অণ্ডালের জামবাদে ধস। বাড়ি-সহ ভূগর্ভে তলিয়ে গিয়েছিলেন এক মহিলা। ফাইল চিত্র।
স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে জামুড়িয়ার বিজয়নগরে নতুন আবাসনের চাবি পেয়েছিলেন রঘুবীর নুনিয়া, পাপ্পু নুনিয়া, অজিত বাউড়ি, পদ্মা বাউড়ি, সুরেশ নুনিয়ারা। তাঁরা বলেন, ‘‘এখনও আবাসনের মালিকানাই পেলাম না।’’ ফলে, অস্থায়ী আবাসেই আপাতত নিবাস তাঁদের।
২০১৭-য় কেন্দা গ্রামে ধসের জেরে শ’খানেক পরিবারকে অন্যত্র অস্থায়ী পুনর্বাসন দিয়েছিল ইসিএল। কিন্তু এখনও স্থানী পুনর্বাসন না পেয়ে তাঁরা ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন
‘বিপজ্জনক’ গ্রামে।
একটু জোরে হাওয়া দিলেই রাতবিরেতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাছতলায় যেতে হয় বারাবনির মনোহরবহাল, সালানপুরের সামডির বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের। প্রাক্তন খনিকর্মী রাম বাউড়ির আশঙ্কা, ‘‘সবসময় মনে হয়, এই বুঝি বাড়ি-সহ ভূগর্ভে তলিয়ে গেলাম। শেষ সঞ্চয় দিয়ে বাড়ি বানিয়েছিলাম।’’
— পশ্চিম বর্ধমানের বিভিন্ন ধস-কবলিত এলাকায় কান পাতলে এমন নানা বক্তব্য শোনা যাচ্ছে। বক্তব্যের নির্যাস একটাই, বহু দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু পুনর্বাসন কবে মিলবে?— এই প্রশ্নকে সামনে রেখেই তিন রাজনৈতিক শক্তি, তৃণমূল, বিজেপি ও সংযুক্ত মোর্চা ভিন্ন আঙ্গিকে প্রচারও চালাচ্ছে জোরকদমে। জামুড়িয়া ও রানিগঞ্জের সিপিএম প্রার্থী যথাক্রমে ঐশী ঘোষ, হেমন্ত প্রভাকরদের প্রচারে নেমে তোপ, ‘‘রাজ্য সরকারের অপদার্থতায় পুনর্বাসন প্রকল্প থমকে গিয়েছে। মানুষের জীবন-জীবিকা বিপন্ন।’’ সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, পুনর্বাসনের জন্য কয়লা মন্ত্রকের অনুমোদন করা টাকা ছ’বছর ফেলে রেখেছিল রাজ্য সরকার। একই অভিযোগ বিজেপির রানিগঞ্জের প্রার্থী বিজন মুখোপাধ্যায়, বারাবনির প্রার্থী অরিজিৎ রায়েরও। যদিও এডিডিএ-র ভাইস চেয়ারম্যান তথা কুলটির তৃণমূল প্রার্থী উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘ইতিমধ্যেই বারো হাজার আবাসন তৈরির কাজ প্রায় শেষ। আবাসনগুলি বারাবনির দাসকেয়ারি, জামুড়িয়ার বিজয়নগর, অণ্ডাল বিমানবন্দর লাগোয়া এলাকায় তৈরি হচ্ছে। বিরোধীরা অপপ্রচার করছেন।’’ বারাবনির তৃণমূল প্রার্থী বিধান উপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আমাদের বিধানসভা এলাকার ধস কবলিত এলাকার প্রতিটি বাসিন্দাকে পুনর্বাসন দেওয়ার তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।’’
— ভোট-মরসুমে এমন রাজনৈতিক চাপান-উতোরে অবশ্য বিশেষ মন নেই অণ্ডালের জামবাদের মিরাজ শেখের। মিরাজের স্ত্রী ২০২০-র ১৯ জুন রাতে বাড়ি-সহ ভূগর্ভে তলিয়ে যান। তার পরে থেকে তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে অন্যত্র বাস করছেন মিরাজ। তিনি বলেন, ‘‘যাঁর যা দায়িত্ব, তা তাঁরা দ্রুত পালন করুন, এটাই আমাদের দাবি। আমরা চাই, ওই রাতের মতো ঘটনা আর যেন কোথাও না ঘটে।’’ পাশাপাশি, ২০০৬-এ জামুড়িয়ার কেন্দা গ্রামে দু’হাজার পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য সচিত্র পরিচয়পত্র দিয়েছিল এডিডিএ। ‘কেন্দা গ্রামরক্ষা কমিটি’র সভাপতি সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘এখনও আমরা পুনর্বাসন পাইনি। প্রতি মুহূর্তে বাড়ি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নিয়ে আমরা ঘুমোতে যাচ্ছি।’’
২০০৯-এর শীত। মনোহরবহাল। এক রাতে কেঁপে উঠেছিল গোটা অঞ্চল। মাটিতে বিশাল ফাটল তৈরি হয়। বাড়ির দেওয়াল-মেঝে ফেটে চৌচির হয়ে যায়। পরিচয়পত্র পেলেও ক্ষোভের সুর সেই মনোহরবহালের রাম বাউড়ি, সুজাতা বাউড়ি, কল্পনা সিংহ, সামডির বাসিন্দা বিপিন মাজিদের গলাতেও ধরা পড়ে। তাঁরা বলেন, ‘‘বারাবনি ও জামুড়িয়ায় বাড়ি হচ্ছে বলে শুনেছি। কিন্তু আমাদের কথা কেউ
মনে রাখেনি।’’
কিন্তু পুনর্বাসন মিলছে না কেন? এডিডিএ-র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্তাদের দাবি, সালানপুরের নামোকেসিয়ায় এলাকাবাসীর ‘বাধা’, পর্যাপ্ত জমি এক লপ্তে না পাওয়া এবং কিছু ক্ষেত্রে জমির তলায় কয়লা আছে জানিয়ে, ইসিএলের ‘এনওসি’ না দেওয়া— মূলত এই তিন কারণে সমস্যা বাড়ছে। যদিও, ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, ‘‘যেখানে মাটির তলায় নির্দিষ্ট অংশের পরে কয়লার স্তর আছে, সেখানে আবাসন তৈরির জন্য ছাড়পত্র
দেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।’’
তবে, সমস্যা কেটে যাবে, এমন আশ্বাসও দিচ্ছেন রাজনৈতিক নেতারা। ধস, আগুনের মধ্যে দাঁড়িয়ে ওই ‘আশ্বাস’ সঙ্গে নিয়েই ভোট দিতে যাবেন জেলার বিস্তীর্ণ ধস-কবলিত এলাকার বাসিন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy