Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Election: মুকুলের ‘কৌশল’ আর কোন্দলের কাঁটাই মাথাব্যথা

প্রধান দুই প্রতিপক্ষ তৃণমূলের কৌশানী মুখোপাধ্যায় ও জোট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী শিলভি সাহা চুটিয়ে প্রচার করছেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২১ ০৬:২৪
Share: Save:

ভোটের ভরা বাজারে মুকুল রায় ‘ভ্যানিশ’!

বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা কিঞ্চিৎ অস্বস্তিতে। ‘‘দাদা আসলে একটু বেছে-বেছে মিছিল-সভা করছেন। পুরো ফোকাস স্ট্র্যাটেজির উপর দিচ্ছেন,’’ কৃষ্ণনগর শহরের ক্ষৌণীশ পার্ক এলাকায় মুকুল রায়ের অফিসের এক কর্মী বললেন।

প্রধান দুই প্রতিপক্ষ তৃণমূলের কৌশানী মুখোপাধ্যায় ও জোট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী শিলভি সাহা চুটিয়ে প্রচার করছেন। তার পরেও এই স্বেচ্ছা-অন্তরাল কি নতুন রণনীতি, না কি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস?

নিজের বাড়ির একতলার অফিসে বসে মুচকি হাসেন নদিয়ার ‘চাণক্য’ গৌরীশঙ্কর দত্ত— ‘‘আরে বাবা, গত লোকসভায় ৫০ শতাংশ বুথে বিজেপি পোলিং এজেন্টই দিতে পারেনি। তা সত্ত্বেও তৃণমূল এই বিধানসভায় ৫৪ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল। তখন তো মহুয়া মৈত্র বাড়ি-বাড়ি প্রচার করেছিলেন। মমতা পদযাত্রা করেছিলেন। ভোট অন্য হিসাবে হয়।’’

জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি তথা তেহট্টের প্রাক্তন বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ভোটের ঠিক আগেই দল ছেড়ে বিজেপিতে। বিজেপি বিশেষত শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তাঁকে তেহট্টের বদলে কৃষ্ণনগর-উত্তরে দাঁড়াতে বলেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাতেই অপমানিত হয়ে তিনি দল ছাড়েন।

গৌরীশঙ্কর যখন জেলা সভাপতি, তখন মুকুল ছিলেন তৃণমূলের নদিয়া জেলা পর্যবেক্ষক। দু’জনের মধ্যে যথেষ্ট টক্কর ছিল। মুকুল বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনে তাঁকে অভিযুক্ত করার ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা ছিল গৌরীশঙ্করের। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন দু’জনের সুসম্পর্ক। চোয়াল শক্ত করে গৌরীশঙ্কর বলেন, ‘‘মুকুলকে জিতিয়ে যে দিন মন্ত্রিসভায় নিয়ে যেতে পারব সেটা হবে আমার জয়ের দিন।’’

যা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসেন কৌশানী, ‘‘ওঁরা কেন মাঠে নামছেন না জানি না। হয়তো কোনও ‘এন্ড মোমেন্ট গেম’-এর পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু অবাধ নির্বাচন হলে এই কেন্দ্রে আমাকে কেউ হারাতে পারবে না।’’

তবে লোকে কিন্তু বলছে, শুধু কৃষ্ণনগর-উত্তর নয়, গোটা নদিয়ার ভোটেই গৌরীশঙ্কর-মুকুল জুটি প্রভাব ফেলতে পারে। গৌরী তো বলেই দিলেন, ‘‘আমি এখন রিপু করছি। তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ অংশকে বিজেপির সঙ্গে রিপু করে জুড়ছি।’’

২০১৯-এর ভোটে নদিয়ায় ১৭টির মধ্যে ১১টি বিধানসভায় লিড ছিল বিজেপির। তৃণমূল লিড পেয়েছিল চাপড়া, পলাশিপাড়া, কালীগঞ্জ, নাকাশিপাড়া, করিমপুর, নবদ্বীপে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালু করা বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের পর এই সব এলাকায় তৃণমূলের অবস্থান আরও শক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু জেলার বহু মানুষের অভিযোগ, প্রকল্প বাস্তবায়নে নীচের স্তরে দুর্নীতি হয়েছে।

যেমন, দুয়ারে সরকারের মতো প্রকল্পে ৩০০ টাকা নিয়ে ফর্ম ফিল-আপের অভিযোগ উঠেছে। টেট-এসএসসি নিয়ে তরুণ সমাজ ক্ষুব্ধ, পড়ুয়াদের দেওয়া সাইকেলের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা নিয়েও অভিনব দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তবে তৃণমূলের প্রবীণ নেতা তথা বিদায়ী কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের দাবি, ‘‘দুর্নীতির অভিযোগ সম্পূর্ণ রটনা। ভোটব্যাঙ্কে কোনও ভাবেই ধাক্কা লাগবে না।’’

উজ্জ্বলবাবু নিজে কৃষ্ণনগর-দক্ষিণ কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী। এখানে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে বিজেপিতে তীব্র বিক্ষোভ হয়। ফলে বিজেপির মহাদেব সরকার খুব স্বস্তিতে নেই। যদিও তাঁর দাবি, ‘‘সমুদ্রে ঢেউ ওঠে, আবার সমুদ্রেই মিশে যায়। বিক্ষোভকারীরাও তেমনই এখন আমার অনুগত হয়ে কাজ করছেন।’’ যা শুনে উজ্জ্বলবাবুর উক্তি, ‘‘অনেক কাল রাজনীতি করছি। ওরা কোনও ফ্যাক্টর নয়।’’ তবে তাঁর পথও কুসুমাস্তীর্ণ নয়। কারণ, মহুয়া মৈত্র ছাড়া তৃণমূলের অন্য কারও সঙ্গেই তেমন সুসম্পর্ক নাকি নেই প্রার্থীর। তাই দলের নিজস্ব ভোটও কতটা তিনি পাবেন, সন্দেহ থাকছে।

সেই তুলনায় নবদ্বীপে অনেক ভাল জায়গায় তৃণমূল। প্রার্থী পুণ্ডরীকাক্ষ (নন্দ) সাহা-র ভাবমূর্তি স্বচ্ছ। সকলের সঙ্গে যোগাযোগ ভাল। তাঁর কাঁটা বলতে তৃণমূল পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা। একাধিক দুর্নীতিতে বিমানবাবুর নাম জড়িয়েছে। কথা উঠেছে তাঁর ব্যবহার নিয়েও। বিধায়ক হয়েও উদাসীন বলে একটা বিরুদ্ধ হাওয়া রয়েছে, যা নন্দ সাহা বিলক্ষণ জানেন। হেসে বলেন, ‘‘কিছু লোকের ব্যবহার মসৃণ নয়, তবে তেমন লুটপাট করেছে এমন অভিযোগও নেই।’’

লোকসভায় সবচেয়ে বড় লিড পাওয়া চাপড়ায় কিন্তু দলের অন্দর রুকবানুর রহমান বনাম জেবের শেখের লড়াইয়ে টালমাটাল। জেবের মহুয়া-পন্থী এবং ভাবমূর্তির দিক থেকে এগিয়ে। রুকবানুর প্রার্থী হতেই জেবের নির্দল প্রার্থী হয়েছেন। অথচ এখনও তাঁর ব্লক সভাপতির দলীয় পদ খারিজ হয়নি! রুকবানুর নিজেই বলছেন, ‘‘যদি জেবের-পন্থীরা দলে থেকে দলের ক্ষতি করে তা হলে কী আর করা যাবে!’’ তার উপর সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভের জেরে আইএসএফ প্রার্থী কাঞ্চনা মৈত্রের পাশাপাশি জাহাঙ্গির আলি বিশ্বাসকে সিপিএম প্রার্থী করেছে। মুসলিম ভোট তাঁরা প্রত্যেকেই কাটবেন। জেবেরের দাবি, এঁদের সকলের ভোট তাঁর ঝুলিতেই আসবে এবং তিনি জেতার পর তৃণমূলেই যাবেন।

অনেক কর্মী-সমর্থক মনে করেন, অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে তেহট্টেও। এখানে বাড়তি সমস্যা প্রার্থী তাপস সাহার ভাবমূর্তি। পলাশিপাড়ার এই প্রাক্তন বিধায়কের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, যা অবশ্য অস্বীকার করেছে দল। কিছু দিন আগেই আবার তেহট্টের ডাকসাইটে তৃণমূল নেতা সঞ্জয় দত্ত মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপিতে গিয়েছেন যা দলের পক্ষে বড় ধাক্কা।

পলাশিপাড়া কেন্দ্রে প্রার্থী মানিক ভট্টাচার্যের নাম টেট দুর্নীতিতে জড়ানোতেও তৃণমূল অস্বস্তিতে। তার উপর প্রধান প্রতিপক্ষ জোট প্রার্থী সিপিএমের এসএম সাদি মুসলিম ও হিন্দু দুই ভোটই কাটতে পারেন। কিছু ভোট কাটবেন এসইউসি প্রার্থী মনিরুজ্জামান মণ্ডল। বিজেপির হাওয়াও বেশ জোরালো।

কালীগঞ্জেও পরিস্থিতি আলাদা নয়। তৃণমূল প্রার্থী নাসিরুদ্দিন আহমেদ ওরফে ‘লালসাহেব’ নিজের আভিজাত্য নিয়ে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে ওঠাবসা করেন। জনভিত্তি কম থাকায় গত বার ১২২৭ ভোটে হারেন কংগ্রেসের হাসানুজ্জামানের কাছে। এখানে বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ ঘোষ উগ্র হিন্দুত্ববাদী নন। প্রচারে খাটছেন। ফল যে কোনও দিকে ঝুঁকতে পারে।

নাকাশিপাড়ায় তৃণমূলের আপাত সুরক্ষিত কেন্দ্রেও ছোট প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করেছেন সিপিএম ছেড়ে নির্দল হয়ে দাঁড়ানো তন্ময় গঙ্গোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের দলীয় কোন্দল। গত বার তৃণমূলের কল্লোল খাঁ এখানে মাত্র ৬২৫০ ভোটে জেতেন। দ্বিতীয় হন তন্ময়। এ বার তিনি কত ভোট কাটেন বা কট্টর মহুয়া-বিরোধী কল্লোলের বিরুদ্ধে কোনও হাওয়া দলের অন্দরেই কাজ করে কি না, নজর সে দিকেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy