হেঁশেলে বাঁকুড়ার কংগ্রেস প্রার্থী রাধারানি বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
ভোট ঘোষণার পরে, এক মাস উদয়াস্ত পরিশ্রম করেছেন। এখন কেমন যেন ‘ফাঁকা-ফাঁকা’ লাগছে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার বিভিন্ন দলের প্রার্থী এবং নেতাদের অনেকের। কেউ শখের চর্চা করছেন, কেউ সময় দিচ্ছেন পরিবারকে। তার সঙ্গে রয়েছে ভোট পর্যালোচনাও।
পুরুলিয়ার তৃণমূল প্রার্থী সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন পুকুরে গিয়ে মাছ ধরছেন ইদানীং। রাতে অনেকক্ষণ বই পড়ছেন বান্দোয়ানের তৃণমূল প্রার্থী রাজীবলোচন সোরেন। দলের বলরামপুরের প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোর চোখ থাকছে টিভির পর্দায়। ডাক্তারের কথামতো এই ক’দিন চলা হয়নি। এ বার তাই জোর দিচ্ছেন নিয়ম মানায়। সিপিএমের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় ভোট-পর্বে না পড়া খবরের কাগজ জমিয়ে রেখেছিলেন। এখন সেগুলিই পড়ছেন। বৃহস্পতিবার ভোট শেষে শুক্রবার দুপুরে লম্বা ঘুম দিয়েছেন বাঁকুড়ার বড়জোড়ার সিপিএম প্রার্থী সুজিত চক্রবর্তী। বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজিত অগস্তি পরিবারের সঙ্গে সিনেমা দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এক মাসের বেশি বাড়িতে খাওয়া হয়নি। আজ সবার সঙ্গে বসে খেলাম।’’
পুরুলিয়ার বিজেপি প্রার্থী সুদীপ মুখোপাধ্যায় ভোটের কাজ সেরে প্রচারের জন্য ছুটেছিলেন নন্দীগ্রামে। ধকলে শরীর একটু খারাপ লাগছে। তাই ক’দিন বিশ্রাম নেবেন ঠিক করেছেন। ভোট পেরোনোর পরে, দিন দু’য়েক বিশ্রাম নিয়ে ভিন্ জেলায় প্রচার করছেন বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী। জানান, এখন রয়েছেন আসানসোলে। আসানসোলে প্রচারে যেতে হবে বলে জানান পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি গুরুপদ টুডুও। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার দুপুরে কলকাতা ফিরেছেন দলের বাঁকুড়ার তারকা প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের অন্য কেন্দ্রে প্রচার করবেন তিনি। দলের নির্দেশে পশ্চিম বর্ধমানে প্রচারে যেতে প্রস্তুত হচ্ছেন রঘুনাথপুরের তৃণমূল প্রার্থী
হাজারি বাউরি।
রঘুনাথপুরের বিজেপি প্রার্থী বিবেকানন্দ বাউরি পেশায় আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘‘প্রচার-পর্বে আমাদের কিছু কর্মী-সমর্থক গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁদের জামিন সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই ব্যস্ত আছি।’’ বৃহস্পতিবার ভোট মিটতে, শুক্রবার সকালে সোনামুখীর তৃণমূল প্রার্থী শ্যামল সাঁতরা নিজের কেন্দ্রের বিভিন্ন জায়গায় আহত কর্মীদের বাড়িতে গিয়েছিলেন। বিষ্ণুপুরের তৃণমূল প্রার্থী অর্চিতা বিদ শুক্রবার সকালে পুজো দিয়ে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে যান আহত কর্মীকে দেখতে। বিষ্ণুপুরের বিজেপি প্রার্থী তন্ময় ঘোষ পরিবারের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়ে বিকেলে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে ভর্তি দলীয় কর্মীকে দেখতে গিয়েছিলেন। রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে বৈঠক সেরে আহত দলীয় কর্মীদের খোঁজ নিতে বেরিয়েছিলেন বড়জোড়ার বিজেপি প্রার্থী সুপ্রীতি চট্টোপাধ্যায়।
ঘুমোতে অনেক রাত হয় বলে একটু বেলা করে ওঠা অভ্যাস পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর। কিন্তু ভোট-পর্বে বাড়ির লোকজনকে বলা ছিল ভোরে ডেকে দিতে। আবার ফিরেছেন আগের নিয়মে। তবে ঘুম থেকে ওঠার আগেই বাড়িতে চলে আসছেন দলীয় কর্মীরা। এরই মধ্যে, গত ৩১ মার্চ নেপালবাবু অবসর নিয়েছেন স্কুলের চাকরি থেকে। তালড্যাংরার তৃণমূলের প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তী সকাল থেকে বাঁকুড়ার বাড়িতেই ছিলেন। দেখা করতে যান অনেকে। তৃণমূলের বাঁকুড়ার মুখপাত্র দিলীপ আগরওয়াল বলেন, ‘‘ওষুধ ব্যবসার অর্থবর্ষের কাজ সেরে, দ্রুত দলের কাজে ফিরব।’’ নিজের কাপড়ের ব্যবসা আর জনসংযোগে শুক্রবার কেটে গিয়েছে বাঁকুড়ার বিজেপি প্রার্থী নীলাদ্রিশেখর দানার। কংগ্রেসের পুরুলিয়ার প্রার্থী পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ভোট-পর্বে রোজ নিয়ম করে ছয়-সাত কিলোমিটার হেঁটে বেশ কিছুটা ওজন কমেছে তাঁর।
পরিবারের সবার জন্য চৈত্র সেলের কেনাকাটা করবেন, জানালেন বাঁকুড়ার কংগ্রেস প্রার্থী রাধারানি বন্দ্যোপাধ্যায়। রানিবাঁধের তৃণমূল প্রার্থী জ্যোৎস্না মান্ডি ভোট শেষে বর্ধমানে বাপের বাড়িতে রয়েছেন। রানিবাঁধের সিপিএম প্রার্থী দেবলীনা হেমব্রম দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের আগে পর্যন্ত ভোট প্রচার করে, এখন বাড়ির কাজকর্ম আর স্থানীয় লোকজনদের সঙ্গে গল্পগাছা করে
সময় কাটাচ্ছেন। এ দিন ইন্দাসের তৃণমূল প্রার্থী রুনু মেটে নির্বাচন কমিশনের ডাকে বিষ্ণুপুর গিয়েছিলেন। দুপুরে ফিরে বলেন, ‘‘রাজনীতিতে আমি নতুন। এত পরিশ্রমের অভ্যাস ছিল না। এ বার একটু বিশ্রাম করব আর বাচ্চাদের সময় দেব।’’ সোনামুখীর সিপিএম প্রার্থী অজিত রায়, বিষ্ণুপুরের কংগ্রেস প্রার্থী দেবু চট্টোপাধ্যায় ও ভোটের পরের দিনটা পরিবারের সঙ্গে কাটিয়েছেন।
রানিবাঁধের বিজেপি প্রার্থী ক্ষুদিরাম টুডু, রাইপুরের বিজেপি প্রার্থী সুধাংশু হাঁসদা, রাইপুরের তৃণমূল প্রার্থী মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু জানান, সকাল-বিকেল পাড়ার বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সময় কাটছে। ইন্দাসের সিপিএম প্রার্থী নয়ন শীল (বাগদি) বলেন, ‘‘সারাদিন পার্টি অফিসে নির্ভেজাল আড্ডা দিয়েছি কর্মীদের সঙ্গে।’’ এ দিন দলীয় কার্যালয়ে কর্মীদের সঙ্গেই ছিলেন বড়জোড়ার তৃণমূল প্রার্থী অলক মুখোপাধ্যায়। তালড্যাংরার বিজেপি প্রার্থী খাতড়ার শ্যামল সরকার এলাকায় ঘুরে কর্মীদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন।
বিজেপির পুরুলিয়ার জয়পুরের প্রার্থী নরহরি মাহাতো ও কাশীপুরের কমলাকান্ত হাঁসদা প্রচারপর্বে যে সমস্ত বুথে পৌঁছতে পারেননি, ভোট পার করে সেই সমস্ত এলাকায় যাচ্ছেন বলে জানান। ভোট মিটলেও জনসংযোগেই দিন কেটেছে ছাতনার তৃণমূল প্রার্থী শুভাশিস বটব্যাল ও বিজেপির প্রার্থী সত্যনারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের। শালতোড়ার তৃণমূল প্রার্থী সন্তোষকুমার মণ্ডল, বিজেপির প্রার্থী চন্দনা বাউড়ি, তৃণমূলের মানবাজারে প্রার্থী সন্ধ্যারানি টুডু ও কাশীপুরের প্রার্থী স্বপন বেলথরিয়া কর্মীদের সঙ্গে ভোট পর্যালোচনা করেছেন।
এ সবের মধ্যে অনেকেই সকালে ঢুঁ দিচ্ছেন চায়ের দোকানে। বান্দোয়ানের তৃণমূল প্রার্থী রাজীবলোচন সোরেন ও সিপিএম প্রার্থী সুশান্ত বেসরা যেমন। রাজীব বলেন, ‘‘এলাকার ভোটের খবর উঠে আসে ঠেক থেকে। চায়ের দোকানের ঠেকগুলো আমার অনেক দিনের পুরনো জায়গা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy