কোচবিহারে সাংবাদিক বৈঠক তৃণমুল বিধায়ক উদয়ন গুহ। —নিজস্ব চিত্র।
দিনহাটায় বিজেপির মণ্ডল সভাপতি অমিত সরকারের মৃত্যুর ঘটনায় উত্তাল কোচবিহার জেলা। বিজেপি-র অভিযোগ অমিতকে খুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ আত্মহত্যা করেছেন অমিত। ইতিমধ্যেই অমিতের সুইসাইড-নোট ভাইরাল নেটমাধ্যমে। অমিতের মৃত্যুর পর উত্তাল হয়ে ওঠে দিনহাটা শহর। ভাঙচুর হয় তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়। ঘটনার পর কোচবিহার জেলার পুলিশ সুপার কে কান্নানকে বদলি করা হয়। তার জায়গায় দায়িত্ব নেন দেবাশিস ধর।
দিনহাটার অমিত সরকার এর মৃত্যুর ঘটনার তদন্তের তদারকি করতে শুক্রবার কোচবিহারে বৈঠক করেন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের বিশেষ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে। তিনি বাগডোগরা থেকে হেলিকপ্টারে করে কোচবিহার বিমানবন্দরে নামেন। সেখান থেকে সার্কিট হাউসে আসেন। কিছুক্ষণ পরে সার্কিট হাউস থেকে বেরিয়ে উৎসব অডিটরিয়ামে একটি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আইজি (উত্তরবঙ্গ) বিশাল গর্গ, ডিআইজি (জলপাইগুড়ি) আন্নাপা ই , কোচবিহারের নয়া পুলিশ সুপার দেবাশিস, দিনহাটার এসডিপিও অমিত বর্মা, দিনহাটা থানার আইসি সঞ্জয় দত্ত-সহ অমিতের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তকারী অফিসাররা।
বৈঠকে ডাকা হয়েছিল কোচবিহার মেডিকেল কলেজের এমএসভিপি রাজীব প্রসাদ এবং ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককেও। সূত্রের খবর প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে কথা বলেন দুবে। আজ তিনি তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের কাছে জানতে চান এই মৃত্যুর ঘটনায় কী কী তথ রয়েছে। যে সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে সেটি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে যাচাই করার নির্দেশ দেন তিনি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট কি রয়েছে তাও চিকিৎসকদের কাছে জানতে চান তিনি। বৈঠক শেষে তিনি উৎসব অডিটোরিয়াম থেকে বেরিয়ে সার্কিট হাউসে চলে যান। বিশেষ পুলিশ অবজারভার বিবেক দুবে বলেন, অমিত সরকার এর মৃত্যু তদন্তের তদারকি করতে তিনি এসেছেন।
বিজেপি কর্মী অমিত সরকারের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর তোলপাড় হয় গোটা দিনহাটা। ভাঙচুর করা হয় তৃণমূলের কার্যালয়। কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা দিনহাটা শহর। ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে , নিমিষেই শুনশান হয়ে যায় রাস্তাঘাট। বন্ধের চেহারা নয় গোটা দিনহাটা। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন দিনহাটা বাসি। এই ঘটনার সরব হয় বাম-তৃণমূল সংগঠন। ভোটের আগে দিনহাটার রাজনৈতিক পরিবেশ শান্ত রাখতে আবেদন জানানো হয় জেলা প্রশাসনের কাছে।
শুক্রবার বিকেলে বিজেপি-র বিরুদ্ধে দিনহাটার সংহতি ময়দান থেকে তৃণমূলের ধিক্কার মিছিল শহর পরিক্রমা করে। এদিনের এই ধিক্কার মিছিলে উপস্থিত ছিলেন দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক উদয়ন গুহ, দলের জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়-সহ সহ অন্য নেতারা। রংপুর রোড সংলগ্ন স্টেশনের দিকে মিছিল আসার সময় দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামানিকের একটি ব্যানার ছিঁড়তে যান কয়েকজন তৃণমূল কর্মী। উদয়ন তখন লাঠি হাতে তেড়ে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
বিজেপি-র জেলা সভানেত্রী মালতিলতা রায় শুক্রবার বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীকে খুন করে এখন দিনহাটার শান্তিরক্ষার জন্য লোক দেখানো মিছিল করছে তৃণমূল। সে দিন দিনহাটায় যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল সেটা সাধারণ মানুষের ক্ষোভের প্রকাশ। তৃণমূলের সন্ত্রাসের প্রতিবাদে মানুষ সেদিন গর্জে উঠেছিলেন।’’
শুক্রবার সন্ধ্যায় উদয়ন গুহ সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘অমিত সরকারের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর স্ত্রী থানায় অভিযোগ করেছেন। সেখানে ২২ জনের নামে অভিযোগ রয়েছে। বয়ানে রয়েছে, ‘১ থেকে ৪ নাম্বার আসামিদের প্ররোচনায় বাকিরা আমার স্বামীকে হত্যা করে দড়িতে ঝুলিয়ে দেয়’। অভিযোগের বয়ান অনুযায়ী ২২ জন সেখানে উপস্থিত ছিল। অথবা ২২ জন তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টে পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে দড়িতে ঝোলার কারণে অমিতের মৃত্যু হয়েছে। তার থেকে প্রমাণিত তাঁকে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া সিসিটিভি ফুটেজে লক্ষ করা যাচ্ছে অমিত একা হেঁটে যাচ্ছেন। যে সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে সেখানে পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে, তাঁর মৃত্যুর জন্য সোমাপ্রসাদ, ঈশ্বর, উত্তম সরকার দায়ী। পুলিশ আগে সেই সুইসাইড নোট এর হাতের লেখা মিলিয়ে দেখুক সেই হাতের লেখা অমিতের কি না। যদি অমিতের হাতের লেখা হয়ে থাকে তবে পুলিশ তাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করুক। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সম্বন্ধে জানতে একটি আরটিআই করা হয়েছে। পুরো বিষয়টা পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।’’
বিজেপি-র জাতীয় পরিষদের নিত্যানন্দ মুন্সি শুক্রবার বলেন, ‘‘প্রথম দফা নির্বাচনের জন্য জেলা থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী অন্যত্র চলে যাওয়ায় সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা সন্ত্রাস তৈরি করছে। দলীয় কার্যালয়ে ভাঙছে । বিজেপি কর্মীদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। আমাদের কর্মীদের খুন করছে এসব বিষয় নিয়ে বিবেক দুবের কাছে দিনহাটা থানার পুলিশ কর্মচারী বদলির দাবি জানাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy