খেলা: প্রচারে গিয়ে এক খুদের সঙ্গে রাজ চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র।
শিবশঙ্কর সাউয়ের যমজ পুত্র-কন্যা সবে চার মাসে পড়েছে। দুই সন্তান কোলে বাড়ির সামনে চেয়ার পেতে বসা তরুণ পিতাকে দেখে থমকে গেলেন আর এক সদ্যোজাতের বাবা।
প্রথমে এক সঙ্গীর থেকে স্যানিটাইজ়ারটা নিয়ে ঝটপট হাতে মেখে নেওয়া! তার পরে পালা করে দুই পুঁচকেকে কোলে নিয়ে আহ্লাদ! সঙ্গে খুঁটিয়ে প্রশ্ন, আচ্ছা মেয়েটা একটু বেশি রোগা কেন? সে কী, সাত মাসেই জন্মে গিয়েছিল ওরা! নিজেই শোনালেন, এই দুই বাচ্চার থেকে সামান্য ‘সিনিয়র’, তাঁর নিজের পুত্রের কথা।
টিটাগড়ের মাঠকল চটকলের সাবেক কোয়ার্টার্সে শিশুদের দেখে এমনই আপ্লুত ব্যারাকপুরের তৃণমূল প্রার্থী রাজ চক্রবর্তী। নিজেই সগর্বে বলছেন, নায়িকা শুভশ্রীর স্বামী বা টলিউডের ‘শিশু তারকা’ আখ্যাপ্রাপ্ত ইউভানের বাবা পরিচয়টাও এখন তাঁর রাজমুকুটের পালক।
প্রচারসঙ্গী, প্রবীণ পিকলু চক্রবর্তী থেকে স্থানীয় স্কুলশিক্ষক খুরশিদ আলমেরা একমত, ছেলেটা অমানুষিক খাটে, দারুণ ‘ড্যাশিং-পুশিং’, কিন্তু বাচ্চাদের দেখলেই গলে জল! মুখে মুখে ভাসে, এই তো সে দিন কোন মা-হারা শিশুর পায়ের অসুখের কথা শুনে ‘রাজদা’ চোখের জল আটকাতে পারেননি। গঙ্গার ধারের বিশালাক্ষীতলায় দাঁড়িয়ে রাজ বললেন, “এক মাসে কত রকমের বাচ্চাকে যে দেখলাম! ওদের জন্য আলাদা ভাবে নিজে কিছু করব।’’
মাস দেড়েকের মধ্যে শুধু দোলের পরের দিন ইএম বাইপাসের ধারের ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন। আর শুভশ্রী এসেছিলেন মনোনয়নের দিন। ব্যারাকপুরের ওয়্যারলেস মোড়ের কাছে একটি ফ্ল্যাটে ব্যক্তিগত সহকারীদের নিয়ে ‘দ্বিতীয় সংসারেই’ পড়ে রয়েছেন রাজ। টলিউডে গুঞ্জন, তারকা প্রার্থীদের মধ্যে মেদিনীপুরে জুন মালিয়া, আসানসোল দক্ষিণে সায়নী ঘোষের মতো রাজকেও সব থেকে কঠিন কেন্দ্রেই দিদি লড়তে পাঠিয়েছেন। নেতা বা অভিনেতাদের তৃণমূল ছাড়ার হিড়িকের মধ্যে সায়নী, কাঞ্চন মল্লিকদের মমতা-শিবিরে টেনে আনার নেপথ্যেও নাকি রাজেরই হাতযশ। তিনি হাসছেন, “কঠিন কেন্দ্রে লড়তে কিন্তু আমি নিজেই চেয়েছিলাম। আর বিশ্বাস করুন, সকলের সঙ্গে এমন সম্পর্ক গড়ে উঠেছে যে, কাজটা মোটেই কঠিন লাগছে না!”
বরং ঢের কঠিন ছিল ২০২০-র গোটা বছরটাই। অতিমারিতে বাবাকে হারানো আর ছবি রিলিজ় আটকে থাকার মধ্যেও সব কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে ছেলের জন্ম। ঘাড়ের ট্যাটুতে মা-বাবার নাম বয়ে বেড়ানো টলিউডি চিত্র পরিচালক এখন সকাল ৭টার মধ্যে নিজের টিভি প্রোডাকশনের কাজ সেরে প্রচারের জন্য তৈরি হয়ে নিচ্ছেন। কর্মীদের নিয়ে বৈঠক সেরে দিন শেষ হতে প্রায়ই রাত ১টা বেজে যায়! তবু হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বন্ধু-কাম-প্রতিপক্ষ রুদ্রনীলের সঙ্গে খুনসুটি বন্ধ হয়নি। তস্য গলিতে দু’বেলা আঁতিপাঁতি ঘুরে ১৫ কিলোমিটার হাঁটছেন রোজই। এবং মানুষের ভালবাসায় এন্তার মিষ্টি মুখে পুরছেন। স্বাস্থ্য সচেতন মধ্য-চল্লিশ তাই সকালে ব্ল্যাক কফির বদলে ডাবের জল ধরেছেন। ব্যারাকপুরের ফ্ল্যাটের ‘ক্যাম্পে’ রান্নার দিদির খাবার খেতে অবশ্য রোজ দুপুরে ফুরসত মিলছে না। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারের দিন টিটাগড়ের টাটা গেটের পার্টি অফিসে রুটির বদলে অনিচ্ছার ভাত দিয়েই মধ্যাহ্নভোজ সারতে হল। মাংসের লোভনীয় আলুতেও পিছপা। খেতে খেতে দলীয় সহযোগী উমেশ বর্মাদের সঙ্গে পোলিং এজেন্ট ঠিক করার আলোচনা বা অভিষেকের রোড-শোয়ের ফ্লেক্স নিয়ে ফোনপর্বও চলছে। ‘‘চেষ্টা করতে ক্ষতি কী! খেলা ঘুরছে এবং ঘুরবেও’’— এই বলে সকালে প্রতিপক্ষের তথাকথিত শক্ত ঘাঁটি, হিন্দিভাষী বা ওড়িয়াদের মহল্লাতেও বাড়ি-বাড়ি ঢুকে পড়ছিলেন বাংলায় গুচ্ছ হিট রিমেক ছবির পরিচালক। গেরুয়া সিঁদুর পরা মহিলাদের সঙ্গে এখন দিব্যি ভোজপুরি বলছেন। টিটাগড়ের গলিতে তাঁর নামেই ‘যুবা নেতা ক্যায়সা হো, রাজ চক্রবর্তী জ্যায়সা হো’ ধ্বনি উঠছে। বিতর্কিত মণীশ শুক্লের বাবা, প্রতিদ্বন্দ্বী চন্দ্রমণি শুক্লকে নিয়ে না-ভেবে রাজ নিজের কাজটা মন দিয়ে করছেন। গাড়িতে বসে সকালের সাদা পাঞ্জাবিতে হাল্কা সুগন্ধী ছিটিয়েই বিকেলের জন্য তৈরি। “ব্যারাকপুর হল বাঙালি, অবাঙালি, হিন্দু, মুসলিমদের মিনি ইন্ডিয়া! বিজেপি ভাঙতে চাইছে, আমি জোড়ার লড়াইয়ে’’, ডাকাবুকো অর্জুন সিংহের গড়ে প্রত্যয়ী ভঙ্গিতে তাঁর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে গেলেন রাজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy