একটি বাড়িতে ভাঙচুরের পরে। রবিবার, দত্তাবাদে নিজস্ব চিত্র
ভোটদান পর্ব শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রবিবার সকালে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হল বিধাননগর পুরসভার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের দত্তাবাদ এলাকায়। বিজেপি-র অভিযোগ, ওই ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর নির্মল দত্তের প্রত্যক্ষ মদতে তাদের পাঁচ জন কর্মীকে মারধর করা হয়। প্রহৃতদের এক জনকে গুরুতর জখম অবস্থায় বিধাননগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তৃণমূলের আবার পাল্টা অভিযোগ, বিদায়ী কাউন্সিলরকে খুনের চেষ্টা করেছিল বিজেপি। সাধারণ মানুষের চেষ্টায় রক্ষা
পান তিনি।
এ দিন সকালে এই ঘটনার রেশ মিটতে না মিটতেই দত্তাবাদে পুলিশের সামনেই একাধিক বাড়িতে ঢুকে হামলা চালানো হয় ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি-আশ্রিত স্থানীয় এবং বহিরাগত দুষ্কৃতীরাই সেই তাণ্ডব চালায়, যাতে জখম হয়েছেন বেশ কয়েক জন তৃণমূল কর্মী এবং স্থানীয় বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে এক জন স্কুলশিক্ষকও রয়েছেন। জখম তিন জনকে বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে এবং দু’জনকে কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনায় বিদায়ী কাউন্সিলর নির্মল দত্ত এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের তরফে বিধাননগর দক্ষিণ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিনের গোলমালে দু’জন বিজেপি কর্মীও আহত হয়েছেন। তিন জন তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এলাকায় কড়া নজরদারি রয়েছে। অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
যদিও তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, পুলিশ মোতায়েন করা হলেও তাঁরা এলাকায় ঢুকতে পারছেন না। কারণ, এলাকায় দুষ্কৃতীরা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে। অবিলম্বে তাদের গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন
তাঁরা। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, দু’দলের গোলমালে এলাকার শান্তি নষ্ট হচ্ছে। আতঙ্কে রয়েছেন তাঁরা। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, পুলিশ চলে গেলে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটবে। এ দিন বিকেলে বিধাননগর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুজিত বসু আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান।
স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকাল দশটা নাগাদ সল্টলেকের ভারতীয় বিদ্যাভবন স্কুল সংলগ্ন এলাকায় প্রথমে গোলমাল শুরু হয়। বিদায়ী কাউন্সিলর নির্মল দত্তের অভিযোগ, প্রতিদিনের মতো এ দিন সকালেও তিনি চায়ের দোকানের সামনে কাগজ পড়ছিলেন। আচমকাই এক বিজেপি সমর্থক সেখানে এসে তাঁর উদ্দেশ্যে গালিগালাজ করে। অভিযোগ, প্রতিবাদ করতেই বন্দুক বার করে সে। পালাতে গিয়ে নির্মলবাবু দেখেন, বিজেপি-আশ্রিত কয়েক জন দুষ্কৃতী, যারা কয়েক মাস ধরে এলাকায় অশান্তি করছিল, তারা তাঁকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁর পাশে এসে দাঁড়ানোয় তিনি রক্ষা পান। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে আসে। কিন্তু পুলিশ দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার না করে তাদের সরিয়ে দেয় শুধু। যদিও বিজেপি-র অভিযোগ, বিদায়ী কাউন্সিলর মিথ্যা কথা বলছেন। তাঁরই প্রত্যক্ষ মদতে এ দিন সকালে বিজেপি কর্মীদের উপরে হামলা চালানো হয়। তাতে পাঁচ জন কর্মী আহত হয়েছেন। এক জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এই ঘটনার কিছু ক্ষণ পরেই দত্তাবাদের একাধিক বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। গোটা এলাকা হঠাৎই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। কয়েকশো লোক বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে হামলা চালায় বলে অভিযোগ।
মাম্পি সর্দার নামে স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মী জানান, সকালের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অর্জুন মণ্ডল, মোহন মণ্ডল, দীপক মণ্ডল ও অপর্ণা প্রামাণিক-সহ কয়েকশো বিজেপি কর্মী এসে তাঁর বাড়িতে হামলা চালায়। এর পাশাপাশি হামলা হয় অরুণ সাঁপুই, গোপাল কয়াল, অজয় পোদ্দার, গোবিন্দ সর্দার, রাজু শিকারি-সহ একাধিক জনের বাড়িতে।
মাম্পির অভিযোগ, লোহার রড, বাঁশ ও হাতুড়ি নিয়ে এসে বিজেপি-র কর্মীরা তাঁর স্বামী উজ্জ্বল সর্দার ও ছেলে ভাস্করকে বাড়িতে ঢুকে বেধড়ক মারধর করে। আরও অভিযোগ, তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের তাড়া করে দত্তাবাদের ও-পারে বাইপাসে গিয়েও মারধর করে দুষ্কৃতীরা। আতঙ্কে বাসিন্দারা কেউ ঘরে ঢুকে
যান, কেউ এ দিক-ও দিক পালাতে থাকেন। রাতে ফের নতুন করে দু’পক্ষে গোলমাল বাধে। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা গুলি চালিয়েছে। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে পুলিশের তরফে। তারা জানিয়েছে, এলাকায় রুট মার্চ এবং তল্লাশি চলছে।
বিজেপি নেতা প্রভাকর মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘যে ঘটনা ঘিরে গোলমালের সূত্রপাত, তা ঘটে কাউন্সিলর নির্মল দত্তের প্রত্যক্ষ মদতে। ওই এলাকায় বিজেপি-র জয় নিশ্চিত বুঝতে পেরেই গোলমাল পাকিয়েছে তৃণমূল।’’ বিজেপি কর্মীদের একাংশের আবার দাবি, সবটাই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
ঘটনার খবর পেয়ে বিশাল পুলিশবাহিনী হাজির হয় এলাকায়। তার পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে তারা। তবে দত্তাবাদ জুড়ে এখনও রয়েছে চাপা উত্তেজনা। পুলিশ জানিয়েছে, এলাকা জুড়ে তল্লাশি চলছে। দু’পক্ষের অভিযোগ এলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy