আম-দরবার: মালদহের আম বাজারের দৃশ্য। নিজস্ব চিত্র
যুদ্ধে এসে আমের প্রেমে পড়েছিলেন মোগল বাদশা হুমায়ুন। এমনই প্রেম যে, দিল্লি দরবারের কথা ভুলে বাংলার রাজধানী গৌড়েই টানা ছ’মাস থেকে গিয়েছিলেন তিনি। গৌড় ছাড়িয়ে মালদহের আমের সুবাস হুমায়ুন থেকে ইংরেজ রাজত্বকালে রাভেনশ সাহবের হাত ধরে পৌঁছে গিয়েছে দিল্লিতে। এমনকি, বিশ্ব দরবারেও সুনাম ছড়িয়েছে মালদহের আমের।
ফলে আম বরাবরই আম জনতার হয়েও আসলে খাস মেহমানদের। এবং তাঁদের হাত ধরে রাজনীতিরও বটে। আজ, এত বছর পরেও সেই দৃশ্য বদলায়নি। একুশের বিধানসভা ভোটে কাঠি পড়তেই মালদহের হাওয়ায় এখন ‘আম-নাম’। সম্প্রতি, মালদহ সফরে আসেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা। সংক্ষিপ্ত সফরের মধ্যেও ঢুঁ মারেন মালদহে কেন্দ্রীয় আম গবেষণা সংস্থায়। তাঁর পাল্টা কর্মসূচিতে এসে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও মুখে শোনা গিয়েছে ফজলি আমের নাম।
আমতত্ত্বের কথা যে অমৃত সমান, সেটা শুধু আজ না, বহু দিন ধরেই মেনে চলেন রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা। গনি সাহেবের জেলা এসে জনমন জয়ে তাই একবার হলেও আমের গুণ গেয়ে যান সবাই। যেমন, লোকসভা ভোটের প্রচারে রতুয়ায় এসে আমের জন্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের কারখানা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন কংগ্রেসের রাহুল গাঁধী। পড়শি জেলা দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরে সভা থেকে মালদহের আমের নাম শোনা গিয়েছিল খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখেও। মালদহবাসীর দাবি, ভোট বৈতরণী পার হতে আম-অস্ত্রে শান দিতে বাকি নেই কেউই।
মালদহের আম চাষের ইতিহাস আজও অজানা।
ইতিহাস গবেষক মহম্মদ আতাউল্লাহ বলেন, “গৌড়ে রাজা, নবাবদের রাজত্বের সময়েও মালদহের আমের উল্লেখ পাওয়া যায়। কবে থেকে জেলায় আম চাষ হচ্ছে, তা আমাদের কাছে আজও অজানা।” শুরু যবে থেকেই হোক, এখন আমের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভাবে জড়িয়ে জেলার লক্ষাধিক পরিবার। উদ্যান পালন দফতরের দাবি, জেলায় প্রায় ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়। জীবনশক্তির কারণে এক বছর ফলন বেশি হলে, পরের বছরই কম উৎপাদন হয়। যদিও এক দশক ধরে চাষিদের বাগান পরিচর্যার ফলে জেলায় আমের উৎপাদন হচ্ছে বছরে গড়ে আড়াই লক্ষ মেট্রিক টন। রাজা, নবাব, ইংরেজদের রাজত্বের পর মালদহের গঙ্গা, মহানন্দা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। বদলায়নি মালদহের আম নিয়ে রুটি-রুজির ছবি। জেলায় আজও গড়ে ওঠেনি আম নিয়ে বড় শিল্প। মালদহের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, “আমই পাড়ে মালদহের অর্থনীতি বদলে দিতে। আমের ফলন ভাল হলে, ব্যবসা চাঙ্গা হয়। নেতানেত্রীরা মালদহে আমের নাম নিলেও শিল্প থেকে যায় অধরাই।”
ভোটের মতোই মালদহের বাগানে বাগানে এসেছে আমের মুকুলও। ২ মে যেমন ভোটের ফল পাকবে, তেমনই জুন-জুলাই মাসে পাকবে আমও। ভোটের পরে পাকা আমের ফসল কতটা ঘরে তুলতে পারবেন, সেই আশায় দিন গুনছেন সাবেক মিঞা, সুব্রত সরকারেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy