বড়জোড়ার ভট্টপাড়ায় আহত ভোটার। ছবি: বিশ্বনাথ মশান।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ভোট হল বাঁকুড়ার আটটি কেন্দ্রে। বড়জোড়ার ভট্টপাড়ায় সাধারণ মানুষকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে ইন্দাসে তৃণমূলের এজেন্ট ও কর্মীকে মারধরের। তা ছাড়া, জওয়ানদের বিরুদ্ধে আর কোনও বড় নালিশ শোনা যায়নি। অধিকাংশ জায়গায় বাহিনী ছিল বেশ কড়া।
এ দিন বিকেল পৌনে ৫টা নাগাদ বড়জোড়ার ভট্টপাড়ার একটি বুথের বাইরে গোলমাল শুরু হয়। ভোট দিতে আসা জেঠাকে নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির সমর্থক দুই ভাই টানাটানি করেছিলেন। পৌঁছন জওয়ানেরা। সেই সময়ে বিজেপির কিছু লোকজন ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। তার পরেই বাহিনী লাঠি চালাতে চালাতে গ্রামের ভিতরে পৌঁছে যায় বলে অভিযোগ। অভিযোগ, রাজ্য পুলিশও বুথের বাইরের ভিড়ে লাঠিচার্জ করে।
ভট্টপাড়ার মনসারাম ধল্ল কর্মসূত্রে দুর্গাপুরে থাকেন। ভোট দিয়ে এসে বাড়ি থেকে মোটরবাইক বের করছিলেন। অভিযোগ, জওয়ানরা তাঁর মাথায়, পিঠে মেরে রক্তাক্ত করে দেন। মনসারামবাবু বলেন, ‘‘কী হয়েছিল, কিছুই জানতে চাইল না। এ ভাবে বেমক্কা কেন মার খেতে হবে?’’ ওই গ্রামের হারাধন ঘোষের দাবি, তিনি ভোট দিয়ে বেরিয়ে ক্লাবঘরে ঘুমোচ্ছিলেন। জওয়ানরা মারধর করে। তৃণমূলের স্থানীয় নেতা কৃষ্ণ বড়ুর অভিযোগ, ‘‘বিজেপির প্ররোচনায় লাঠি চালিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।’’
বিজেপির ভট্টপাড়ার বুথ সভাপতি বাউল ঘোষের আবার দাবি, তাঁদের এক কর্মী বয়স্ক ভোটারকে টোটোয় বুথে নিয়ে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, বুথের বাইরে তৃণমূলের লোকজন চড়াও হয়। তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী পদক্ষেপ করেছিল। সেই সময়ে রাজ্য পুলিশ বুথের বাইরে থাকা আমাদের কর্মীদের মারধর করে।’’ ওই এলাকার দায়িত্বে থাকে সেক্টর অফিসার শুভঙ্কর বিশ্বাস বলেন, ‘‘একটা গোলমাল হয়েছিল। বাহিনী সামলেছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। কোনও অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।’’
বড়জোড়ারই বিষণপুর প্রাথমিক স্কুলের বুথ থেকে বেরনো ভোটারেরা কাকে ভোট দিয়েছেন, জওয়ানেরা জানতে চাইছেন বলে সকালে অভিযোগ উঠেছিল। যদিও বাহিনীর তরফে অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়। গোলমাল পেকে ওঠার আঁচ পেয়ে খবর পাঠানো হয় জেলায়। দ্রুত পৌঁছয় কুইক রেসপন্স টিম। লাঠি উঁচিয়ে বুথের বাইরের ভিড় সরিয়ে দেওয়া হয়। বিষণপুরের সমস্ত রাস্তায় চলে রুটমার্চ। গ্রামের শেষ প্রান্তে ঘুগনির কড়াই ফেলে পালিয়ে যায় লোকজন।
বড়জোড়ার তৃণমূল প্রার্থী অলক মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘পরিকল্পনামাফিক অনেক জায়গায় ভোট-প্রক্রিয়ায় জটিলতা তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।’’ বুথের বাইরে দাঁড়াতে না দেওয়ায় বাহিনীর বিরুদ্ধে বড়জোড়ায় অতিসক্রিয়তার অভিযোগ করেন বিজেপির শ্রমিক সংগঠনের বাঁকুড়ার সাধারণ সম্পাদক সংগ্রাম চক্রবর্তীও। তবে বড়জোড়ার সিপিএমের প্রার্থী সুজিত চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা ভাল। মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিয়েছেন।’’
ইন্দাসের কুশদ্বীপ অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি সাজাহান মিদ্যার অভিযোগ, ‘‘মকপোলের আগে দু’টি বুথে প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে এন্ট্রি পাস নিতে গিয়ে জওয়ানদের লাঠির ঘা খান তৃণমূলের এজেন্ট জাকির শেখ। পরে মিঠুন মল্ল নামে এক তৃণমূল কর্মীকে দলের ক্যাম্প অফিসে জওয়ানেরা লাঠি পেটা করেন।’’ ইন্দাসের তৃণমূল প্রার্থী রুনু মেটে বলেন, ‘‘বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে জানিয়েছি।’’ সকালে সোনামুখীর ফকিরডাঙার একটি বুথে বিজেপির এজেন্টকে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জওয়ানেরা গেলে ইট-পাটকেল ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ ও বাহিনী বুথের দখল নেয়। উল্টো দিকে তৃণমূলের কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। অন্য দিকে, পাত্রসায়রের কাঁটাদিঘির একটি বুথে এজেন্টরা কে, কোথায় বসবেন, তা নিয়ে বচসা শুরু হয়েছিল। জওয়ানরা বুঝিয়ে সামলান।
বিষ্ণুপুরের রসিকগঞ্জের একটি বুথে ‘ইভিএম’-এ গোলমালের জেরে প্রায় দু’ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। সেই সময়ে গরমের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের সঙ্গে বাহিনীর কিছু জওয়ান দুর্ব্য়বহার করেন বলে অভিযোগ। দস্তানা পরে অপেক্ষা করতে করতে ভোট না দিয়েই কয়েক জন বধূ ফিরে যাচ্ছিলেন। তাঁরা বলেন, ‘‘কিছু জানতে গেলেই ঝাঁঝিয়ে উঠছে। বিকেলে আর ভোট দিতে আসব কি না জানি না।’’ তবে বিষ্ণুপুরেরই স্টেশনপাড়ার কুসুমবনি হাইস্কুলে দেখা গিয়েছে, বয়স্ক মানুষজনকে হাত ধরে বুথে পৌঁছে দিচ্ছেন জওয়ানেরা।
বড়জোড়ার চাঁদাইয়ের একটি ক্লাবে জটলা তুলতে গেলে পুলিশকে গালিগালাজ করা হয় বলে অভিযোগ। জওয়ানেরা গিয়ে ভিড় সরান। মোবাইল, দেশলাই বা লাইটার পকেটে থাকলে কোতুলপুরের বিভিন্ন বুথে ভোটের লাইনে দাঁড়াতে দিচ্ছিল না বাহিনী। তবে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় গেলে বাঁকুড়া শহরে বিভিন্ন বুথের বাইরে তাঁকে ঘিরে ভিড় হচ্ছিল। বাহিনীকে তা সরানোর ব্যাপারে বিশেষ তৎপর হতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, ‘‘সন্ধ্যা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি। কোথাও কোনও অশান্তির খবরও আসেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy