Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Tathagata Roy

Bengal Election: মোদী-শাহকে ডুবিয়েছে ‘কেডিএসএ’, বিপর্যয়ে ফের তোপ তথাগতের

দু’দিন আগেই বিজেপির এ বারের তারকা-প্রার্থী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সরকার, তনুশ্রী চক্রবর্তীদের উদ্দেশ করে ‘নগর নটী’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন তথাগতবাবু।

তথাগত রায়।

তথাগত রায়। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২১ ০৭:১২
Share: Save:

প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সময়েই তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছিল অন্তর্দ্বন্দ্ব। ভোটে পরাজয়ের পরে যোগ হয়েছে দোষারাপের পালা। বিজেপির সেই ক্ষতেই ফের খোঁচা দিলেন দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়। দলের চার নেতাকে নিশানা করে এ বার তীব্র বিষোদগার এল তাঁর টুইটে। এরই মধ্যে দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে জরুরি তলব করেছেন বলে নিজেই জানিয়েছেন তথাগতবাবু। স্বভাবতই, তা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা।

দু’দিন আগেই বিজেপির এ বারের তারকা-প্রার্থী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সরকার, তনুশ্রী চক্রবর্তীদের উদ্দেশ করে ‘নগর নটী’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন তথাগতবাবু। যার জেরে দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের মাধ্যমে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে ক্ষোভ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রার্থীরা। তথাগতবাবু এ বার সরাসরি নিশানা করেছেন কৈলাস, দিলীপ ঘোষ, শিবপ্রকাশ এবং অরবিন্দ মেননকে। বাংলায় ভোটের দায়িত্বে ছিলেন বিজেপির এই চার নেতাই। ওই চার জনকে ‘কেডিএসএ’ বলে উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার তথাগতবাবু টুইটে মন্তব্য করেছেন, এঁরাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহদের নাম পাঁকে টেনে এনেছেন এবং এঁদের জন্যই পৃথিবীর বৃহত্তম দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। বাংলায় দলের বিধায়ক তিন থেকে ৭৭ হওয়ার ঘটনাকে ‘ইতিবাচক’ বলেই দেখতে চাইছেন বিজেপি নেতারা। সেই তত্ত্বকেও বিঁধে তথাগতবাবুর মন্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক জ্ঞানহীন, বিশ্লেষণহীন, বাংলার মানুষের ভাবনা সম্পর্কে কোনও ধারণাহীন, ক্লাস এইট পাশ, ফিটার মিস্ত্রির সার্টিফিকেটওয়ালাদের কাছ থেকে আর কী আশা করা যায়?’’ বিজেপির অন্দর মহলের মতে, নাম না করলেও তথাগতবাবুর তির দিলীপবাবুর দিকে।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু অবশ্য প্রাক্তন সভাপতির ধারাবাহিক বিষোদগার প্রসঙ্গে তেমন মুখ খুলতে চাননি। বাংলায় সন্ত্রাসের ঘটনা খতিয়ে দেখতে আসা কেন্দ্রীয় দলের কাছে এ দিন কলকাতায় বিএসএফ দফতরে শুভেন্দু অধিকারী, লকেট চট্টোপাধ্যায়, জয়প্রকাশ মজুমদারদের নিয়ে দেখা করতে গিয়েছিলেন দিলীপবাবু। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের প্রায় অর্ধেক বিধানসভা এলাকায় সন্ত্রাস চলছে। মারা গিয়েছেন ২১ জন। ঘর বাড়ি ভাঙা হচ্ছে, আগুন দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় দলকে অনুরোধ করেছি, গ্রামীণ এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি দেখুন। আমরা কর্মীদের উপরে আক্রমণ সামলাতেই ব্যস্ত আছি।’’ তথাগতবাবুর বক্তব্য নিয়ে সরাসরি প্রতিক্রিয়া এড়িয়েও অন্যত্র দিলীপবাবুর মন্তব্য, ‘‘পালিয়ে যাওয়ার রাজনীতি আমি কখনও করিনি। এখনও কর্মী-সমর্থকদের পাশেই আছি। কল্পনার জগতে বসে কেউ কিছু ভেবে নিলে কিছু বলার নেই!’’ তবে তথাগতবাবুকে শীর্ষ নেতৃত্বের ডেকে পাঠানো নিয়ে তাঁদের কিছু জানা নেই বলে জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপি নেতারা। তথাগতবাবুও পরে আর এই নিয়ে আলোকপাত করতে চাননি।

ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের রাজ্যপালের পদে থেকেই এর আগে তথাগতবাবু টুইটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে একের পর এক বিষোদগার করে গিয়েছেন। রাজ্যপালের পদ থেকে অবসরের পরে সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে তাঁর আগ্রহ ছিল বাংলায় বিজেপিতে ফের বড় ভূমিকা নেওয়ার। কিন্তু এ বার ভোটে টিকিট তো নয়ই, প্রচারেও তাঁকে কাজে লাগায়নি বিজেপি। ফল খারাপের পরেই এ বার তিনি তোপের মুখ ঘুরিয়ে দিয়েছেন দিলীপ, কৈলাসদের দিকে। তৃণমূল থেকে বাছ-বিচার না করে যে ভাবে লোকজনকে দলে টেনে তাঁদের পিছনে টাকা খরচ করা হয়েছে, তা নিয়েও সরব তথাগতবাবু। তাঁর মতে, ‘‘তৃণমূলের জঞ্জালগুলো প্রথমেই দল ছেড়ে যাবে। তার পরে বিজেপির আদি কর্মীরা বেরিয়ে যেতে পারেন বলে আমার আশঙ্কা। দলের মধ্যে সংস্কারের লক্ষণ দেখা না গেলে তাঁরাও চলে যেতে পারেন এবং বাংলায় তখনই পার্টিটা শেষ হয়ে যাবে!’’

বিজেপির আদি নেতা-কর্মীদের সম্মান না পাওয়া এবং তৃণমূল থেকে লোক ভাঙিয়ে এনে ভোটে লড়তে গিয়ে ভরাডুবির প্রসঙ্গে তথাগতবাবুর সঙ্গে সহমত দলের অনেকেই। প্রকাশ্যে তাঁরা অবশ্য এখনই মুখ খুলছেন না। একই সঙ্গে দলের এক রাজ্য নেতা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘এক জন মানুষের যদি বিস্তর বাজে কথা বলার রেকর্ড থাকে, তাঁর ঠিক কথাটাকেও কেউ গুরুত্ব দিতে চায় না! সমস্যা এখানেই।’’ সুযোগ পেয়ে তথাগতবাবুর মন্তব্যের সূত্রে বিজেপিকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি তৃণমূলও। দলের সাংসদ সৌগত রায়কে পাশে নিয়ে আর এক সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় বলেছেন, ‘‘আদি বিজেপি কর্মীদের বিষয়ে তথাগতবাবু যা বলেছেন, তা তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না। উনি দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। গুরুত্ব দিয়েই দেখা উচিত।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE