Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
যার এক দিকে পোড় খাওয়া নেতা আর অন্য দিকে সেলেব মুখের জনপ্রিয়তা। রাজনীতির হিসেবের জায়গা থেকে দেখলে কাকে কেন সেখানে দাঁড় করানো হল, তার আভাস হয়তো মিলতে পারে 
Raj Chakraborty

Bengal Polls: এক দড়ি টানাটানির গল্প...

রাজনীতির হিসেবের জায়গা থেকে দেখলে কাকে কেন সেখানে দাঁড় করানো হল, তার আভাস হয়তো মিলতে পারে 

শ্রাবন্তী, রাজ, রুদ্রনীল, কৌশানী ও পায়েল

শ্রাবন্তী, রাজ, রুদ্রনীল, কৌশানী ও পায়েল

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২১ ০৭:৩৭
Share: Save:

রাজনৈতিক মহলে একটা পুরনো ধারণা চালু রয়েছে। দলের জন্য যে আসন অপেক্ষাকৃত কঠিন, সেখানে জনপ্রিয় কোনও মুখকে প্রার্থী করা। কারণ হিসেবে বলা হয়, তিনি তাঁর জনপ্রিয়তার জোরে জিতে আসতে পারলে, দলের মুকুটে যেমন পালক যোগ হয়, তেমনই যদি সেই আসনে জেতা না যায়, তা হলেও তা প্রার্থীর উপর দিয়ে চলে যায়। সে ভাবে দলের গায়ে লাগে না বা ‘ক্ষত’ কিছুটা কম হয়। বিধানসভা নির্বাচনে জোড়াফুল, পদ্মফুল দু’পক্ষই জিততে মরিয়া। দুই শিবিরের প্রার্থী তালিকাতেই সেলেব মুখের ছড়াছড়ি। তারকা প্রার্থীদের ভোটে দাঁড় করানোর পিছনে রাজনীতির অঙ্ক কষেছেন সবাই। এই বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা আগে প্রকাশ করেছে তৃণমূল। তার পর কয়েক দফায় তালিকা বার করেছে বিজেপি। দু’ শিবিরের তালিকায় নজর দিলে দেখা যায় বেশ কয়েকটি জায়গায় রাজনীতিতে নতুন আসা এই সেলেব প্রার্থীদের প্রতিপক্ষ পোড় খাওয়া কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তাতে আপাতদৃষ্টিতে ‘খটকা’ লাগলেও কয়েকটি হিসেবের জায়গা থেকে দেখলে কাকে কেন সেখানে দাঁড় করানো হল, তার আভাস হয়তো মিলতে পারে। বিষয়টা আরও একটু ‘গভীরে’ গিয়ে দেখা যাক...

শুরু করা যাক, ভবানীপুর কেন্দ্র দিয়ে। এই কেন্দ্রের রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। ২০১১তে যখন তৃণমূল ক্ষমতায় আসে, তখন সাংসদ পদ ছেড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুর থেকে জিতে এমএলএ এবং মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০১৬ সালেও তিনি এখান থেকে জিতেছিলেন। যদিও সেখানে এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী হননি। প্রার্থী হয়েছেন, তাঁরই দলের আর এক ওজনদার প্রবীণ মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। ভবানীপুর এলাকার বাসিন্দাও তিনি। তাঁর বড় হওয়া, রাজনীতি সবটাই ওই চত্বরে। এহেন আসনে বিজেপি দলের নামে কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি। এখানে তারা রুদ্রনীল ঘোষের মতো জনপ্রিয় মুখ বেছে নিয়ে, পপুলারিটির তাসটি খেলেছে। শক্তিশালী প্রতিপক্ষ সম্পর্কে রুদ্রনীল বললেন, ‘‘শোভনদা সজ্জন ব্যক্তি, ওঁকে শ্রদ্ধা করি। উনি রাসবিহারী কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন। কিন্তু নিজের জেতা কেন্দ্রটাই এ বার পেলেন না! বদলে নিশ্চিত হারের একটা কেন্দ্রে ওঁকে ঠেলে দেওয়া হল, প্রতিবাদটাও করতে পারলেন না। যিনি দলের কাছ থেকে নিজের দাবিদাওয়া আদায় করে নিতে পারেন না, তিনি তাঁর কেন্দ্রের মানুষের অধিকার নিয়ে লড়াই করবেন কী করে? আর দলীয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ না খোলা মানে, অন্যায়কেই সমর্থন করা।’’

আবার আর এক বিধানসভা কেন্দ্র কৃষ্ণনগর উত্তরে ঠিক উল্টো অঙ্ক কষতে চেয়েছে বিজেপি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ওই বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি ৫৪ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল। সেই ফল মাথায় রাখলে রাজনৈতিক ভাবে এই আসনটি তৃণমূলের পক্ষে খুব স্বস্তিদায়ক বলা যায় না। এখানে তৃণমূলের মুখ কৌশানী মুখোপাধ্যায়। তাঁর প্রতিপক্ষ মুকুল রায়। এখানে মনে রাখা প্রয়োজন, কৌশানীকে যখন দাঁড় করানো হয়, তখন মুকুল রায় যে ওই কেন্দ্রে প্রার্থী হতে পারেন, সে সম্ভাবনা তৈরি হয়নি। নায়িকার পরিচিতি, তাঁকে সামনে থেকে দেখার আকর্ষণ এক্ষেত্রে তৃণমূলের বাজি। জোরদার প্রচারও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। রাজনীতিতে নতুন হলেও ওজনদার প্রতিপক্ষকে নিয়ে ভাবতে রাজি নন রাজনীতিতে নবাগত এই প্রার্থী।

শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা অনেকটা এ রকম। বেহালা পশ্চিম থেকে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। সেখানে তৃণমূলের হয়ে দাঁড়িয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, যিনি সরকার ও দলের অতি গুরুত্বপূর্ণ মুখ এবং মহাসচিব। পার্থর বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রেও বিজেপি ভরসা করতে চেয়েছে নায়িকার জনপ্রিয়তায়। ভোট প্রচারে তার প্রভাবও বিলক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ভোটের ভাবনা পরে, আপাতত এলাকার সাধারণ বাসিন্দাদের চোখে অপার মুগ্ধতা রুপোলি পর্দার সুন্দরী নায়িকাকে সামনে থেকে দেখে!

এ বার আসা যাক, বেহালা পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্র প্রসঙ্গে। সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী রত্না চট্টোপাধ্যায়। বেশ কিছু দিন ধরেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয়। স্বামী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতিতে তিনি ওই এলাকায় তৃণমূলের মুখ হয়ে উঠেছেন। তাঁর ক্ষেত্রে ‘সহানুভূতি’র হাওয়া তোলা যেতে পারে বলেও তৃণমূল নেতৃত্বের ধারণা। এ দিকে মন্ত্রিত্ব, মেয়র পদ ও তৃণমূল ছাড়ার পর থেকে শোভন চট্টোপাধ্যায় রাজ্য রাজনীতিতে একটি আলোচ্য চরিত্র। আলোচনায় তিনি আগেও ছিলেন। তবে এই পর্বের আলোচনা কিছুটা ব্যতিক্রমী। শোভনের পদত্যাগ-দলত্যাগ এবং শাসক শিবিরের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা তাঁর রাজনৈতিক জীবনে একটি নতুন অধ্যায় তৈরি করে। প্রকাশ্যেই তাঁর স্ত্রী রত্নার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি বড় হয়ে ওঠে, যেখানে ‘মধ্যবর্তিনী’ হয়ে ওঠেন শোভনের বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। বেহালা পূর্বে বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করলে, ব্যক্তিগত ‘কাদা ছোড়াছুড়ি’ তীব্র আকার নিত, এমন আশঙ্কায় শোভনকে সেখানে প্রার্থী করেনি বিজেপি। আবার ‘পছন্দের’ কেন্দ্রের প্রার্থী হতে না পেরে বান্ধবী বৈশাখীকে নিয়ে শোভন এ যাত্রা বিজেপিও ছেড়ে দেন। এটি হল মুদ্রার একটি দিক। অপর দিকে, ওই কেন্দ্রে দাঁড় করানো হয়েছে পায়েল সরকারকে। কৌশল এ ক্ষেত্রেও একই রকম। নির্বাচনী লড়াইকে শুধুই রাজনৈতিক জায়গায় না রেখে একজন সেলেব্রিটিকে ওই আসনে প্রার্থী করা হল।

ব্যারাকপুরে রাজ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে লড়াইটা বিজেপি রাজনৈতিক ভাবে লড়ছে। অবশ্য বিজেপির তালিকা বেরোনোর আগেই তৃণমূল লড়াইকে নিয়ে গিয়েছে রাজের মতো জনপ্রিয় মুখের দিকে। পদ্মশিবির এখানে প্রার্থী করেছে চন্দ্রমণি শুক্লকে, যিনি নিহত বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লর বাবা। যে মণীশ শুক্লর খুন নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন হয়েছিল। চন্দ্রমণি হয়তো মুকুল রায় বা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো জাঁদরেল মুখ নন, কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এলাকায় তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তবে এগুলো হারজিতের পরিসংখ্যান নয়, কতকগুলো সম্ভাবনা তুলে ধরা হল মাত্র। শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি কে হাসবেন, তার জন্য অপেক্ষা ২ মে অবধি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy