম ক্যামেরার মুখোমুখি হয়েছিলেন। দীর্ঘ কেরিয়ারে অন্য রোম্যান্টিক ছবি ছাড়াও বিভিন্ন বাণিজ্যিক ছবিতে সাফল্য পেয়েছেন। নারায়ণ সান্যালের উপন্যাস ‘অশ্লীলতার দায়’, ‘সমর্পিতা’, ‘অন্তরালে’ ছবিতে নজরকাড়া অভিনয় করেছিলেন। ‘অন্তরালে’ ছবিতে বাপ্পি লাহিড়ি আর কিশোরকুমারের গাওয়া গান, ‘আজ এই দিনটাকে মনের খাতায় লিখে রাখো’ বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল চিরঞ্জিতের সাবলীল অভিনয়ে। এখনও যে কোনও মাচার অনুষ্ঠানে সেই গান দর্শক-শ্রোতাদের অনুরোধের তালিকায় থাকেই থাকে।
অন্য ছবি: প্রায় আড়াইশো বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন। পরিচালনা করেছেন সাতটি ছবি। কিন্তু রং-তুলির ছবিতেও তিনি সমান স্বচ্ছন্দ। আগে ক্যানভাসে ছবি আঁকতেন। এখন মোবাইলে আঁকেন। তার সঙ্গে চলছে কাব্যচর্চাও। আমেরিকা-প্রবাসী কন্যার কাছে গেলে অবশ্য ক্যানভাসেই রং দেন।
সাজ-পোশাক: মাঝেমধ্যেই মহিলাদের পোশাক নিয়ে হিতোপদেশ দিয়ে থাকেন। সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তীর্থ সিংহ রাওয়াতের মেয়েদের ‘রিপ্ড অ্যাপার্ট জিন্স’ এবং ছোট পোশাক পরে হাঁটু দেখানো সংক্রান্ত মন্তব্য নিয়ে জলঘোলা হয়েছিল। তার মধ্যেই মেয়েদের কোথায়, কেমন পোশাক পরা উচিত সেই শিক্ষা দিতে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সকলের মনে পড়ছে, আট বছর আগে মন্তব্য করেছিলেন, মহিলাদের ছোট পোশাক ‘ধর্ষণ’ এবং ‘ইভটিজিং’-এর মতো ঘটনায় ইন্ধন জোগায়। তখনও তাঁর মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। আট বছর পর কী বলছেন তিনি? বলেন, “আমি কারও ড্রেসকোড বেঁধে দিইনি। শুধু পরামর্শ দিয়েছিলাম। এখনও একই কথা বলব। আমার মনে হয়, জায়গা বুঝে পোশাক বাছাই করা অত্যন্ত প্রয়োজন। মানুষ গোপনাঙ্গ ঢাকার জন্যই পোশাক পরে। ডিস্কোয় যাওয়ার পোশাক আর ভিড় ট্রেনে ওঠার পোশাক এক নয়। আবার শ্রাদ্ধবাড়িতে যাওয়ার পোশাক আলাদা। মহিলাদের পোশাক সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত।’’
অক্টোপাসের খিদে: অক্টোপাস খাওয়ার ইচ্ছা আছে। যদিও সুশি খেতে ভালবাসেন না। বরং তাঁর সবচেয়ে প্রিয় স্ত্রী রত্নার হাতের বাটার চিকেন।
তথ্য: স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়, রেখাচিত্র: সুমন চৌধুরী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy