প্রতীকী ছবি।
নিজের ভোট দিয়ে জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি যখন জেলা পার্টি অফিসে এসে টিভির সামনে বসেছেন, তখন বেলা এগারোটা বেজে গিয়েছে। দু’ঘণ্টা পর পর ভোট দানের শতাংশের হিসেব প্রকাশ করে কমিশন। জলপাইগুড়ি জেলায় বেলা এগারোটার হিসেবে ৩৯ শতাংশ ভোট পড়ে গিয়েছে। “এখনই এত ভোট হয়ে গিয়েছে!” তৃণমূলের জেলা সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর গলায় বিস্ময়ের সুর। মুহূর্তে বিস্ময় বদলে গেল উৎকন্ঠায়, “বাড়তি ভোটটা যাচ্ছে কোথায়?” দলের কর্মীরা দাবি করলেন, বেশি ভোটে তৃণমূলেরই ভাল হবে। জামার বুক পকেট থেকে মাস্ক বের করে মুখে বেঁধে নিয়ে কৃষ্ণকুমার বললেন, “গিয়ে দেখতে হবে।” তারপর জলপাইগুড়ি শহরের এ মাথা থেকে ও মাথার বুথ চষে ফেললেন তিনি। সব বুথেই গাড়ি থেকে নেমে কর্মীদের প্রশ্ন করলেন, “এই যে এত ভোট পড়ছে, সেটা কারা পাচ্ছে?”
এগারোটা থেকে দুপুর একটা, বিকেল তিনটে— বেলা যত গড়িযেছে ভোট দানের হার ততই লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। বিকেল তিনটের মধ্যে রাজগঞ্জ বিধানসভায় আশি শতাংশ ভোট পড়ে গিয়েছে। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া কালিয়াগঞ্জ হাইস্কুল রাজগঞ্জ বিধানসভার মধ্যেই পড়ে। দুটো নাগাদ দেখা গেল বুথ সুনসান। ভোট কর্মীরা বাইরে বেঞ্চে পাত পেড়ে খাচ্ছেন। এক ভোট কর্মীর কথায়, “সকাল থেকে লম্বা লাইন ছিল। তখন প্রায় দম ফেলার ফুরসত ছিল না।” ওই বুথে ভোটার রয়েছেন ৪৯১ জন। দুপুর একটার আগে ৪৩২টি ভোট পড়ে গিয়েছে।
বন্ধ চা বাগান রায়পুরের দু’টি বুথে প্রায় চোদ্দশো ভোটার। দুপুর দেড়টা নাগাদ দেখা গেল, দুই বুথ মিলিয়ে বারোশোরও বেশি ভোট পড়ে গিয়েছে। বিকেল পাঁচটাতে ময়নাগুড়িতে ৮৫ শতাংশ ভোট হয়ে গিয়েছে। সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ভোট চলবে। নাগরাকাটায় ৭৪ শতাংশ ভোট পড়ে গিয়েছিল দুপুর তিনটের মধ্যে। ডান-বাম সব দলই সকাল সকাল ভোট দিতে আবেদন জানিয়েছিলেন সাধারণ ভোটারদের। সে কারণেই কী তাড়াতাড়ি ভোট হয়েছে?
মুখে কিছু না বললেও, বেশি ভোট পড়া নিয়ে আশা-নিরাশার দোলাচলে রয়েছে তিন শিবির। শাসক শিবিরেও আশঙ্কার চোরাস্রোত রয়েছে। অনেকে দাবি করেন বাড়তি ভোট মানে, সেটি প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ভোট। এই দাবির সঙ্গে জুড়েছে, গত লোকসভার মতো বামের ভোট, রামে যাবে না তো সেই আশঙ্কাও। বিজেপির ভোট পরিচালনা করছিলেন রাজ্য নেতা প্রবাল রাহা। ঘনঘন বাজছে তাঁর ফোন। তিনি বললেন, “সকলেই ফোন করছেন। সকলেই তৃণমূলের পরাজয় চাইছেন।” এই সকলের মধ্যে কারা রয়েছেন? তা অবশ্য তিনি ভাঙতে চাইলেন না।
জেলা কংগ্রেস সভাপতি পিনাকী সেনগুপ্তের হিসেব, “মানুষ তৃণমূলের বিরুদ্ধে বেশি করে ভোট দিচ্ছে। তৃণমূল এ বার তিন নম্বরে পৌঁছবে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য বলেন, “মার খেতে খেতে যখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তখন মানুষ প্রতিবাদ জানানোর ভাষা খোঁজে। সেই প্রতিবাদের একটা প্রতিফলন হল আজকের ভোটে। ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে, মানুষকে ধন্যবাদ।”
দিনভর চক্কর কাটার পরে জেলা তৃণমূল অফিসে এসে জেলা সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর গাড়ির চাকা থামল। গাড়ি থেকে নেমে বললেন, “মানুষ আমাদের সরকারকে চাইছেন, তাই বেশি করে ভোট দিয়েছেন।”
কার অঙ্ক মিলবে? উত্তরের জন্য আপেক্ষা আরও সপ্তাহদু’য়েকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy